পরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ
চাঁদাবাজি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। তাদের তিন সংগঠন সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি এবং বাস ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে মঙ্গলবার যৌথ বিবৃতিতে সমিতির সভাপতি মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ এবং মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেছেন, সমিতি ও ইউনিয়নের নামে কোথাও চাঁদা তোলা যাবে না। কেউ এ নির্দেশ অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে সমিতি ও ইউনিয়নের সদস্যদের সাংগঠনিক চাঁদা আদায় করা যাবে। তবে তা সংশ্লিষ্ট সমিতি ও ইউনিয়নের অফিসে জমা করবেন। এ ছাড়া পথে কোনো গাড়ি থেকে চাঁদা তোলা যাবে না বলে হুঁশিয়ার করেছে মালিক শ্রমিক সংগঠনগুলো। সারা দেশে সমিতি ও ইউনিয়নগুলোর কাছে এ সিদ্ধান্তের রেজ্যুলেশন পাঠানো হয়েছে।
শ্রমিক ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাজাহান খান, সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী, মালিক সমিতির সভাপতি মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ, মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ, ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান রমেশ চন্দ্র সেন এবং সেক্রেটারি জেনারেল আবু রায়হানের স্বাক্ষর রয়েছে এই রেজ্যুলেশনে।
খন্দকার এনায়েত সমকালকে বলেছেন, মালিক শ্রমিকরা মিলে গত ৩১ মে চাঁদাবাজি প্রতিরোধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। টার্মিনাল, মহাসড়ক বা অন্য কোথাও কেউ গাড়ি থেকে চাঁদা তুলতে পারবে না। এটি সম্মিলিত সিদ্ধান্ত। কেন্দ্রীয়, আঞ্চলিকসহ সকল ইউনিয়ন ও সমিতিকে এ নির্দেশ মেনে চলতেই হবে।
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রতিটি বাণিজ্যিক গাড়ি থেকে প্রতিদিন ৭০ টাকা চাঁদা তোলা হয় মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের নামে। মালিক সমিতির খাতে ৪০ টাকা এবং ইউনিয়নের ‘শ্রমিক কল্যাণ তহবিল’ খাতে ৩০ টাকা জমা হয়। করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে দীর্ঘ ৬৭ দিন গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও কর্মহীন চালক-শ্রমিকরা কল্যাণ তহবিল থেকে কোনো সহায়তা পাননি। অভিযোগ উঠে, শ্রমিক কল্যাণের নামে দীর্ঘ দিন ধরে তোলা চাঁদা তছরুপ করেছেন পরিবহন নেতারা। যদিও তারা এ অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছেন, যথাযথ খাতেই ব্যয় হয়েছে কল্যাণ তহবিলের টাকা।
বৈধ ৭০ টাকা চাঁদা ছাড়াও প্রতিদিন প্রতিটি বাস-ট্রাককে ঘাটে ঘাটে চাঁদা দিতে হয়। এ চাঁদার পরিমাণ ৫০০ থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত। ঢাকার অভ্যন্তরীণ রুটে চলা বাসগুলোকে ৩২০ টাকা থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হতো। তবে ‘লকডাউন’ শেষে গত ১ জুন থেকে গণপরিবহন চালু পর আপাতত চাঁদা দিতে হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বাস মালিকরা।
টার্মিনালে চাঁদা বন্ধ হলেও পথে, মহাসড়কে টাকা তোলা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ, স্থানীয় রাজনীতিক ও পরিবহন নেতারা এতে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। গত ৪ জুন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজির আহমেদের সঙ্গে দেখা করেন সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা। বৈঠকের পর আইজিপি চাঁদাবাজি বন্ধে কঠোর হতে পুলিশকে নির্দেশ দেন।