মহামারির ছয় মাস: করোনাকে হারানোর কত কাছে আমরা?
করোনাভাইরাস মহামারির ছয় মাস পার হয়ে গেল। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, একে পরাস্ত করার কতটা কাছাকাছি পৌঁছেছেন গবেষকেরা? চিকিৎসকেরা বলছেন, রোগটি বোঝার ক্ষেত্রে তাঁদের অনেকটা অগ্রগতি হয়েছে। তবে খুব তাড়াতাড়ি একে নিরাময় করে ফেলার আশা করা যাচ্ছে না। শিগগিরই ভ্যাকসিনও হয়তো মিলছে না।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের অনলাইনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের ডিসেম্বরে চীন থেকে ভাইরাসটির ছড়ানো শুরুর পর থেকে গত ছয় মাসে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই তা আক্রমণ করেছে। এই ভাইরাস সংক্রমণ ও মহামারির অভিজ্ঞতাটি মানুষের জন্য অত্যন্ত মারাত্মক হয়েছে। এখন পর্যন্ত, ৭০ লাখের বেশি মানুষ সংক্রমিত হয়েছে এবং চার লাখের বেশি মারা গেছে, যা অনিবার্যভাবে আগত কয়েক বছর ধরে বাড়তে থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। করোনাভাইরাসজনিত মহামারিতে আমাদের বিশ্ব বদলে গেছে। সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, লকডাউন জারি করা হয়েছে, বয়স্কদের কেয়ার হোমগুলোতে অসুস্থতা ছড়িয়েছে এবং দেশের অর্থনীতি ব্যাপক ধাক্কা খেয়েছে।
গার্ডিয়ান বলছে, রোগের প্রথম বার্ষিকীর দিকে অগ্রগতির অর্ধেক পর্যন্ত পৌঁছেছে মানুষ। এ সময়ের মধ্যে মহামারির ব্যবস্থাপনায় আমাদের দক্ষতা সম্পর্কে প্রচুর উদ্বেগ আর প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। গত ছয় মাসে আমরা কোভিড-১৯ সম্পর্কে কতটুকু জানলাম? এ থেকে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জগুলোর প্রতি আমরা কত দ্রুত এবং কতটা ভালো প্রতিক্রিয়া জানিয়েছি? আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে—পরবর্তী ছয় মাসে আমাদের সবচেয়ে জরুরি কোনো প্রশ্নের উত্তর খোঁজা দরকার? আধুনিক সময়ে মানুষের জন্য সবচেয়ে খারাপ সংকট হিসেবে আবির্ভূত করোনাভাইরাস থেকে উত্তরণের পথ গবেষক বা চিকিৎসকেরা দিতে পারবেন কি?
গবেষকেরা স্পষ্টতই মেনে নিয়েছেন যে আমরা কোভিড-১৯–এর আগমন সম্পর্কে অত্যন্ত বাজে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম। লন্ডন স্কুল হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের উদীয়মান সংক্রামক রোগের অধ্যাপক মার্টিন হিববার্ড বলেন, ‘আমরা যে ধরনের মহামারির আশঙ্কা করেছিলাম এবং যাকে প্রতিরোধের পরিকল্পনা নিয়েছিলাম, তার থেকেও আরও খারাপ হয়ে উঠেছে রোগটি।’
মার্টিন হিববার্ড বলেন, ‘এর মৃত্যুহার ১ শতাংশ এবং এটি উচ্চমাত্রার সংক্রামক। এই ভাইরাসের এমন বৈশিষ্ট্য, যা কোনো নতুন নতুন রোগের জন্য অসম্ভব বলে মনে করা হয়েছিল এবং আমাদের এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে তা ভাবিনি। এই–জাতীয় বৈশিষ্ট্য সবচেয়ে খারাপ সম্ভাব্য বাস্তব পরিস্থিতি উপস্থাপনের প্রতিনিধিত্ব করে। আমরা যা ভেবেছিলাম, তার সীমা ছাড়িয়ে গেছে।’
একই কথা বলেছেন ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের বিশ্ব স্বাস্থ্য বিভাগের অধ্যাপক ডেভিড ন্যাবারো। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন প্রথম রোগটির মুখোমুখি হলাম, তখন নেহাত শ্বাসনালির রোগ, যা বুকের ওপরের অংশে আক্রান্ত করে বলে ধরে নিয়েছিলাম। এখন এটা পরিষ্কার যে এটি সাইনাসে আক্রান্ত করে এবং রক্তনালিতে প্রভাব ফেলে রক্ত জমাট বেঁধে ফেলতে পারে। রোগটি চরম ক্লান্তি, কিডনির ক্ষতি এবং হার্ট অ্যাটাকের জন্যও দায়ী হতে পারে।