ভাইরাসই জীবনের সবচেয়ে বড় বাধা নয় : আর্নল্ড শোয়ার্জেনেগার
তোমরা কেউই হয়তো এমন ভার্চ্যুয়াল সমাবর্তন অনুষ্ঠান চাওনি। কিন্তু পুরো পৃথিবী এখন এক বিরাট সংকটে। তবে এটি বিশ্বের যত যা-ই বদলে দিক না কেন, একটা কথা পরিষ্কার বলে দিচ্ছি, এই ভাইরাস তোমাদের সাফল্যকে দমাতে পারবে না। হ্যাঁ, ইনস্টাগ্রামের পাতার চেয়েও এখন জীবনটা অনেক বেশি এলোমেলো। কিন্তু বাজি ধরে বলতে পারি, এই ভাইরাসই তোমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় আর একমাত্র প্রতিবন্ধকতা নয়। বরং এই সংকট তোমাদের পরবর্তী সময়ের এর চেয়েও বড় বাধা পেরোনোর জন্য প্রস্তুত করছে। এভাবে বাধার পরে বাধা পেরিয়ে যাওয়াই হলো জীবন।
দুই বছর আগে আমি আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে গেলাম। সেই গল্পটা তোমাদের বলি।টার্মিনেটর ৬: ডার্ক ফেট ছবির শুটিং শুরুর ঠিক চার মাস আগে আমার একটা শারীরিক সমস্যা দেখা দিল। চিকিৎসক বললেন, ‘আপনার স্বাস্থ্য ভালো আছে। তবে আমি পরামর্শ দেব, আপনি হার্টের ভাল্ভটা প্রতিস্থাপন করিয়ে নিন। সেখানে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।’আমি বললাম, ‘এই মুহূর্তে আমি ওপেন হার্ট সার্জারি করাতে পারব না। চার মাসের মধ্যে টার্মিনেটর ছবির শুটিং। পাগল নাকি?’ সেই সময় আমি কঠোর ডায়েট আর হেভিওয়েট ব্যায়ামের মধ্যে ছিলাম। আমার ব্যায়াম, শুটিংয়ের প্রস্তুতি, মহড়া—সব পরিকল্পনামাফিক চলছিল। চিকিৎসক বললেন, ‘না, না। প্রযুক্তি বদলে গেছে। এখন আর হৃদ্যন্ত্রের ভেতরে গিয়ে কাটাছেঁড়া করা লাগবে না। এটা একটা ননইনভেসিভ সার্জারি। এ ক্ষেত্রে ধমনির ভেতর দিয়ে হৃদ্যন্ত্র পর্যন্ত গিয়ে ভাল্ভ প্রতিস্থাপন করা হয় এবং এই সার্জারির একদিন পরেই রোগী বাড়ি ফিরতে পারে। আর এক সপ্তাহের মধ্যেই ফিরতে পারে স্বাভাবিক জীবনে।’
অস্ত্রোপচার হলো। আমার জ্ঞান ফিরল ১৬ ঘণ্টা পর; যেখানে ৪ ঘণ্টার মধ্যেই আমার জ্ঞান ফেরার কথা ছিল। দেখলাম আমার মুখের ভেতর দিয়ে নল ঢোকানো। চিকিৎসক এলেন। এসেই মুখ দিয়ে ঢোকানো নলটা টেনে গলা থেকে বের করে আনলেন। আমি মারাত্মকভাবে কাশতে শুরু করলাম। চিকিৎসক বললেন, ‘কাশতে থাকুন। কাশি থামলে আপনাকে বলব, কী ঘটেছিল আপনার সঙ্গে।’ এরপর তিনি বলতে শুরু করলেন, ননইনভেসিভ প্রক্রিয়া শুরুর পর নাকি আমার শরীরে কিছু জটিলতা দেখা দেয়। তখন তাঁরা দ্রুত জরুরি সার্জারি করেন।
জানতে পারি, আমার হৃদ্যন্ত্রের দেয়াল চিরে ভেতরে ঢুকতে হয়েছিল তাঁদের। কারণ আমার হৃদ্যন্ত্রের ভেতর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। তাঁরা যদি ওই মুহূর্তে আমার বক্ষাস্থি খুলে ওপেন হার্ট সার্জারি না করতেন, যদি রক্তক্ষরণ না থামাতেন, আমি মারা যেতাম। একবার ভেবে দেখো, হাসপাতালে ভর্তির এক দিন আগেও আমি টার্মিনেটর ৬-এর জন্য রাত-দিন খেটে কঠোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। আর এক দিনের ব্যবধানেই চিকিৎসক বলছেন, আমাকে বাঁচানোর জন্য তাঁদের কতটা সংগ্রাম করতে হয়েছে। চিকিৎসক বললেন, এখনো আপনার ঝুঁকি কাটেনি। সফল ওপেন হার্ট সার্জারির পরও অনেক রোগী মারা যায়। এটা অস্ত্রোপচারের কারণে না, ফুসফুসের কারণে। অনেকে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন। আপনিও নিউমোনিয়ার ঝুঁকিতে আছেন। আপনার কাছে একটাই মাত্র উপায় আছে নিজেকে সুস্থ করে তোলার, সেটা হলো শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম। এই নিন প্লাস্টিকের টিউব। এটা দিয়ে সারা দিন নিশ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করবেন।