সাদা গাড়ির কালো চাকা যত দিন থাকবে তত দিন বর্ণবাদ থাকবে!
বর্ণবাদ তত দিন থাকবে, যত দিন সাদা গাড়িগুলোর চাকা কালোই থাকবে। দুর্ভাগ্য বোঝাতে কালো, আর শান্তি বোঝাতে সাদার ব্যবহার যত দিন থাকবে, তত দিন থাকবে বর্ণবাদ। বিয়ের পোশাক সাদা, আর শবযাত্রায় কালো পোশাকের চল যত দিন থাকবে, তত দিন থাকবে বর্ণবাদ। করখেলাপি বা মন্দ লোকেদের যত দিন সাদা নয় কালো তালিকাভুক্ত করা হবে, তত দিন বর্ণবাদ থাকবে। এমনকি স্নুকার খেলায়ও কালো বলটিকে গর্তে না ফেলা পর্যন্ত কেউ জিততে পারে না, আর সাদা বলটিকে বরাবর টেবিলের ওপরই থাকতে হয়।’
ওপরের উক্তিটি চমকে যাওয়ার মতো। উক্তিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জিম্বাবুয়ের প্রয়াত নেতা রবার্ট মুগাবের হিসেবে প্রচার করা হলেও এর উৎসটি পাওয়া যায়নি। উৎস যা-ই হোক, যে-ই এই কথা বলে থাকুন না কেন, উক্তিটি নিঃসন্দেহে ভাবনার দাবি রাখে। নিত্যদিনের জীবনে অজস্র সাদা-কালোর বিন্যাস কত নিরীহভাবে থেকে যাচ্ছে। এই বিন্যাস কত দারুণভাবে প্রাত্যহিক জীবনে বর্ণবাদী আচার ও মনের পরিচয় বহন করে চলেছে।
এই উক্তিটির কথা এভাবে সামনে আসত না, যদি না জর্জ ফ্লয়েড নামের কোনো ব্যক্তি হঠাৎ করে বিখ্যাত হয়ে না উঠতেন। নিজের ছায়ার দিকে তাকিয়ে তবে কালো আর ধলোর আকার খুঁজতে বেরও হতো না মানুষের। জর্জ ফ্লয়েডকে বিখ্যাত হওয়ার জন্য এই করোনা-স্তব্ধ সময়ে মরে যেতে হয়েছে। এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশের হাঁটুর নিচে দম বন্ধ করা এক মৃত্যুকে অনিচ্ছায় বরণ করতে হয়েছে। তাঁকে বারবার করে বলতে হয়েছে, ‘আই কান্ট ব্রিদ’ (আমি শ্বাস নিতে পারছি না)। এই উজ্জ্বল আলোর চমকানো সময়ে আকর্ষণীয় ব্যানার ও ফেস্টুন রচনার স্বার্থেই কি তিনি এই কাঁপিয়ে দেওয়া তিনটি শব্দ উচ্চারণ করেছিলেন থেমে থেমে? নাকি এই করোনাকালের চিহ্ন নিজের শেষ কয়েকটি কথায় রেখে যেতে চাইছিলেন তিনি? মহামারির কবল থেকে বেঁচে যাওয়া জর্জ ফ্লয়েড কি তবে নিজের শ্বাসকষ্টের মৃত্যুকেই তিরস্কার করছিলেন? কে জানে।