দিনে রাজমিস্ত্রির হেলপার, রাতে পড়ে জিপিএ-৫
সারাদিন রাজমিস্ত্রির হেলপারের কাজ করে রাতে পড়াশোনা করেই এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন পটুয়াখালীর মো. মামুন। রোববার প্রকাশিৎ এসএসসির ফলাফলে দেখা গেছে তিনি বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছেন। কিশোর মামুন সদর উপজেলার মাদারবুনিয়া ইউপির গেরাখালী গ্রামের কৃষক আবদুল বারেক মাতব্বরের ছেলে। তিনি মরিচবুনিয়া টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। মেধাবী মামুন ২০১৫ সালে দক্ষিণ গেরাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিইসি পরীক্ষায় জিপিএ-৪.৫০ পেয়েছিলেন। বার্ধক্যজনিত কারণে বাবা কর্ম ক্ষমতা হারানোয় পরিবারের হাল ধরতে হয় মামুনকেই। জীবনের শুরুতেই এক কঠিন যুদ্ধে নামতে হয় তাকে। মামুন জানান, পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত তার বাবা পড়াশোনার খরচ চালিয়েছেন। ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে পড়াশোনার পাশাপাশি নিজে আয় করা শুরু করেন তিনি। নজরুল নামে এক রাজমিস্ত্রির হেলপার হিসেবে কাজ শুরু করেন।
সেই আয় দিয়ে পরিবারের খরচ ও নিজের পড়াশোনার খরচ চালাতেন। শুরুতে দৈনিক ৪৩০ টাকা মজুরি পেতেন, এখন পাঁচশ টাকা করে পান। তিনি বলেন, কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরেই পড়াশোনা করতে বসেছি। পরিবারের দায়িত্ব ও নিজের পড়াশোনার কথা চিন্তা করলে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে মন চাইতো না। সন্ধ্যা ৬টায় কাজ শেষ হতো, বাড়ি পৌঁছাতে রাত ৮টা বাজতো। এরপর সাড়ে ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত পড়াশোনা করতাম। আজ আমি কষ্টের ফল পেয়েছি।
শিক্ষক হতে চান মামুন। একজন আদর্শ শিক্ষক হতে ভাই-বোনদের নিজের খরচে পড়াশোনা করাতে চান। মামুনের মা কহিনুর বেগম বলেন, আমার স্বামী কোনো কাজ করতে পারে না। ছেলে পড়াশোনায় ভালো। সে নিজে পড়াশোনা করে এ পর্যন্ত এসেছে। স্কুলের স্যাররা অনেক সহায়তা করছে। মরিচবুনিয়া টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের প্রধান শিক্ষক মো. জাকির হোসেন জানান, এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় ৫৮ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে ৫১ জন পাস করেছে। চারজন জিপিএ-৫ পেয়েছে। তাদের মধ্যে মামুনও একজন।