জাকির নায়েকের টাকা ও আন্তর্জাতিক সংযোগ
ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন (আইআরএফ) ও পিস টেলিভিশনের প্রতিষ্ঠাতা মুম্বাই নগরীর বহুল আলোচিত ধর্ম প্রচারক ডা. জাকির নায়েক ভারত থেকে পালিয়ে যাওয়ার প্রায় ৪ বছর পর আবারও ‘সংবাদ’ হতে শুরু করেছেন। পত্রপত্রিকায় এবার তাকে ঘিরে যেসব প্রশ্ন উঠছে, তার মধ্যে রয়েছে : ‘এত টাকাকড়ি তিনি কোথা থেকে পান?’- ‘কী এমন আন্তর্জাতিক সংযোগ রয়েছে তার যে, তিনি কখনো তহবিলের অভাবে কাতর হন না?’।
সাউথ কর্ণাটক সালাফি মুভমেন্ট এবং আল-লিসান ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মতো বেশকিছু উগ্রবাদী সংগঠনের সঙ্গে যোগসাজশ থাকায় জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালে মামলা ঠুকেছিল ভারতের ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি। বিপদ আঁচ করে ডা. জাকির পালিয়ে গেলেন। এখন যেসব ফেরারিকে ভারত সরকার পাকড়াও করার জন্য উতলা, জাকির তাদের অন্যতম। ভারত থেকে পালানোর পর এদেশ-ওদেশে চক্কর দিয়ে ডা. জাকির শেষতক মালয়েশিয়ায় খুঁটি গেড়েছেন। এখানে বসেই ইসলামের নাম ভাঙিয়ে উগ্রবাদের প্রচারণায় ব্যস্ত আছেন। কয়েক মাস আগে তিনি উগ্রবাদ সমর্থন না করায় মালয়েশীয় নেতাদের বিরুদ্ধে বিষোদগার শুরু করেন। মালয়েশীয় সরকার তখন বলে, ‘চুপ! একদম চুপ! নইলে তোমায় বহিষ্কার।’ ব্যস, চুপ হয়ে গেলেন জাকির নায়েক।
উপসাগরীয় অঞ্চলের কতিপয় ধনপতির সঙ্গে জাকিরের দোস্তির খবর সম্প্রতি চাউর হয়েছে। জাকিরের কীর্তিকলাপ যারা পর্যবেক্ষণ করেন, এরকম কিছু বিশ্লেষক জানান, ডা. জাকির কিছুদিন আগে তাকে ৫ লাখ (মার্কিন) ডলার দেওয়ার জন্য কাতারের নাগরিক আবদুল্লাহ আলী আল এবাদিকে অনুরোধ জানান। কাতারের আরেক নাগরিক মুহাম্মদ সিদ্দিক আল-এবাদির সঙ্গে ডা. জাকিরের বেশ ঘনিষ্ঠতা। এই সুবাদে ওই দেশটির বেশ কিছু ধনী ব্যবসায়ী আর দাতব্য সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ ঘটে জাকিরের। এদের কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহ করেন জাকির। তহবিলের টাকায় সৌদি আরব থেকে উর্দু ও ইংরেজিতে ‘পিস টিভি’র অনুষ্ঠান সম্প্রচারণার খরচা বহন করা হয়।
ঢাকায় ‘হলি আর্টিজান’ রেস্তোরাঁয় ২০১৬ সালের জুলাইতে সন্ত্রাসী হামলার পর জানা গেছে নৃশংস এই ঘটনায় জড়িত সন্ত্রাসীদের মধ্যে নাবরিস ইসলাম ও রোহান ইমতিয়াজ নামে দুজন টেলিভিশনে জাকির নায়েকের ভাষণ শুনে শুনে উগ্রপন্থার অনুরাগী হয়েছিল। হলি আর্টিজান হত্যাকাণ্ডের পরপরই জাকির নায়েকের পিস টিভির সম্প্রচার বাংলাদেশ ও ভারতে নিষিদ্ধ করা হয়। বাংলাদেশ সরকার আরও কঠোর হয় এবং ইসলামী মোবাইল হ্যান্ডসেট নামে জাকিরের বিপণনকৃত মোবাইল ফোন সেট আমদানি নিষিদ্ধ করে।