আপাত ‘স্বাভাবিকতা’র দিকে আত্মঘাতী যাত্রা
মে ৩১ থেকে জুন ১৫ পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে ‘সীমিত পরিসরে’ অফিস-আদালত, গণপরিবহন, স্টক মার্কেট, বাজারঘাট ইত্যাদি খোলার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে সরকার। কোভিড-১৯–এর করালগ্রাসে বিপর্যস্ত ১৭ কোটি নাগরিককে আরেকবারের মতো একটা নিশ্চিত আত্মঘাতী পথে ঠেলে দেওয়া ছাড়া এ সিদ্ধান্তকে আর কোনোভাবে ব্যাখ্যা করা যায় না।
এই বছরের শুরুতে চীন, ইরান, ইতালিসহ বিশ্বের অনেক দেশে যখন করোনার সংক্রমণ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে গেছে, তখনো আমাদের সেসব দেশের সঙ্গে যাতায়াত ও বাণিজ্য অব্যাহত ছিল। আমরা সতর্কতা অবলম্বন করতে শুরু করেছি অনেক দেরিতে। মার্চের ২৬ থেকে বিগত দুই মাসের ‘সাধারণ ছুটি’ দিয়ে যথাযথভাবে মানুষকে সতর্কতা অবলম্বনে বাধ্য করা সম্ভব হয়নি।
কার্যত কোনো ‘লকডাউন’ তো হয়ইনি, বরং দুই মাসে বেশ কিছু বিপজ্জনক সিদ্ধান্ত ও ঘটনা রোগের সংক্রমণ ছড়িয়ে ফেলায় ভূমিকা রেখেছে। যেমন এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে তৈরি পোশাকশিল্পের কর্মীদের অনর্থক শহরে নিয়ে আসা, তাঁদের আবার ফিরে যেতে বাধ্য করা, আবার তাঁদের বেতন দেওয়ার কথা বলে এপ্রিলের মাঝামাঝি নিয়ে আসা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল থানার একটি মাদ্রাসার প্রাঙ্গণে জানাজা উপলক্ষে হাজার হাজার লোকের সমাগম হতে দেওয়া, ইতালি ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে প্রবাসী শ্রমিকদের গতিবিধি মানবিকতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা, ঈদের আগে দোকানপাট খোলার অনুমতি দেওয়া, মানুষকে শহর ছেড়ে বাড়িতে যেতে দেওয়া—এমন অজস্র ব্যর্থতা এবং অস্পষ্ট সিদ্ধান্তের কারণে শহরাঞ্চল থেকে সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে গেছে দেশের সবখানে।