পাট রফতানি জাতীয়করণের সিদ্ধান্ত
বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ওই বছরের ৩০ মে’র ঘটনা।)
অবশেষে স্বাধীন বাংলায় পাট নিয়ে সরকারি নীতি ঘোষণা করা হয়। এতে বলা হয়, চাষিদের স্বার্থে পাটের ন্যায্যমূল্য বেঁধে দেওয়া হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুরু থেকেই বড় শিল্প জাতীয়করণের উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়ে নানা কর্মসূচির কথা উল্লেখ করে আসছিলেন। এ নিয়ে বেশ সমালোচনা হলেও তিনি জাতীয়করণকে জরুরি মনে করে পদক্ষেপ নিচ্ছিলেন। পাটের ক্ষেত্রেও সেটি কার্যকর করার কথা বলা হয়।
বাংলাদেশ সরকার পাটের রফতানি বাণিজ্য জাতীয়করণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে ১৯৭২ সালের ৩১ মে’র সংবাদপত্রে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পহেলা জুলাই থেকে তা কার্যকর হবে। বাণিজ্যমন্ত্রী এম আর সিদ্দিকী নারায়ণগঞ্জের এক অনুষ্ঠানে ভাষণকালে এসব সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী এম আর সিদ্দিকী বলেন, ‘শিগগিরই পাট রফতানি করপোরেশন গঠন করা হবে। এই করপোরেশনের মাধ্যমে বিদেশে পাট রফতানি করা হবে। করপোরেশনে থাকবেন একজন সার্বক্ষণিক চেয়ারম্যান ও তিন জন পরিচালক।’ করপোরেশনের কার্যাবলী ব্যাখ্যা করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘রফতানি বাণিজ্যের যাবতীয় লেনদেন করবে রফতানি করপোরেশন।’
বেসরকারি পাট রফতানিকারক বা সরকারের ব্যবসা সংক্রান্ত অন্য কোনও সংস্থা বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ ও ব্যবসা সংক্রান্ত লেনদেন করতে পারবে না বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়। তবে পার্টির বর্তমান রফতানিকারকরা করপোরেশনের এজেন্ট হিসেবে কাজ করতে পারবেন। করপোরেশন বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে রফতানির কথাবার্তা চূড়ান্ত করে রফতানিকারকদের কোটা নির্ধারিত করে দেবে এবং সেই কোটা অনুযায়ী তারা করপোরেশনের মাধ্যমে পাট রফতানি করবে।
এম আর সিদ্দিকী বলেন, ‘করপোরেশনের নামে এজেন্টরা বিদেশে রফতানি করবেন। রফতানি পণ্যে করপোরেশনের মার্কা থাকবে এবং রফতানি সংক্রান্ত ব্যাপারে বিদেশি ক্রেতাদের কোনও ন্যায়সঙ্গত দাবি উঠলে তার দায়িত্ব বর্তাবে করপোরেশনের ওপর। পরে অবশ্য করপোরেশনের কাছে সংশ্লিষ্ট এজেন্টকে তার জন্য দায়ী হতে হবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘সরকার পাট চাষিদের স্বার্থের দিকে লক্ষ্য রাখবে। পাটের ন্যায্য মূল্য বেঁধে দেওয়া হবে এবং পাট চাষিরা যেন ন্যায্যমূল্য পেতে পারেন তার কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন জায়গাতে ক্রয়কেন্দ্র থেকে সরকারি সংস্থাগুলো পাট থেকে কিনবে। এতে চাষিরা সরাসরি এদের কাছে পাট বিক্রয় করে ন্যায্যমূল্য পেতে পারবেন। এছাড়া, একর প্রতি পাটের উৎপাদন বৃদ্ধি করে সরকার চাষিদের খরচ কমানোর সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। জাতীয়করণের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জনগণকে ব্যবসা জাতীয়করণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এটি সার্বিকভাবে জাতীয়করণের পথে প্রথম পদক্ষেপ।’