
‘রাজকন্যার’ মন ভালো নেই
‘প্রায় প্রতি বছর বাবা-ছেলে একই রঙয়ের ড্রেস পরেই ঈদের নামাজে যায়। নামাজ শেষে বাসায় ফিরে মাকে সালাম করে খাওয়া-দাওয়া করে। এরপর ছেলে-মেয়েকে নিয়ে একটু ঘুরতে বের হয়। আবার কোনো কোনও ঈদে ডিউটি থাকলে বাচ্চাদের নিয়ে পরে বের হতো। এবার সব কিছু ওলট-পালট হয়ে গেছে। আমরা সবাই এখন জিন্দা লাশ।’
এমন অভিব্যক্তি পুলিশ পরিদর্শক রাজু আহম্মেদের স্ত্রী আফরোজা নাজনীন পলির। করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৪ মে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে মারা যান তিনি। রাজু কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটে (সিটিটিসি) কর্মরত ছিলেন।
স্ত্রী, দুই ছেলে মেয়ে আর পরিবারের অন্যদের নিয়ে সুখের সংসার ছিল তার। ছোট মেয়ে জানিতা সামিনের বয়স ৮ বছর। তবে রাজু মেয়ে ‘রাজকন্যা’ বলেই ডাকতেন। ছেলে আশফাক আহম্মেদ ফারহানের বয়স ১২ বছর। গত ১৫ মার্চ রাজু তার ফেসবুক প্রোফাইল পিকচার আপডেট করেছিলেন। সেখানে মেয়ের সঙ্গে তার তোলা একটি ছবি পোস্ট করে লিখেন- ‘আমার একমাত্র রাজকন্যা।’
‘রাজকন্যার’ মা পলি সমকালকে বলেন, ‘রাজুর রাজকন্যার চুপচাপ হয়ে গেছে। বাবা মারা যাওয়ার দিন খুব কেঁদেছে। তার থেকে তার মন ভালো নেই। মাঝে মাঝে অন্য ভাই-বোনরা তার সঙ্গে খেলে মন ভালো করার চেষ্টা করছে।
রাজুর স্ত্রী আরও জানান- আমাদের ছেলেটা ছোট বেলা থেকেই একটু বেশি চুপাচাপ। আর মেয়ে অনেক চঞ্চল। সারাক্ষণ মুখে মুখে বাবা বাবা ডাক। রাত ১২টার সময়ও যদি বলত বাবা কেক খাব- তখনই রাজু ছুটে যেতেন কেক আনতে। মেয়েও প্রায়ই বাবা না আসা পর্যন্ত না খেয়ে থাকত। অনেক মজা করে ছেলেকে রাজু বলত আমার মেয়েই ভালো। সে বাবাকে খুব ভালোবাসে। তুই তো বাবা বলেই ডাকিস না। ছেলেকে হাসাতে কত কিছুই না সে করত। এখন এসব মনে পড়লে বুকটা ভেঙে যায়।
পলি আরও জানান- ২৬ এপ্রিল প্রথম অসুস্থ বোধ করে তার স্বামী। এর পরদিন জ্বর আসে। ডাক্তার বন্ধুর সঙ্গে পরামর্শ করে ওষুধ খেয়ে বাসার একটি কক্ষে আইসোলেশনে ছিল রাজু। পরে আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে ৬ মে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি হয়। হাসপাতালে থাকা অবস্থায় বাসায় ভিডিও কল দিত। ছেলে-মেয়ে ও মায়ের সঙ্গে কথা বলত।