করোনায় প্রকাশনা ব্যবসায়ে ‘২০০ কোটি টাকা’র ধাক্কা!
করোনাভাইরাসের থাবা পড়েছে আর সব কিছুর মতো প্রকাশনা ব্যবসাতেও। গত দুই মাসে বাংলাবাজার, আজিজ মার্কেট, কাঁটাবন, নীলক্ষেতসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বইয়ের ব্যবসা বন্ধথাকায় এবং অমর একুশে গ্রন্থমেলার পরপরই দেশে করোনা শনাক্ত হওয়ার কারণে গ্রন্থ-প্রকাশনা খাতে প্রভাব পড়েছে বেশি। প্রকাশনা ব্যবসায়ের নেতাদের দাবি, এই আর্থিক ক্ষতির ধাক্কাটা হতে পারে ২০০ থেকে ২৫০ কোটি টাকার মতো।
প্রকাশকদের মতে, সৃজনশীল বই বিক্রি করে বইমেলার যে আয় তার সমপরিমাণ আয় হয় মার্চ-এপ্রিল মাসে সারাদেশে বই বিতরণের মাধ্যমে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের সংক্রমণবৃদ্ধিরকারণে সেটি সম্ভব হয়নি। ফলে, এখন খুব খারাপ সময় পার করছেন প্রকাশকরা।
গ্রন্থজগতের দায়িত্বশীলরা বলছেন, ব্যবসাহীন এই পরিস্থিতি আরও দীর্ঘায়িত হলে তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে হবে, বিশেষ করে স্বল্পপুঁজির গ্রন্থ-ব্যবসায়ীরা ধাক্কা খাবেন প্রচণ্ড। একইসঙ্গেবই বিক্রি বন্ধ থাকায় কর্মচারীদের বেতন দিতে হচ্ছে সঞ্চিত অর্থ থেকে। গ্রন্থ-শিল্পরক্ষায় প্রকাশকরা এখন সরকারের প্রণোদনা আর আর্থিক অনুদানের দিকে তাকিয়ে আছেন । গতকয়েকদিনে প্রকাশনা বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্তদের সঙ্গে আলাপকালে এ বিষয়গুলো উঠে আসে।
সংহতি প্রকাশনের প্রধান নির্বাহী দীপক রায় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ব্যবসায় একেবারে বন্ধ । বই ছাপানো, বিক্রয় সব বন্ধ। অনলাইনেও বিক্রি বন্ধ। আমাদের সংহতি প্রকাশনও এর বাইরেনেই। অফিস ও সকল প্রকারের লেনদেন এখন বন্ধ রয়েছে। আমাদের কাঁটাবনের দোকান থেকে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় তিন লাখ টাকার মতো বিক্রি হয়। এটা পুরোপুরি বন্ধ। কাজেই অন্যান্যবই ব্যবসায়ীর মতোই আমরাও ভয়ঙ্কর সমস্যার মুখোমুখি। গত দু’মাস বন্ধ থাকায় এটার ধাক্কা আসবে সরাসরি। এখন ৩ মাসের ব্যবস্থাপনা খরচ মেটাতে হচ্ছে সঞ্চিত অর্থ দিয়ে।’
দীপক রায় আরও জানান,‘আবার আসলো ঈদ। কুলানো যাচ্ছে না। অফিস, কার্যালয়, দোকান ইত্যাদির ভাড়া এবং কর্মচারীদের বেতন ও অন্যান্য খরচাদি মেটানো কঠিন হয়ে গেছে।’ তবে, তার আশঙ্কা, ছোট ছোট বই বিক্রেতারা একেবারে পথে বসে যাওয়ার অবস্থায় আছেন। আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনেক ব্যবসায়ী বই (প্রকাশ) করতে পারবেন না। অনেককে একদম নতুনবিনিয়োগ করে ব্যবসায় শুরু করতে হবে।’
স্বল্প আয়ের প্রকাশকদের সংকটাপন্ন অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি (বাপুস)। এ কমিটির রাজধানী শাখার সভাপতি ও অন্যপ্রকাশের স্বত্বাধিকারীমাজহারুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দুই মাস সব বন্ধ। প্রকাশক এবং বিক্রেতারা ভয়াবহ বাস্তবতার সম্মুখীন হচ্ছেন। এমনও হয়েছে যে কারও কারও ঘরে খাবারও নেই। আমরাসমিতি থেকে চেষ্টা করছি সহযোগিতা করার।’
প্রকাশনা ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংগঠনের নেতারা জানাচ্ছেন, প্রতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারিতে একুশে গ্রন্থমেলাকে কেন্দ্র তর অন্তত ১০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়। একইসঙ্গে পরের দুইমাস–মার্চ ও এপ্রিলেও এই বিপণন অব্যাহত থাকে। সে হিসেবে, কারও দাবি অন্ততপক্ষে ২০০-২৫০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে প্রকাশনা শিল্প।