আয়েশা বেগমের আর্তি, ‘স্বামী হত্যার বিচার পাবো তো?’
‘আজীবন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আদর্শের সৈনিক ছিলেন আমার স্বামী। আমার স্বামীর কী অপরাধ ছিল? মানুষের জীবনের কোনও মূল্য নেই? কেন এমন নৃশংসভাবে তাকে হত্যা করা হলো? দুই বছর পার হতে চলছে কেউ খোঁজ নিতে আসেনি আমাদের। পুরো রমজান শেষ হলো, নির্ঘুম রাতে। প্রতিদিন রাতে এখনও কান্নাকাটি করে মেয়েরা। তাদের বাবা আর ফিরে আসবে না, সেই কথা বারবার বুঝিয়েও শান্ত করতে পারি না তাদের। ঈদ এলো অথচ ওদের বাবা নেই।’
বাংলা ট্রিবিউনকে কথাগুলো বলেন আয়েশা বেগম। র্যাবের সঙ্গে কথিত ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত কক্সবাজারের টেকনাফের যুবলীগ নেতা ও পৌর কাউন্সিলর মোহাম্মদ একরামুল হকের স্ত্রী তিনি। আজ ২৬ মে এই হত্যাকাণ্ডের দুই বছর পূর্ণ হলো। ক্যালেন্ডারে পাতার দিকে তাকিয়ে জলভরা চোখে আয়েশা বেগম বলেন, ‘দুই বছর হয়ে গেলো, কেউ খোঁজ নিলো না।’ ঈদের আগের রাতে এই প্রতিনিধির কথা হয় আয়েশা বেগমের সঙ্গে। আবেগাপ্লুত হয়ে আয়েশা বলেন, ‘আজ ঈদ, কিন্তু দুই বছর ঈদ নেই আমাদের। ঈদ আসলে আরও কষ্ট বাড়িয়ে দেয়। আসলে এই করোনাভাইরাসে কী হবে সারা জীবনইতো আমার করোনা। করোনা মহামারির এই দুর্যোগে কেউ আমাদের খোঁজ নেয়নি। দল থেকেও কেউ খোঁজ নেয়নি। তিনি (একরামুল হক) আওয়ামী লীগের আদর্শ সৈনিক ছিলেন। এমন তো কোনও অপরাধ করেননি।তিনি বলেন, ‘এখনও একটি কক্ষে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে আমাদের। আমার স্বামী হত্যার ঘটনায় সেসময় পুরো দেশ ও দেশের বাইরে আলোচনা হলেও সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কোনও তদন্ত হয়নি। তখন থেকে একটি চাওয়া ছিল শুধু প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার। কিন্তু, সে সুযোগ হয়নি আজও।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার দুই মেয়ে বাবাহারা হলো। দিন যত যাচ্ছে মেয়েদের তত কষ্ট বাড়ছে। তাদের কী হবে? কেউ আমার অসহায় মেয়েদের খোঁজ-খবর রাখে না। আমার স্বামী হত্যার বিচার পাবো তো? আমার কোনও কিছু চাওয়ার নেই, শুধু একটাই চাওয়া। খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। খুনিদের শাস্তির ব্যবস্থা করুন।’আয়েশা এখনও দাবি করেন, তার স্বামী কখনও মাদক ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত ছিল না। তিনি নির্দোষ ছিলেন। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের কান্না থামবে না, কান্নেই এখন আমাদের প্রতিবাদের ভাষা। দুঃখের বিষয় কেন আমার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে তা পরিষ্কারভাবে জানতে পারিনি।’