বেঁচে ফেরা জুবায়ের শোনালেন করাচির ভয়াবহ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা
পাকিস্তানের করাচিতে শুক্রবার (২২ মে) বিধ্বস্ত হওযা বিমানের ৯৯ আরোহীর মধ্যে ৯৭ জনই মারা গেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পিআইএ কর্তৃপক্ষ। ওই বিমান থেকে বেঁচে ফেরা এক যাত্রীর বর্ণনা নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি। বিবিসির খবরটি সময় নিউজের পাঠকের উদ্দেশে তুলে ধরা হলো; বিমানের ফ্লাইট রেকর্ডার উদ্ধার করা হয়েছে, ঘটনার কারণ তদন্তের প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। তবে পাকিস্তানের পাইলটদের সমিতি বলছে, সরকারি তদন্তের ওপর তাদের কোন আস্থা নেই। পাকিস্তানের জাতীয় এয়ারলাইনসের বিমানটিতে ছিলেন ৯১ জন যাত্রী আর ৮ জন ক্রু। তাদের মধ্যে দু'জন ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছেন, বাকি ৯৭ জনের সবাই নিহত হয়েছেন বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
এখন মৃতদেহগুলো আত্মীয়স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়ার আগে ডিএনএ টেস্ট করে সেগুলো শনাক্ত করার কাজ চলছে। বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ এখনো জানা যায়নি, তবে সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যায়, লাহোর থেকে আসা ফ্লাইটটির পাইলট একবার অবতরণ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছিলেন এবং কারিগরি ত্রুটির কথা কন্ট্রোল টাওয়ারকে জানিয়েছিলেন। সংবাদমাধ্যমে প্রচার হওয়া এক রেকর্ডিংএ পাইলট বিমানটির ইঞ্জিন বিকল হওয়ার কথা বলছিলেন বলে শোনা গেছে। যেভাবে বেঁচে গেলেন মুহাম্মদ জুবায়ের: বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের একজন মুহাম্মদ জুবায়ের বলেন, বিমানটি স্বাভাবিকভাবেই উড়ছিল এবং ভেতর থেকে যাত্রীরা বুঝতেই পারেন নি যে বিমানটি মাটিতে পড়ে যাচ্ছে। এ সময় তিনি সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেছিলেন, কিন্তু একটু পর জ্ঞান ফিরে এলে তিনি দেখতে পান চারদিকে আগুন জ্বলছে। মানুষের আর্তচিৎকার শুনছিলাম সব দিক থেকে - প্রাপ্তবয়স্ক, শিশু সবার আর্তচিৎকার। যেদিকে তাকাচ্ছি শুধু আগুন আর আগুন। কোনো মানুষ দেখতে পাইনি -শুধু চিৎকার শুনেছি। আমি সিটবেল্ট খুলে ফেলি। তারপর আলো দেখতে পাই। আলোর দিকে ছুটে যাই আমি তারপর লাফ দেই ১০ ফুট নিচে। ধ্বংসাবশেষ থেকে লাফিয়ে পড়ে প্রাণে বেঁচে যাই। জুবায়ের সামান্য আহত হয়েছেন। তিনি বলছেন, পাইলট প্রথমবার অবতরণ করার চেষ্টা করে ব্যথ হন। এর ১০-১৫ মিনিটের মধ্যেই বিমানটি ভেঙে পড়ে। ইতোমধ্যে ফ্লাইট ডাটা এবং ব্ল্যাকবক্সটি উদ্ধার করা হয়েছে, তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে পাকিস্তানের পাইলটদের সমিতি বলছে, সরকারি তদন্তের ওপর তাদের আস্থা নেই এবং তারা আন্তর্জাতিক তদন্তকারীদের সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
গতকাল বিমানটি ভেঙে পড়ার পর টিভি ফুটেজ থেকে দেখা যায়, এলাকার বহু বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একজন প্রত্যক্ষদর্শী মোহাম্মদ উজায়ের জানান বিকট আওয়াজ শুনে তিনি বাইরে বেরিয়ে যান। প্রায় চারটি বাড়ি পুরো বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। প্রচুর ধোঁয়া আর আগুন জ্বলছে। ওরা আমার প্রতিবেশী। ভয়ংকর দৃশ্য। আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী ড. কানওয়াল নাজিম বলেন, তিনি মানুষের চিৎকার শোনেন ও দেখেন মসজিদ লাগোয়া তিনটি বাড়ি থেকে ঘন কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলি উঠছে। অনেক গাড়িতে আগুন ধরে যায়। নিহতদের মধ্যে কতজন বিমানের যাত্রী এবং কতজন ওই এলাকার বাসিন্দা তা কর্তৃপক্ষ এখনও নিশ্চিত করতে পারেননি। ১৯ জনের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। যাত্রীদের মধ্যে অনেকেই রমজানের শেষে ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতিতে তাদের বাড়িতে যাছিল।