হাসপাতাল থেকে পালালেন পাগলি মা, শিশুটি পেল নতুন বাবা-মা
মানসিক ভারসাম্যহীন (পাগলি) নারীর গর্ভে জন্ম নেয়া কন্যা শিশুটিকে দত্তক নিলেন নারায়ণগঞ্জের এক প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার। বুধবার (২০ মে) বিকেলে প্রশাসনের সহযোগিতায় আদালতের মাধ্যমে তিনি শিশুটির দায়িত্ব নেন। তবে ঠিকাদার দম্পতির গ্রামের বাড়ি নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর ইউনিয়নের নরকলিকাতা গ্রামে। শিশুটির দায়িত্ব নেয়া দম্পতি গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে তাদের নাম প্রকাশ ও ছবি না দিতে অনুরোধ জানিয়েছেন।
গত (১৬ মে) রাত ১১টা ২০ মিনিটে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে জন্ম হয় কন্যা শিশুটির। শিশুটির মা মানসিক ভারসাম্যহীন। তার নাম চায়না আক্তার (৩৪)। তিনি জানেন না তার স্বামীর পরিচয়। রাত ১০টার দিকে ওই নারীকে ভোজেশ্বর এলাকার সড়কের পাশে অসুস্থ অবস্থায় দেখে স্থানীয় লোকজন নড়িয়া ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানান। পরে তারা পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগিতায় তাকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। চারদিন পর বুধবার ভোরে কাউকে কিছু না বলে নবজাতক ফেলে হাসপাতাল থেকে চলে যান ওই নারী।
ওই নারীকে নিয়ে গত রোববার (১৭ মে) ‘পাগলির কোলে ফুটফুটে কন্যা সন্তান, বলতে পারছেন না পরিচয়’ শিরোনামে জাগো নিউজে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপরেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শরীয়তপুর সদর উপজেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষের কাছে শিশুটিকে দত্তক নেয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেন চার দম্পতি।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ও শরীয়তপুর আদালত সূত্র জানায়, শিশুটির দত্তক নেয়ার জন্য চার দম্পতি ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তবে প্রশাসন ও আদালত নানা দিক চিন্তাভাবনা করে শিশুটির ভবিষ্যতের কথা বিবেচনায় রেখে সামর্থবান পরিবারের কাছে তাকে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়। পরে বুধবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের নিঃসন্তান এক দম্পতি শিশুটির দায়িত্ব নেন।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহাবুর রহমান শেখ বলেন, শিশুটিকে দত্তক নেয়ার জন্য চার দম্পতি ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তবে আমরা চেয়েছি শিশুটির বাবাকে খুঁজে বের করতে। অনেক এলাকায় খোঁজও নিয়েছি। অবশেষে সঠিক কোনো খবর না পেয়ে শরীয়তপুর শিশু আদালতের বিজ্ঞ বিচারক আব্দুস ছালাম খানের (জেলা জজ) মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের নিঃসন্তান এক সামর্থবান দম্পতি তাদের সন্তান হিসেবে শিশুটির দায়িত্ব নেয়ার কথা বললে আদালতের মাধ্যমে ওই দম্পতির কাছে শিশুটিকে তুলে দেয়া হয়।
শিশুটির দায়িত্ব নেয়া ওই ঠিকাদার বলেন, আমার সব আছে, কিন্তু সংসারে আলো নেই। দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার পরও কোনো সন্তানের বাবা হতে পারিনি। তবে এবার এই সন্তানের বাবা হতে পেরে খুব ভালো লাগছে। কিছুদিন পর সে আমাকে বাবা বলে ডাকবে। ওর মাকে মা বলবে। আমাদের স্বপ্ন তাকে মানুষের মতো মানুষ করার। কখনই বুঝতে দেব না তার ফেলে আসা করুণ দিনের কথা।