কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

বজ্রপাত মোকাবিলায় করণীয়

সমকাল সালাহ্উদ্দিন নাগরী প্রকাশিত: ১৯ মে ২০২০, ২৩:৩৮

আমাদের দেশে সাধারণত মার্চ-এপ্রিল থেকে শুরু করে আগস্ট-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঝড়বৃষ্টির সময় মাঠে-ঘাটে, ক্ষেত-খামারে কাজ করা মানুষেরা বজ্রপাতে মৃত্যুর শিকার হচ্ছেন। হারিয়ে যাচ্ছেন পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি। এ বছরের জানুয়ারি থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বজ্রপাতে সারাদেশে ৭৯ জনের প্রাণহানির মধ্যে এপ্রিল মাসে মৃত্যু ঘটেছে ৭০ জনের। মহামারির বিস্তার রোধে লকডাউনের এ সময় পল্লী অঞ্চলেও চাষি, শ্রমিক ও দিনমজুররা ঘর থেকে তুলনামূলকভাবে কম বের হচ্ছেন। তার পরও শুধু এপ্রিলেই এত জীবনহানি আমাদের শঙ্কিত করে তুলছে। সামনে ভরা বর্ষাকাল, ঝড় হবে, বিদ্যুৎ চমকাবে, বজ্রপাতের তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পাবে। গত এক দশকে ঝড়, বন্যা বা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের তুলনায় বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসেব অনুযায়ী ২০১০-২০১৯ এই এক দশকে দেশে বজ্রপাতে মৃতের সংখ্যা ২ হাজার ৮১। হাওড় অঞ্চলে এর তীব্রতা ও সংখ্যা বেশি হলেও উত্তরবঙ্গের চাঁপাইনবাবগঞ্জে জানমালের ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বেশি। বায়ুর তাপমাত্রা ও জলীয় বাষ্পের সঙ্গে বজ্রপাত সম্পর্কিত।

অনেক বিশেষজ্ঞ বলেন, ১ ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে বজ্রপাতের আশঙ্কা ১২ শতাংশ বেড়ে যায়, আমাদের হাওরাঞ্চলে জলীয় বাষ্প বেশি তৈরি হওয়ায় বৃহত্তর সিলেটে বজ্রপাত বেশি হয়। আমাদের দেশে বজ্রপাতে ক্ষয়ক্ষতি ও জীবনহানির ঘটনা অন্যান্য দেশ অপেক্ষা বেশি। ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে দেশে পরীক্ষিত মডেল থাকলেও বজ্রপাত ব্যবস্থাপনায় এখনও তা নেই। সরকারের তরফ থেকে রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে বাড়ির ছাদে বজ্র নিরাপত্তা টাওয়ার ও হাওর এলাকায় একতলা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে বজ্রপাতের প্রভাব হ্রাসে দেশব্যাপী তালগাছের চারা রোপণ কর্মসূচির আওতায় ইতিমধ্যে ৩৮ লাখ চারা রোপণ করা হয়েছে। জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে গান, স্বল্প দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র তৈরি ও প্রদর্শন এবং বিল্ডিং কোডে বজ্রপাত বিষয়ে নির্দেশনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। ২০১৬ সালে সরকার বজ্রপাতকে দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করছে। বজ্রপাতে যারা মারা যান, তাদের অধিকাংশই জমিতে কাজ করা কৃষক, জেলে, মৎসজীবী ও ঘর-গৃহস্থালির কাজ করা মানুষ। তারা অনেকেই জানেন না, বজ্রপাতে কীভাবে নিজেকে রক্ষা করতে হবে, ফলে মৃত্যুর খাতায় তাদের মতো মানুষজনই বেশি যুক্ত হচ্ছেন। বজ্রপাতে মৃত্যু কমিয়ে আনতে বৃক্ষরোপণ ও বিভিন্ন ডিভাইস ইনস্টলেশন, হাওরাঞ্চলে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ ছাড়াও সংশ্নিষ্ট অঞ্চলের জনগণকে সতর্ক করতে হবে সবার আগে। সহজ সাবলীল ভাষায় তাদের বুঝবার মতো করে তাদের করণীয়গুলো উপস্থাপন করতে হবে। তাদের মনে মগজে গেঁথে দিতে হবে। কারণ তারা তো তাদের করণীয় সম্পর্কে ওয়াকিফহাল নয়। সম্প্রতি ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশের উদ্যোগে বজ্রপাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য একটি ডিভাইস তৈরি করা হয়েছে। ওই ডিভাইসের আওতায় অন্তত একশ' জন মানুষ বজ্রপাতের সময় নিরাপত্তা পেতে পারে। এটির গুণাগুণ, সক্ষমতা আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যেতে পারে এবং সঠিক বিবেচিত হলে সেটি ব্যবহারের চিন্তাভাবনা করা যেতে পারে। ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে দেশের বিভিন্ন মাঠ, প্রান্তর ও রাস্তার পাশে চুম্বকীয় পিলার/শলাকা পুঁতে রাখার কথা ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি। অনেকেই বলেন, সেগুলো কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বজ্রনিরাপত্তা দিত। বিষয়টি যদি সঠিক হয়, তা হলে ওই ধরনের পিলার/শলাকা অন্তত বজ্রপাতপ্রবণ এলাকাগুলোতে পুনরায় স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তন, বনভূমির পরিমাণ হ্রাস, বড় বড় গাছ কর্তন ও বৈদ্যুতিক বিভিন্ন যন্ত্রপাতির ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে বজ্রপাত ও ক্ষয়ক্ষতি দুটিই বেড়েছে।

একটি দেশের আয়তনের এক-চতুর্থাংশ বনভূমি থাকা প্রয়োজন, কিন্তু আমাদের দেশে সামাজিক বনভূমির পরিমাণ হিসাবে আনলেও তা কোনোভাবেই ২৫ শতাংশ হয় না। তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বনভূমির পরিমাণ বাড়াতে হবে এবং প্রকৃতির সঙ্গে সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে সখ্য গড়ে তুলতে হবে। ভারতের আবহাওয়া অফিসের রাডার থেকে প্রাপ্ত ও জাপানের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার তথ্য মতে, বাংলাদেশে গড়ে প্রতিবছর ২৫০০টির মতো বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর এর থেকে শতগুণ বেশি বজ্রপাত হয়, অথচ ওদের ওখানে মৃত্যু হয় ৪০-৫০ জনের। ভারতের কর্ণাটকে বজ্রপাতের ৩০-৪৫ মিনিট আগে সতর্কতামূলক এসএমএস দেওয়া হচ্ছে। ভিয়েতনামে টাওয়ার নির্মাণ ও যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে বজ্রপাতের মৃত্যুর হার ৯০ শতাংশ কমিয়ে আনা হয়েছে। আমরাও সেগুলো অনুসরণ করতে পারি।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও