‘ঈদের ছুটির জন্য প্রস্তুত হাসপাতাল, চিকিৎসা সেবার ব্যত্যয় ঘটলেই ব্যবস্থা’
ঈদের ছুটিতে প্রায় হাসপাতালেই থাকে না রোগী। ঢাকা শহর ফাঁকা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় রাজধানীর সরকারি হাসপাতালগুলোর চিরচেনা চিত্র। হাসপাতালের বেডগুলো প্রায় শূন্য হতে থাকে। আর এ ঈদের তিনদিনের ছুটির সময়ে সাধারণত হাসপাতালগুলোতে রোগী না থাকার কারণে চিকিৎসকরাও থাকেন একটু আয়েশী মুডে-থাকেন অনকলে। যে কোনও কঠিন পরিস্থিতিতে তারা হাজির হয়ে যান। তবে এবারের পরিস্থিতি পুরোটাই অন্যরকম। নভেল করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকেই চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। আর কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে জনবল বাড়াতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে দুই হাজার চিকিৎসক ও পাঁচ হাজার নার্স। শিগগিরই নিয়োগ দেওয়া হবে আরও পাঁচ হাজার টেকনোলজিস্ট।
ঢাকার একাধিক সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কোনোভাবেই এ মহামারির সময়ে কারও কোনও ছুটি থাকবে না, সবাইকে বুঝতে হবে অন্য বছরগুলোর মতো কোনও আনন্দের বার্তা নিয়ে ঈদ আসেনি। তাই সবাইকে রোস্টার অনুযায়ী হাসপাতালে উপস্থিত থেকে রোগীদের সেবা দিতে হবে। আর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার ব্যত্যয় হলে তারা ব্যবস্থা নেবেন।
‘ফার্স্ট কনসিডারেশন যে কোনও উপায়েই চিকিৎসা চালিয়ে নিতে হবে, চিকিৎসা করতে হবে’ মন্তব্য করে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী রশিদ উন নবী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ঈদের রোস্টার ইতোমধ্যেই করে ফেলা হয়েছে, বাতিল হয়েছে ছুটি। শুধুমাত্র ঈদের দিনের জন্য যারা নন-মুসলিম চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন তাদের রাখা হয়েছে, এছাড়া ঈদের আগে দিন-পরের দিন প্রতিদিনই সবাই যে যার রোস্টার অনুযায়ী কাজ করবেন। এমনকি যদি দরকার হয় ঈদের দিনে মুসলিম চিকিৎসকরাও কাজ করবেন। সবচেয়ে বড় কথা ট্রিটমেন্ট দিয়ে রোগীর সেবা করতে হবে, কোনও বিভাগ বন্ধ হবে না।
সলিমুল্লাহ হাসপাতালের অনেক চিকিৎসক করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন, সুস্থ হওয়ার পর তারাও কাজে যোগ দেবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ চিকিৎসকই যোগদান করেছেন, তবে যাদের সুস্থ হওয়ার পর ১৪ দিন পূর্ণ হয়নি বা যাদেরকে সুস্থ হওয়ার পরও বাসায় থাকার জন্য চিকিৎসকরা বলেছেন তারা হয়তো যোগদান করতে পারবে না। তবে আশা করছি কোনও সমস্যা হবে না ঈদের ছুটিতে বলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী রশিদ উন নবী।
নিশ্চয়ই এবারের ঈদ অন্যবারের মতো হবে না মন্তব্য করে দেশের সবচেয়ে বড় সরকারি হাসপাতাল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচারক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, অনেক সিরিয়াস রোগী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আছেন এবং তাদের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়তে থাকবে। তাই আমাদের এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।
‘কেবলমাত্র ঈদের দিনে হয়তো সকাল এবং রাতের শিফটে ভাগ করে মুসলিম চিকিৎসকদের থাকতে বলা হবে, এইটুকুই আমাদের রিলাক্সেশন, আর কিছু নয়’।
অন্যান্য বছরে হাসপাতালের বেশিরভাগ রোগীরাই বাড়ি চলে গেলে সেক্ষেত্রে চিকিৎসকদের ডিউটিটাও হালকা হয়ে আমরাও তখন ফ্লেক্সিবল থাকি, কিন্তু এবারে সে পরিস্থিতি নেই, এ হাসপাতালে রোগী আসতেই থাকবে, বলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন। জানালেন, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রচুর চিকিৎসকসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী এখন কোয়ারেন্টিনে আছেন, ঈদের সময় হতে হতে তারা চলে আসবেন। এবারের ঈদের ছুটি নিয়ে আমাদের সেভাবেই পরিকল্পনা করা হয়েছে।
সবার ছুটি বাতিল করা হয়েছে,তাই যেভাবে রোস্টার চলছে সেভাবেই চলবে জানিয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আর ঈদের সময়েও জরুরি অবস্থা চালু থাকবে, রোগী কমবে না।