দেশে ৬০ বছরের কম বয়সীদের মৃত্যু বাড়ছে
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে ৬০ বছরের কম বয়সী ব্যক্তিদের মৃত্যুর হার বাড়ছে। গতকাল শনিবার পর্যন্ত মারা যাওয়া ব্যক্তিদের ৫৫ শতাংশের বয়স ৬০ বছরের কম। অন্যদিকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও করোনায় পুরুষের মৃত্যু হচ্ছে বেশি। মারা যাওয়াদের প্রায় তিন-চতুর্থাংশই পুরুষ। দেশে করোনায় আক্রান্ত (কোভিড-১৯) হয়ে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৩১৪ জনের। মৃত ব্যক্তিদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রথম ১০০ মৃত্যুর ক্ষেত্রে ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের মৃত্যুহার ছিল ৫১ শতাংশ। সেটি এখন কমে দাঁড়িয়েছে ৪৫ শতাংশে। আর ৬০-এর কম বয়সীদের মৃত্যুহার ছিল ৪৯ শতাংশ, সেটি বেড়ে ৫৫ শতাংশ হয়েছে। অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশে ৬০ বছরের কম বয়সী ব্যক্তিদের মৃত্যুর হার বেশি।
দেশে প্রথম করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। প্রথম মৃত্যু হয় ১৮ মার্চ। শুরুর দিকে মৃত ব্যক্তিদের সবার বয়সের তথ্য প্রকাশ করেনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত ২০ এপ্রিল পর্যন্ত মারা যান ১০১ জন। তাঁদের মধ্যে ৬৩ জনের বয়সের তথ্য পাওয়া যায়। তাঁদের মধ্যে ৩১ জনের বয়স ছিল ৬০-এর কম। ২১ এপ্রিল থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিনে মৃত ব্যক্তিদের বয়স, লিঙ্গ উল্লেখ করা হচ্ছে। সেদিন থেকে গতকাল পর্যন্ত মারা গেছেন ২১৩ জন। অর্থাৎ এখন পর্যন্ত মোট ২৭৬ জন মৃত ব্যক্তির বয়স পাওয়া গেছে। তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ২৭ জনের বয়স ৭০ বছরের বেশি। ৯৮ জনের বয়স ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে। মোট মৃত্যুর ৪৫ শতাংশের বয়স ৬০-এর বেশি। অন্যদিকে ২৯ শতাংশ বা ৮০ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে। ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী আছেন ৩৯ জন (১৪ শতাংশ)। ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী সাতজন মারা গেছেন। সংখ্যায় কম হলেও শিশু ও তরুণদের মৃত্যুর ঘটনাও আছে। ১১ থেকে ২০ বছরের দুজন এবং ১০ বছরের কম বয়সী তিনজন করোনায় মারা গেছেন। ৭ মে ১১ থেকে ২০ বছর বয়সী একজন মারা যান। তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। ২৬ এপ্রিল ১০ বছরের কম বয়সী এক শিশু মারা যায়। সে কিডনি রোগে আক্রান্ত ছিল।
বিশ্বে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে চীনের উহানে। চীন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি যৌথ প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের ৮০ শতাংশের বয়স ছিল ৬০-এর ওপরে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে শুরুতে মৃত ব্যক্তিদের ৭৫ শতাংশই ছিল ষাটোর্ধ্ব। গতকাল পর্যন্ত দেশটিতে করোনায় মারা গেছেন ২ হাজার ৭৬০ জন। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হচ্ছে, কয়েক দিন ধরে দেশটিতে ষাটের কম বয়সী ব্যক্তির মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। এখন দেশটিতে ষাটোর্ধ্ব এবং ৬০-এর কম বয়সী মৃত্যুহার প্রায় সমান। চীন, ইতালি, স্পেন ও ভারতের তুলনায় বাংলাদেশে ৬০ বছরের কম বয়সী ব্যক্তিদের মৃত্যুহার বেশি। দেশে ৬০ বছরের কম বয়সীদের মৃত্যু বাড়ছে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্য, প্রাতিষ্ঠানিক ও অর্থনৈতিক খাতের তথ্য সংগ্রহ করে পরিসংখ্যান প্রকাশ করে জার্মান অনলাইন পোর্টাল স্ট্যাটিস্টা। তাদের হিসাবে ইতালি ও স্পেনে মারা যাওয়াদের ৮০ শতাংশই ষাটোর্ধ্ব। কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে কম বয়সী ব্যক্তিরা কেন বেশি সংখ্যায় মারা যাচ্ছেন, তা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো গবেষণা হয়নি। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ, কিডনির জটিলতা ও দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসতন্ত্রের রোগ আছে, তাঁদের মৃত্যুঝুঁকি বেশি।
বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, কম বয়সী ও মধ্যবয়সীরা কেন মারা যাচ্ছে, সেটি বলা খুব কঠিন। করোনার সঙ্গে রোগ প্রতিরোধের সম্পর্ক রয়েছে। শরীরে অন্য জটিলতা থাকলে প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায়। তাই বয়স্ক না হলেও অন্য অসুখ থাকলে মৃত্যুর আশঙ্কা বেড়ে যাচ্ছে। মৃতদের তিন-চতুর্থাংশই পুরুষ সারা বিশ্বেই করোনায় নারীর চেয়ে পুরুষেরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে, মারা যাচ্ছে। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়।