‘আসো বন্ধু, আর একটা ওভার’
অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংসে করেছিল ৪৪৫ রান। প্রথম ইনিংসে ১৭১ রানে অলআউট হওয়া ভারত ২৭৪ রানে পিছিয়ে থেকে ফলো অনে যায়। আর তারপর সৃষ্টি হয় এক নতুন ইতিহাস। ভিভিএস লক্ষ্মণ এবং রাহুল দ্রাবিড় পঞ্চম উইকেটে ৩৩১ রানের মহাকাব্যিক জুটি গড়ে উল্টো পরাজয়ের দিকে ঠেলে দেন অস্ট্রেলিয়াকে। শেষ পর্যন্ত ফলো অনে পড়েও সৌরভ গাঙ্গুলীর ভারত স্টিভ ওয়াহর অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দেয় ১৭১ রানে।ইতিহাসের অন্যতম সেরা তো বটেই, অনেকের চোখেই কলকাতার ইডেন গার্ডেনে ২০০১ সালের এই টেস্ট ম্যাচটি শতাব্দীর সেরা। পরাজয়ের কিনারায় গিয়ে শেষ পর্যন্ত বিজয় ছিনিয়ে আনা! এই টেস্টের পর যা হলো, প্রতিপক্ষ দলকে ফলো অন করানোর রীতিটা টেস্ট ক্রিকেট থেকে অলিখিতভাবে যেন বিদায় নিলো। প্রায় সব দলই এখন প্রথম ইনিংসে অনেক বেশি লিড পেয়েও প্রতিপক্ষকে ফলো অন করাতে চায় না। বরং দ্বিতীয় ইনিংসে আরও রান তুলে প্রতিপক্ষকে রানের স্তুপের নিচে ফেলে দেয় যাতে ক্ষয়ে যাওয়া পিচে চতুর্থ ইনিংসে তাদের জন্য সেই রান তোলাটা অসম্ভব হয় এবং নিশ্চিত হয় জয়।লক্ষ্মণ-দ্রাবিড়ের সেই ৩৩১ রানের জুটিটা এখন ক্রিকেট রূপকথার অংশ। চতুর্থ দিনের পুরো ৯০ ওভার ব্যাট করেছিলেন তারা। তাতে দ্রাবিড় করেছিলেন ১৮০ রান। লক্ষ্মণ ২৮৩ রান। ভারত তাদের দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে ৭ উইকেটে ৬৫৭ রানে। পঞ্চম ও শেষ দিনে জয়ের জন্য ৩৮৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করে অস্ট্রেলিয়া অলআউট হয়ে যায় ২১২ রানে। দিনের শেষ সেশনে ৪৬ রানে ৭ উইকেট হারায় অজিরা। স্টার স্পোর্টসের টক-শো ‘কলকাতা ২০০১-দ্রাবিড় ও লক্ষ্মণ স্পেশালে’ সেদিন লক্ষ্মণ বলছিলেন ২২ গজের কষ্টকর লড়াইয়ের মধ্যেও কীভাবে তারা দুজন একে অন্যকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। ‘দেশের হয়ে লড়াইয়ের মধ্যে গর্ব অনুভব করছিলাম আমরা। কঠিন পরিস্থিতিতে ভালো করতে চেয়েছি আমরা, রাহুল যা করেছে বারবার। পুরো জুটিতে একটিবারের জন্যও হতাশা প্রকাশ করতে দেখিনি রাহুলকে-’ বলেছেন লক্ষ্মণ।ভাইরাল জ্বর নিয়ে ব্যাট করছিলেন দ্রাবিড়, লক্ষ্মণের ছিল পিঠে ব্যথা। তবুও তারা লড়াই করে গেছেন এই বলে, ‘আসো বন্ধু, আর একটা ওভার। কারণ এটা ছিল বিশাল এক চ্যালেঞ্জের সামনে আমাদের বিরাট এক শিক্ষা। এই বিশাল চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড়িয়ে আপনি বড় ছবিটার কথা ভাবতে পারেন না।’লক্ষ্মণ আরও বলেন, ‘সবসময় ছোট ছোট লক্ষ্যপূরণের দিকে মনোসংযোগ করতে হবে আপনাকে। আমাদের জন্য সহজতম লক্ষ্যটা ছিল প্রতিটি বল মেধা অনুযায়ী খেলা এবং সঙ্গীকে উৎসাহিত করা যাতে আমরা দেশের জন্য কাজটা করতে পারি। রাহুল ভাইরাল জ্বরে কাতর ছিল, আমি ভুগছিলাম পিঠের ব্যথায় এবং আমরা শুধু পরস্পরকে বলছিলাম “ আর একটা ওভার”। আর কাজেও লেগে গেল এটা। আমরা চতুর্থ দিনের পুরো ৯০ ওভার খেলে ফেললাম।’