সুন্দরতম চরিত্র গঠনে পবিত্র সিয়াম সাধনা
সময়ের পরিক্রমায় আমাদের কাছে পুনরায় হাজির হয়েছে মাহে রমজান। আর রমজান মাস আমাদের তাকওয়া, সবর, ক্ষমা, আত্মসংযম ও পরোপকারী হওয়ার শিক্ষা দেয়। কারণ রমজান মাসে প্রবাহিত হতে থাকে অনবরত রহমতের বারিধারা। এই রহমতকে পুরো জীবন ধরে রাখাটাই সফলতার পরিচায়ক। মূলত তারাই হেদায়াতপ্রাপ্ত আর তারাই পূর্ণ সফল। এই মাসে খুলে দেওয়া হয় জান্নাত ও ক্ষমার রাস্তা। বন্ধ করে দেওয়া হয় জাহান্নামের দরজা ও কবরের আজাব। রোজার মাধ্যমে মানুষ তাকওয়া বা আল্লাহর ভালোবাসার প্রতি ধাবিত হয়। ক্ষুধা, তৃষ্ণায় কাতর হয়েও মহান প্রভুর ভালোবাসা ও ভয়ে কিছুই গ্রহণ না করা, যাবতীয় অন্যায়-অনাচার থেকে নিজেকে বিরত থাকা তাকওয়ারই উত্তম নিদর্শন। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনুল করিমের বিভিন্ন জায়গায় আল্লাহপাক বলেছেন, ‘তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর।’ তাকওয়া এমন একটি মহৎ গুণ, যার সুফলের দ্বারা একজন ব্যক্তি, একটি সমাজ, একটি রাষ্ট্র এমনকি সারা বিশ্ব মানবতার শান্তিতে ছেয়ে যাবে। আর এই তাকওয়ার সঙ্গেই রোজার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। যার কারণে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজাকে ফরজ করা হয়েছে, যেমন করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।’’ (সুরা আল-বাকারা : ১৮৩) রমজান মাসে তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমেই মানুষ অন্তরের প্রবৃত্তি তথা নফসে আম্বারাকে বশীভূত করে। আর লাভ করে আল্লাহর নৈকট্য। প্রকৃত রোজা দ্বারাই সমাজ থেকে সকল অন্যায়-অবিচার, জিনা-ব্যভিচার, চুরি-ডাকাতি ও সন্ত্রাসবাদ দূরীভূত হয়। পুরো ব্যক্তিজীবন ও সামাজিক জীবন নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে চলাচলের নিশ্চয়তা লাভ করে। আর রোজা রাখা হয় একমাত্র আল্লাহরই জন্য। এতে কোনোরূপ লোক দেখানো বা রিয়ার কোনো অবকাশ নেই। কেননা হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহতায়ালা ফরমান, ‘রোজা কেবল আমার জন্যই, আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব।’ আর এই রোজাই প্রকৃত রোজাদারকে মিথ্যা বলা থেকে বারণ করে। কারণ মিথ্যা এমন একটি গুনাহ যার দ্বারা একজন ব্যক্তি বা একটি সমাজ নিমিষেই ধ্বংস হয়ে যায়। আর এই মিথ্যা বর্তমান সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষ মিথ্যা বলাকে কোনো গুনাহই মনে করে না। প্রত্যেক দিন সে অহরহ মিথ্যা বলে যাচ্ছে। আর রোজা পালনকালে কোনোরূপ মিথ্যাচারে লিপ্ত হলে সেই রোজা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। এ কারণে প্রিয় নবীজী (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও মিথ্যাচার করা বর্জন করে না, তার খাওয়া-দাওয়া ও পানীয় গ্রহণ পরিত্যাগ করার আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। (বুখারি শরিফ) আদর্শ ব্যক্তিজীবন গঠনে রোজার ভূমিকা অনন্য। রোজা পালনের মাধ্যমে মানুষ প্রবৃত্তির তাড়না থেকে মুক্তিলাভ করে।
- ট্যাগ:
- ইসলাম
- রোজা
- পবিত্র মাহে রমজান