মহামারীর ফাঁদে ঘটকের বাণ
‘বিবাহ বন্ধন’ নামে একটি ঘটকালির এজেন্সি চালান রুহুল আমিন। উচ্চ মধ্যবিত্ত শিক্ষিত পরিবারগুলোই মূলত তাদের গ্রাহক।কিন্তু বিয়ের ভাবনা যাদের মাথায় ছিল, এই ছেঁয়াচে রোগের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে তা শিঁকেয় তুলে রাখতে শুরু করলেন সবাই। রুহুল আমিনরা ব্যবসার বিপদ টের পেতে শুরু করলেন মোটামুটি ৫ মার্চ থেকেই। ততদিনে চারপাশে আতঙ্ক শুরু হয়ে গেছে। এরপর দেশের ভেতরেই সংক্রমণ আর মৃত্যুর খবর আসতে শুরু করল। মাসের মাঝামাঝি এসে স্কুল-কলেজও বন্ধ হয়ে গেল। মার্চের শেষে এসে সরকার যখন অফিস-আদালত আর যানবাহন বন্ধের ঘোষণা দিল, সেই লকডাউনে ঘটকালিতে সর্বনাশের ষোল কলা যেন পূর্ণ হল। লকডাউনের মেয়াদ ধাপে ধাপে বেড়ে হয়েছে ৩০ মে পর্যন্ত। তবে এরপর যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, তেমন সম্ভাবনা এখনও দেখা যাচ্ছে না। রুহুল আমিনদের ‘বিবাহ বন্ধন’ এর অফিস ঢাকার মহাখালী ডিওএইচএসে। দুই অংশীদার বাদে কর্মী আছেন দশজন। সবার ভাগ্যে এখন কী ঘটবে, এই প্রতিষ্ঠান কীভাবে টিকিয়ে রাখবেন, সেই ভাবনায় কুলকিনারা পাচ্ছেন না রুহুল। রুহুল আমিন ও কামরুল হাসান, তারা দুজনে মিলেই চালান ‘বিবাহ বন্ধন’ সময় যখন ভালো ছিল, প্রতিমাসে গড়ে শ খানেক গ্রাহক ‘বিবাহ বন্ধন’ এর সেবা নিতেন। মাসে অন্তত পাঁচটি বিয়ে তারা ঘটিয়ে দিতে পারতেন সাফল্যের সঙ্গে। কিন্তু মহামরীর এই দিনে বিবাহ এক বিরল ঘটনা। গত তিন মাসে মাত্র একটি যুগলের মধ্যে গাঁটছড়া বেঁধে দিতে পেরেছে `বিবাহ বন্ধন’। কর্মচারীদের মার্চ পর্যন্ত বেতন দিতে পারলেও এরপর কী হবে জানেন না রুহুল। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমরা বিরাট সঙ্কটে পড়ে গেছি। আমাদের দশজন কর্মচারী আছে, মানে দশটা পরিবার আমাদের এই ব্যবসার ওপর নির্ভরশীল।”২০০৫ সালে যাত্রা শুরুর পর ভালোই চলছিল রুহুল আমিনদের। তাদের সেবা পেতে হলে প্রথমে `বিবাহ বন্ধন’ এর সদস্য হতে হয়, সেজন্য লাগে ১০ হাজার টাকা। এর বিনিময়ে সেই সম্ভাব্য পাত্র বা পাত্রীর সামনে হাজির করা হয় অসংখ্য বায়োডাটা, যাতে তিনি মনের মত কাউকে খুঁজে নিতে পারেন জীবনসঙ্গী হিসেবে।