৪৩ ‘অর্জন’ নিয়ে বিদায় নিচ্ছেন সাঈদ খোকন
পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনের পর শনিবার বিদায় নিচ্ছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। এই দীর্ঘ সময়ে নানা সমালোচনার পাশাপাশি তার রয়েছে বেশ কিছু অর্জনও। সংস্থাটির ১৯ পার্ক ও ১২টি খেলার মাঠ আধুনিকায়নসহ ৪৩টির বেশি অর্জন রয়েছে বিদায়ী এ মেয়রের। আর এই বিষয়গুলোর কারণে ঢাকা দক্ষিণে নাগরিক সুবিধা বেড়েছে বলে মনে করছেন নগরবিশেষজ্ঞরা।ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে নানা সমালোচনা থাকলেও মেয়র সাঈদ খোকন বেশি কিছু কাজ করেছেন নগরবাসীর জন্য। তার কাজগুলোর মধ্যে ‘জল সুবজে ঢাকা’ প্রকল্প অন্যতম। এই প্রকল্পের আওতায় ১৯টি পার্ক ও ১২টি খেলার মাঠকে বদলে দেওয়া হয়েছে।নতুন রূপ দেওয়া মাঠ ও পার্কগুলা হচ্ছে- সিক্কাটুলির শহীদ বুদ্ধিজীবী খালেক সরদার পার্ক, গুলিস্তান পার্ক (শহীদ মতিউর পার্ক), নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা পার্ক, বংশাল ত্রিকোনাকার পার্ক, শরাফগঞ্জ বা মেয়র সাঈদ খোকন পার্ক, ওসমানী উদ্যান বা গোসসা নিবারণী পার্ক, আউটফল স্টাফ কোয়ার্টার শিশুপার্ক, মতিঝিল পার্ক, যাত্রাবাড়ি চৌরাস্তা পার্ক, মালিটোলা পার্ক, বাহাদুরশাহ পার্ক, পান্থপথ পার্ক, জোড়পুকুর মাঠ, বাসবো মাঠ, গোলাপবাগ খেলার মাঠ, কলাবাগান খেলার মাঠ, বাংলাদেশ মাঠ, সামসাবাদ খেলার মাঠ, শহীদ আব্দুল আলীম মাঠ, রসুলবাগ শিশু পার্ক, দেলোয়ার হোসেন খেলার মাঠ, বালুরঘাট খেলার মাঠ, শহীদনগর মিনি স্টেডিয়াম, নবাবগঞ্জ পার্ক, বশিরউদ্দিন পার্ক, গজমহল পার্ক, বকশীবাজার পার্ক, হাজারীবাগ পার্ক ও আজিমপুর শিশু পার্ক।ডিএসসিসি-র এসব মাঠ ও পার্কগুলোতে রয়েছে জাদুঘর, পাঠাগার, ব্যায়ামাগার, গ্রিন জোন, পাবলিক প্লাজা, লেডিস কর্নার, নেটে ক্রিকেট অনুশীলন, ফুটবল খেলার ব্যবস্থা, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, বসার বেঞ্চ, ওয়ার্কওয়ে, শিশু কর্ণার, ফুল বাগান, পানির ফোয়ারা, ওয়াটার বডি, ঐতিহাসিক ব্যক্তিদের ভাস্কর্য, পাবলিক টয়লেট, ছাদবাগান করার মডেল, এলইডি লাইটিং সিস্টেম, পানি নিষ্কাশনের বিশেষ ব্যবস্থা, কফি হাউজ, ফুড কোর্ট, কার পার্কিং ও শিশুদের বিভিন্ন প্রকারের খেলনাসহ সব ধরনের আধুনিক ব্যবস্থা। এছাড়া পার্কগুলোতে হাতিরঝিলের মতো জলাধারের পাশাপাশি তৈরি করা হবে সবুজ বাগান ও বেষ্টনী। বিশিষ্ট স্থপতি রফিক আজমের প্রতিষ্ঠান সাতত-এর তত্ত্বাবধানে শতাধিক স্থপতির সমন্বয়ে পার্ক ও মাঠগুলোর নকশা প্রণয়ন করা হয়েছে।২০১৭ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া প্রকল্পের কাজ ২০১৮ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু মেট্রোরেল, জমি নিয়ে মামলা, উন্নত নকশা প্রণয়ন ও করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রকল্পের সময় বাড়িয়ে আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। এরই মধ্যে পার্কগুলোর প্রায় ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। উদ্বোধন শেষে ২০টির মতো পার্ক উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। সিটি করপোরেশন জানিয়েছে, প্রকল্পে নতুন দুটি পার্ক যুক্ত করায় কাজের অগ্রগতির শতকরা হার কমেছে। আগামীতে আরও একটি পার্ক যুক্ত করা হবে।ডিএসসিসি-র অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক আসাদুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পার্কগুলা বিশ্বমানের করে তৈরি করা হয়েছে। এতে সব শ্রেণির মানুষের জন্য সুবিধা রয়েছে। আমাদের কয়েকটি পার্ক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও আলোচিত হয়েছে। ইতোমধ্যে ২০টির বেশি পার্ক উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। আমরা নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারতাম। কিছু জটিলতার কারণে কিছুটা সময় লেগেছে।মাঠ ও পার্ক ছাড়াও আরও বেশ কিছু অর্জন রয়েছে সাঈদ খোকনের। যা দক্ষিণ সিটির নাগরিক সুবিধা বাড়িয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।এলইডি বাতি:একসময় দক্ষিণ সিটির সড়কগুলো ছিলো অন্ধকারে। পুরনো সোড়িয়াম বাতি অপসারণ করে সেখানে প্রায় ৫৬ হাজার এলইডি বাতি লাগিয়েছেন মেয়র। নতুন যুক্ত হওয়া ইউনিয়নগুলোতেও এই আলো ঝলমল করছে। ফলে ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও দুর্ঘটনা কমেছে দক্ষিণ সিটিতে। পাশাপাশি গভীর রাতেও নারীদের নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত হয়েছে বলে মনে করছে সংস্থাটি।এলইডি বিলবোর্ড:নগরীর সড়কের ওপর ঝুঁকিপূর্ণভাবে দাঁড়িয়ে থাকা বিলবোর্ডগুলো অপসারণ করে সেখানে বিভিন্ন আকারের ৭৩০টি এলইডি বিলবোর্ড লাগানো হয়েছে। এতে করপোরেশনের রাজস্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি সড়কের সৌন্দর্যও বেড়েছে। কমেছে ঝড়ে বিলবোর্ড উপড়ে বা খুঁটি ভেঙে প্রাণহানি বা সড়ক বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি।যাত্রী ছাউনি ও ট্রাফিক পুলিশ বক্স:সড়কে নগরবাসীকে স্বাচ্ছন্দ্য দিতে অর্ধশতাধিক যাত্রী ছাউনি ও বাস স্টপেজ নির্মাণ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এরই মধ্যে ৪০টি যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করা হয়েছে। পাশাপাশি ট্রাফিক পুলিশের কথা চিন্তা করে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ৫৫টি স্বচ্ছ ট্রাফিক পুলিশ বক্সও নির্মাণ করে দিয়েছে সংস্থাটি। ফলে সড়কে পথচারীদের জন্য নিরাপত্তা বেড়েছে বলে মনে করছেন নগর বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া যানজট নিরসনে ৪টি ইন্টারসেকশন ও ৩০টি বাস স্টপেজ নির্মাণ করা হয়েছে।বঙ্গবন্ধু জলবায়ু উদ্ধাস্তু আশ্রয় কেন্দ্র:জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উদ্বাস্তু হয়ে নগরীর বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেওয়া অসহায় নারী, শিশু, বৃদ্ধরা মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাদের জন্য সদরঘাটের নিজস্ব ভবনে একটি আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে শিশুদের পড়াশোনা, থাকা-খাওয়া ও নারীদের স্বাবলম্বী হতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।অনলাইন হোল্ডিং ট্যাক্স ও ট্রেড লাইসেন্স প্রদান:অতি সহজেই ঘরে বসে হোল্ডিং ট্যাক্স এবং ট্রেড লাইসেন্স ফি পরিশোধ করতে ডিএসসিসি-র কার্যক্রম অনলাইনের আওতায় আনা হয়েছে। এতে দুর্নীতির পাশাপাশি নাগরিকদের হয়রানি কমেছে।কবরস্থান ও শ্মশানঘাট:আজিমপুর কবরস্থানের উন্নয়নের পাশাপাশি একটি আধুনিক মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া আজিমপুর, জুরাইন ও মুরাদপুর কবরস্থানের আধুনিকায়ন করা হয়েছে।বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এসটিএস:বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়ন করতে এরই মধ্যে ৩০টির মতো সেকেন্ডারি ট্রন্সফার স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। এসব স্থানে নগরীর বাসাবাড়ি থেকে আসা বর্জ্য আধুনিক প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থাপনা করে ল্যান্ডফিলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।পাবলিক টয়লেট নির্মাণ:মেয়র সাঈদ খোকনের মেয়াদকালে ডিএসসিসি এলাকায় ৪৩টি আধুনিক গণশৌচাগার বা পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে। পাশাপাশি পথচারীদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে পাঁচটি প্রস্রাবখানাও। টয়লেটগুলোতে নারী ও পুরুষদের জন্য আলাদা চেম্বার, হাত ধোয়ার ব্যবস্থা, বিশুদ্ধ খাবার পানি, সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সুবিধা, স্যানিটারি ন্যাপকিন, উন্নতমানের আয়না, সিসি ক্যামেরাসহ পেশাদার পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও নারী কেয়ারটেকারের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিবন্ধীদের জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। পরিচ্ছন্নতার স্বার্থে জুতা খুলে ভেতরে রাখা স্যান্ডেল পরে ব্যবহার করতে হয় এসব শৌচাগারে।কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ:স্বল্প ব্যয়ে সামাজিক নানা অনুষ্ঠানাদি সম্পন্নের লক্ষ্যে অত্যাধুনিক সুবিধা সম্বলিত ৬তলা বিশিষ্ট মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন সেন্টার নির্মাণ করা হয়েছে।