শ্রদ্ধাঞ্জলি: কলাভবনের অধ্যাপক আনিসুজ্জামান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলাভবনের ছাত্ররা অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে দেখেছেন একটু ভিন্নভাবে। সাদা পায়জামা ও খদ্দরের পাঞ্জাবি পরা এই মানুষটি হেঁটে যাওয়ার সময় যেন শ্রদ্ধা বিলিয়ে যেতেন। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সালাম-আদাব পড়তেই থাকত। কলাভবনের দোতলায় স্যারের ২০১১ নম্বর কক্ষটি এখনো আছে। ১৯৮৫ সাল থেকে এই কক্ষটিতেই বসছেন তিনি। ১৯৫৯ সালে ২২ বছর বয়সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। এরপর ১৯৬৯ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের রিডার হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮৫ সালে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসেন। বাংলা বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার শেষদিন পর্যন্ত কলাভবনের ওই কক্ষটি তাঁর জন্য বরাদ্দ ছিল। সুস্থ অবস্থায় মাঝেমধ্যে সেখানে যেতেন। এই কক্ষটিই ছিল অধ্যাপক, ইমেরিটাস অধ্যাপক ও জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের অন্যতম ঠিকানা। জ্ঞানী এই শিক্ষককে মাথা উঁচু করে হাঁটতে দেখেছি বলে মনে হয় না। ঢোলা পায়জামা পরা মানুষটি গুটি গুটি পায়ে হেঁটে যেতেন কলাভবনের করিডর দিয়ে। গম্ভীর চেহারা, ভরাট গলা ও ভারী চশমার এই অধ্যাপক ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন জাতির শিক্ষক। তাঁর নাম হয়ে যায়, ‘আনিস স্যার’। নব্বইয়ের দশকজুড়ে কলাভবনের ছাত্র এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক হিসেবে আনিস স্যারকে দেখেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় কোনো অনিয়ম ও ক্ষোভ-বঞ্চনার ঘটনায় মন্তব্য নিতে ছুটে যেতাম তাঁর কক্ষে। তরুণ প্রতিবেদকের উত্তেজনা নিমেষেই শীতল হয়ে যেত ওনার সামনে গেলে। বেশির ভাগ সময় ছাত্র বা শুভানুধ্যায়ীদের ‘বাবা’ বলে সম্বোধন করতেন। কম কথা বলতেন, কখনো উত্তেজিত হয়েছেন মনে পড়ে না। কিন্তু যেটুকু বলতেন তা নিউজের কাজে লাগত। যেকোনো ইস্যুতে নিজে যে অবস্থান নিতেন, সেখানেই অনড় থাকতেন।