করোনার ফাঁদে পুতিন বিপদে
সারা বিশ্বের মতো রাশিয়াতেও হানা দিয়েছে নতুন করোনাভাইরাস। গত কিছুদিনে দেশটিতে সংক্রমণের হার বেড়েই চলেছে। করোনাভাইরাসের কারণে জনস্বাস্থ্যসহ রাশিয়ার বিভিন্ন খাতে মারাত্মক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আসনও নড়বড়ে! ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন সাবেক কেজিবি কর্মকর্তা ভ্লাদিমির পুতিন। এর মধ্যে অনেক প্রতিবন্ধকতা তাঁকে পাড়ি দিতে হয়েছে। কিন্তু সবকিছুকেই ছাড়িয়ে যাচ্ছে কোভিড-১৯। অবস্থাদৃষ্টে ধারণা করা হচ্ছে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রবল বিরোধীদের তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়া পুতিন এবার ভালোই গ্যাঁড়াকলে পড়তে চলেছেন। শুধু এক করোনাভাইরাসের কাছেই অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন পুতিন। কোভিড-১৯ পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার সময় গত মার্চ মাস থেকেই রাশিয়ায় কঠোর লকডাউন জারি করা হয়েছিল। প্রাথমিক পর্যায়ে আক্রান্তের সংখ্যাও অনেক কম ছিল। কিন্তু গত কিছুদিনে তা আকাশ ছুঁয়েছে। এক দিনে ১০ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাও রাশিয়ায় ঘটেছে। প্রথম দিকে শুধু মস্কোতে সংক্রমণের হার বেশি থাকলেও, বর্তমানে তা রাশিয়ার ৮৪টি অঞ্চলেই ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও ইউরোপ-আমেরিকার তুলনায় রাশিয়ায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার অনেক কম, তবে নিন্দুকেরা বলছেন–এতে পুতিনের সর্বাত্মক রাষ্ট্রযন্ত্রের কারসাজি থাকা অসম্ভব কিছু নয়। এমন অনুমানের পেছনে শক্ত কারণও আছে। বিশ্লেষকদের মতে, এককালের সমাজতান্ত্রিক রাশিয়ায় পুতিনের আমলে নব্য অভিজাততন্ত্র গড়ে উঠেছে। দেশটিতে সমৃদ্ধি এসেছে ঠিকই, তবে তা গুটিকয়েকের কপালেই জুটেছে। আর রুশ রাজনীতিতে বিরোধীদের মুখ চেপে রাখার কাজটি তো পুতিন রুটিন কাজে পরিণত করেছেন! বিশ্বাস মিলাবে কী করিয়া? নতুন করোনাভাইরাসের কারণে বেশ কয়েকটি সমস্যায় পড়েছেন পুতিন। প্রথমত, স্বাস্থ্যখাতে রাশিয়ার অক্ষমতা প্রকাশ হয়ে পড়ছে। এরই মধ্যে রুশ সরকারের নেওয়া অপ্রতুল পদক্ষেপ, দেরিতে সাড়া দেওয়াসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে স্বদেশের চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরাই আড়েঠারে প্রশ্ন তোলা শুরু করে দিয়েছে। কিছু চিকিৎসকের আত্মহত্যা করার খবরও গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। বলা হচ্ছে, অপ্রতুল সরঞ্জাম ও প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ছাড়াই করোনা প্রতিরোধ করতে গিয়ে মানসিক চাপে বিপর্যস্ত হয়ে এসব চিকিৎসকেরা আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। আবার পুতিনের শাসনকালে যে ইচ্ছে করেই সোভিয়েত আমলের অনেক হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, সেই বিষয়টিও নতুন করে আলোচনায় উঠে আসছে। কারণ কোভিড-১৯ দারুণভাবে মোকাবিলা করার মতো পর্যাপ্ত হাসপাতাল সেবার অভাব বর্তমানে রাশিয়ায় অনুভূত হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো রাশিয়ার অর্থনীতিও টালমাটাল পরিস্থিতিতে পড়েছে। তবে ইউরোপ-আমেরিকার অন্যান্য দেশ যেমন অর্থনৈতিক সুরক্ষাস্বরূপ নানাবিধ ব্যবস্থা নিয়েছে, রাশিয়ার সরকার ঠিক ততটা নেয়নি। ফলে দেশটির খেটে খাওয়া মানুষ, সাধারণ চাকরিজীবী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বিপদে পড়েছেন। দেশটির সরকারি হিসাবে দেখা গেছে, দিন দিন পর্যাপ্ত আয়ের সীমা থেকে নিচে নেমে যাচ্ছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।