রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় ফাঁসি থেকে মুক্ত আসলাম ফকির আবার খুনে জড়ালেন

প্রথম আলো প্রকাশিত: ২৪ এপ্রিল ২০২০, ০৮:০০

রাজনৈতিক বিবেচনায় ২০১৫ সালে ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি আসলাম ফকিরের ফাঁসির সাজা মওকুফ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি। আর ২০১৭ সালে তিনি কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্থানীয় রাজনীতিতে ফিরে আসেন বিপুল বিক্রমে। এবার মুক্ত হওয়ার তিন বছর পর আবারও আরেকটি হত্যা মামলার প্রধান আসামি হলেন আসলাম ফকির। এবার ভাঙ্গা উপজেলার মানিকদহ ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের শহীদ মাতুব্বরকে খুনের অভিযোগ সরাসরি আসলাম ফকিরের বিরুদ্ধে। এই হত্যা মামলায় আসলাম ফকিরকে প্রধান আসামি করে ৫৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এর আগে একই উপজেলার মানিকদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এ কে এম সাহেদ আলী ওরফে সাহেব আলী মিয়াকে হত্যার ঘটনায় ফাঁসির দণ্ড হয়েছিল তাঁর। কিন্তু আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক সাংসদ কাজী জাফরউল্যাহর সহযোগিতায় আসলাম ফকির শুধু ফাঁসির সাজা থাকে রক্ষা পাননি, মুক্তি পেয়েছেন কারাগার থেকেও। এ বিষয় জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, তখন তো তাঁরা বলেছিলেন আসলাম ফকির মানসিক রোগী। যদি আসলাম ফকির এই খুনের সঙ্গে জড়িত থাকে, তবে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে কঠিন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ তো রীতিমতো প্রতারণা। ফরিদপুরের পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর আসলাম আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয়। আওয়ামী লীগের নেতা কাজী জাফরউল্যাহর কাছের লোক হিসেবেই তিনি এলাকায় পরিচিত। ওই আসনের স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচিত বর্তমান সাংসদ মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন চৌধুরী) সমর্থকদের সঙ্গে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তাঁদের মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষ হয় বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। স্থানীয় লোকজন জানান, ২১ এপ্রিল রাত সাড়ে আটটায় লক্ষ্মীপুর গ্রামে বাড়ির বৃষ্টির টিনের পানি আরেক বাড়িতে পড়া নিয়ে আবারও দুদলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এরপর আসলাম ফকির ও তাঁর সঙ্গীদের সঙ্গে একই এলাকার শাজাহান মাতুব্বরের সমর্থকদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। একপর্যায়ে আসলাম ফকিরের লোকজন শাজাহান মাতুব্বরের সমর্থক শহীদকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করেন। শহীদ পরে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে মারা যান। তিনি একজন কৃষক ছিলেন। তিনি নিক্সন চৌধুরীর কর্মী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, একটি ছোট ঘটনাকে কেন্দ্র করে আসলাম ফকিরের নেতৃত্বে এত বড় সংঘর্ষ হয়। রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পেয়ে কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর থেকে তিনি যা ইচ্ছা তা-ই করছেন। তিনি থানা-পুলিশ কাউকে পরোয়া করেন না। তাঁর বিরুদ্ধে আগেও থানায় অভিযোগ এসেছে। মূলত স্থানীয় আধিপত্যকে কেন্দ্র করে এই দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়েছে। তিনি বলেন, এ মামলার প্রধান আসামি আসলাম ফকির পলাতক। আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে। এ ঘটনায় শহীদ মাতুব্বরের চাচা শাজাহান মাতুব্বর ভাঙ্গা থানায় মামলা করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, 'পুরো ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন আসলাম ফকির। ওর ইন্ধনে ও প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে আমার ভাতিজা খুন হয়েছে। আসলাম ফকির যত দিন কারাগারে ছিল, তত দিন গ্রামে কোনো সংঘর্ষ হয়নি।' ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক সাংসদ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ ও তাঁর স্ত্রী সাংসদ নিলুফার জাফরউল্যাহর সঙ্গে এলাকার নানা কর্মসূচিতে দেখা গেছে আসলাম ফকিরকে। স্থানীয় লোকজন জানান, আসলামের ইচ্ছা তিনি দলের নেতা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচন করবেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, 'সাংসদ মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন চৌধুরী) লোকেরা নিজেরা মারামারি করেছে। আসলাম ফকির নির্দোষ। তার কোনো লোক ওখানে যায়নি। সাংসদ এখন নৌকার সমর্থকদের ওপর দোষ চাপাচ্ছে।' পুলিশ তাহলে কেন মামলা নিল? জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাংসদ এখন ক্ষমতায়। পুলিশ, ইউপি চেয়ারম্যান, এলাকাবাসী সবাই তাদের কথা শোনে। এদিকে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, কাজী জাফরউল্যাহ আসলাম ফকিরের বিরুদ্ধে মামলা না নেওয়ার জন্য পুলিশকে একাধিকবার অনুরোধ করেছেন।ক্রমে। এবার মুক্ত হওয়ার তিন বছর পর আবারও আরেকটি হত্যা মামলার প্রধান আসামি হলেন আসলাম ফকির। লিখেছেন রোজিনা ইসলাম

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও