করোনাকালে ওএমএসের চাল বিক্রিতে উভয়সংকট
করোনা সংক্রমণের কারণে খাদ্যসংকটে পড়া মানুষকে স্বল্প মূল্যে চাল পৌঁছাতে গিয়ে উভয়সংকট তৈরি হয়েছে। একদিকে ওই চাল কালোবাজারে চলে যাচ্ছে, অন্যদিকে চাল আনতে গিয়ে তৈরি হচ্ছে ভিড়, ঠেলাঠেলি। এতে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিও নতুন করে বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে খাদ্য অধিদপ্তর ট্রাকে করে খোলাবাজারে চাল বিক্রি থেকে সরে আসার কথা ভাবছে। তারা দরিদ্রদের তালিকা করে তাঁদের এলাকার আশপাশে গিয়ে ওই চাল পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। করোনা সংক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর বেশির ভাগই বাংলাদেশের মতো করে দরিদ্রদের সহায়তা দিচ্ছে না। অনেক দেশেই দরিদ্র মানুষদের বিনা মূল্যে খাদ্যসহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি নগদ অর্থও দেওয়া হচ্ছে। আর সরকারিভাবে কিছু মৌলিক বা গুরুত্বপূর্ণ খাবার সাধারণ মানুষের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের পক্ষে বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দেওয়ার মতো লোকবল নেই। স্থানীয় প্রশাসন যদি তা পারে, তাহলে তাদের খাদ্য অধিদপ্তরের গুদামে থাকা চাল পৌঁছে দেওয়া যেতে পারে। তারা তা দরিদ্রদের কাছে পৌঁছে দেবে।’ তবে দেশের বিভিন্ন স্থানে চাল চুরির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে তাঁরা প্রতিটি জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছেন। ইফপ্রির পরামর্শবাংলাদেশে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা ও উন্নয়ন সংস্থাগুলো এ দেশের করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য কী ধরনের খাদ্যসহায়তা দেওয়া যায়, তা নিয়ে বৈঠক করেছে। তাতে মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন খাদ্যনীতিবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইফপ্রি বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর আখতার আহমেদ। আখতার আহমেদ তাঁর প্রস্তাবে বাংলাদেশের করোনা সংক্রমণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সহায়তার জন্য কয়েকটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেন। খোলাবাজারে ট্রাকে করে চাল বিক্রির মতো কর্মসূচির মাধ্যমে করোনাভাইরাস আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে উল্লেখ করে তিনি সুপারিশে বলেছেন, অবশ্যই মানুষের বাড়ি বাড়ি খাদ্য পৌঁছে দিতে হবে। বস্তিগুলোর ক্ষেত্রে কাউকে খাবার দেওয়া হবে বা কাউকে দেওয়া হবে না—এমন করলে চলবে না। পুরো বস্তির সবাইকে লকডাউন চলা পর্যন্ত খাবার দিতে হবে। খাবারের মধ্যে পুষ্টিকর চাল, তেল ও ডাল থাকা উচিত বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন। আখতার আহমেদ তাঁর প্রস্তাবে বলেন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে ১০ টাকার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির মাধ্যমে চাল দেওয়া চালিয়ে যেতে হবে। এ ছাড়া প্রতিটি পরিবারকে মাসে ১ হাজার ৮০০ টাকা নগদ সহায়তা দেওয়া উচিত। তবে পরবর্তী সময়ে কর্মসৃজন কর্মসূচির মাধ্যমে তাঁদের কোনো কাজে যুক্ত করা যেতে পারে, যেখান থেকে ওই সহায়তার অর্থ কেটে রাখা যেতে পারে। খাদ্যসহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে খাদ্য রশিদ বা ভাউচারের মাধ্যমে তা বণ্টন করা যেতে পারে বলে সংস্থাটি মনে করছে। অন্যদিকে ইফপ্রির করা ২০১৯–এর এক জরিপে দেখা গেছে, দেশের গ্রামাঞ্চলের ৫৬ শতাংশ পরিবারে স্বাস্থ্যসংক্রান্ত খরচ একটি বড় ধরনের আর্থিক চাপ তৈরি করে। অনেক ক্ষেত্রে এই খরচ তাদের দারিদ্র্য বাড়িয়ে দেয়। মাত্র চার শতাংশ পরিবারের স্বাস্থ্যবিমা আছে উল্লেখ করে বলা হয়, দেশের প্রতিটি পরিবারের জন্য সামাজিক স্বাস্থ্যবিমা চালু করা উচিত।