ভারতের মানসিক ভারসাম্যহীনদের বাংলাদেশে প্রবেশ করাচ্ছে বিএসএফ!
করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সারা দেশে চলেছে অঘোষিত ‘লকডাউন’। ২৬ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি ছুটির পাশাপাশি বন্ধ রয়েছে সরকারি-বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠান। আর করোনাভাইরাসের এ দুর্যোগকালীন সময়ে কুড়িগ্রামে অযাচিত মানুষের কারণে বাড়তি দুশ্চিন্তায় পড়েছেন জেলার মানুষ। জেলার সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারীদের অভিযোগ, ভারতীয় রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) অযাচিত অতিথি তথা মানসিক ভারসাম্যহীনদের কাঁটাতার দিয়ে পার করে বাংলাদেশে প্রবেশ করাচ্ছেন। দেশের বৃহত্তম সীমান্তবর্তী দারিদ্র পীড়িত জেলা কুড়িগ্রাম। জেলার তিন দিকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটারজুড়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম এবং মেঘালয় রাজ্যের কাঁটাতার রয়েছে। জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে ৭টি উপজেলাতে রয়েছে সীমান্ত। কাঁটাতার দিয়ে মাদকসহ চোরাচালানের অভিযোগ পুরাতন হলেও এবার সীমান্ত দিয়ে বিএসএফ মানসিক ভারসাম্যহীনদের পার করে দেয়ার নতুন অভিযোগ উঠেছে। ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং আসাম রাজ্যের সীমানা পড়েছে। অভিযোগ রয়েছে, উপজেলার সোনাহাট, শিলখুড়িসহ বেশ কিছু ইউনিয়নের সীমান্ত দিয়ে বিজিবি’র চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রায় সময় বিএসএফ রাতে কিংবা দিনে দু-একজন করে অযাচিতদের কাঁটাতারের গেট অথবা কালভার্টের নিচ দিয়ে লাঠিপেটা করে বাংলাদেশে প্রবেশ করিয়ে দেয় বলে জানা যায়। এসব মানসিক ভারসাম্যহীনরা জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে। এরা শহর-গ্রামের মানুষদের উৎপাত করায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন স্থানীয়রা। বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করা এ সব অযাচিতদের ভাষা স্থানীয়রা বুঝতে না পারলেও মানবিকতার কারণে খাবার দিয়ে থাকেন অনেকেই। সোনাহাট স্থলবন্দর টু ভূরুঙ্গামারী সড়কের পাটেশ্বরী বাজারে সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন ধরনের মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষ। ময়লা-দুর্গন্ধ পোশাক আর জটবাঁধা চুলে এবড়ো-থেবড়ো অবস্থায় কয়েকজন নারী কিংবা পুরুষ ঘুরে বেড়াচ্ছেন। একটু কথা বলার চেষ্টা করা হলেও ভাষা বুঝতে পারা কঠিন। তাদের এমন দুর্দশা দেখে অনেকই স্ব-প্রণোদিত হয়ে অনেকেই খাবার দিচ্ছেন। বাজারের ব্যবসায়ী ও সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা বিপুল, মজিবর, আজিজ, মঞ্জু মিয়া, মন্টু মিয়াসহ অনেকেই বলেন, ‘ভারতীয় এ সব অযাচিত মানুষ আমাদের এখানে ছিল না। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং আসাম রাজ্যের মানুষের চেহারার কিছুটা মিল থাকলেও তাদের কথার সঙ্গে আমাদের কথার মিল নেই। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রায় সময় বিজিবি’র চোখ ফাঁকি দিয়ে বিএসএফ মানসিক ভারসাম্যহীনদের সন্ধ্যা কিংবা দুপুরে পার করে দেয়। বর্তমানে বিএসএফ’র এমন কর্মকাণ্ড বেশি দেখা যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনেই এমন নতুন নতুন মানসিক ভারসাম্যহীনদের দেখতে পাওয়া যায়।’ এ সব মানুষদের বিরুদ্ধে কাপড় চোপড়সহ দৈনন্দিন জিনিস চুরি করার অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। অনেকেই নেশা জাতীয় দ্রব্য ব্যবহার করেন। হাট-বাজারগুলোতে আশ্রয় নিয়ে থাকলেও অনেক সময় মানসিক ভারসাম্যহীনরা নিজেদের কাপড়ে নিজেরাই আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে করে যে কোনো মুহূর্তে বাজারগুলোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাসহ বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা করেন স্থানীয়রা। এই পাগলদের থেকে করোনাসহ বিভিন্ন নতুন নতুন রোগের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন এলাকার সাধারণ মানুষজন। দ্রুত এসব মানসিক ভারসাম্যহীনদের ভারতে ফেরত পাঠানোসহ সীমান্ত দিয়ে এদের প্রবেশ বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান কুড়িগ্রামের সাধারণ মানুষরা।