যে আগুন বস্তি ভালোবাসে
এই ফাগুন মাস বস্তিতে আগুন লাগার মাস। ঢাকা ও চট্টগ্রামে কয়েকটি বস্তিতে পরপরই আগুন লাগল। পুড়ে গেল কয়েক শ সংসার। গুলশানের কড়াইল বস্তিতে বছরে গড়ে অন্তত দুবার আগুন লাগে। কোনো কোনো বছর তিনবার আগুন লাগার ঘটনাও আছে। গত কয়েক দিনের মধ্যেই চট্টগ্রামে পরপর দুটি বস্তিতে আগুন লাগল। ঢাকার রূপনগরের আগুনের একটি ছবি ফেসবুকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আগুনের ধোঁয়ার কুণ্ডলীর সামনে জ্বলজ্বল করছে একটা সাইনবোর্ড। তাতে লেখা: ফ্ল্যাট প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত স্থান/বিনা অনুমতিতে প্রবেশ নিষেধ। জায়গাটি গণপূর্ত বিভাগের। গণপূর্ত মানে পাবলিক ওয়ার্কস, জনগণের সেবায় বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো বানাবার দায়িত্ব এই বিভাগের। কিন্তু কাদের কল্যাণের জন্য গণপূর্ত সেখানে ফ্ল্যাট বানাবে? জনগণের জন্য নিশ্চয় না। মানুষ এই আগুন আর সেই সব নির্মিতব্য ফ্ল্যাট প্রকল্পের মধ্যে সম্পর্ক খুঁজে পাচ্ছে—পেতেই পারে। এর মধ্যেই পুড়ে গেছে বস্তিবাসীদের ২০০টি ঘর। নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব একবার বলেছিলেন, বস্তি উচ্ছেদ করতে অনেক সময়ই কৌশল হিসেবে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। অথচ দেশের জিডিপিতে তাদের ভূমিকাও কম নয়। যখন পুড়ছে না, তখনো বস্তির জীবন এক যুদ্ধ। বাংলাদেশিদের প্রাণশক্তির পরিচয় পেতে গুলশান-বনানীতে গিয়ে লাভ নেই, যেতে হবে বস্তিতে বস্তিতে। বড় বস্তি মানে বারবার আগুনে পোড়ার ইতিহাস। এবং বারবার আগুনকে পরাজিত করে আবার জীবনের খুঁটি মাটিতে পোঁতার ইতিহাস।
- ট্যাগ:
- মতামত
- বস্তিতে আগুন
- ঢাকা