কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় মলিনমুখে পুষ্পস্তবক হাতে শত শত মানুষের অপেক্ষা, এক গুণীজনকে শেষ বিদায় জানাতে এসেছেন তারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. অজয় রায়কে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে হাজির হন নানা শ্রেণি পেশার মানুষ। অধ্যাপক অজয় রায়ের লাশবাহী গাড়ি যখন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রবেশ করে তখন শোকে স্তব্ধ সবাই। গতকাল সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট একুশে পদকপ্রাপ্ত এ পদার্থবিদকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এ আয়োজন করে। শ্রদ্ধা জানাতে এসে সকলে গুণী এ অধ্যাপকের আত্মার শান্তি কামনা করেন। স্মৃতিচারণ করেছেন তার দীর্ঘ জীবনী নিয়ে। আবেগে আপ্লুত অনেকে অশ্রুসিক্ত হয়েছেন। ঢাকা জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে অজয় রায়কে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। সোমবার দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজধানীর বারডেম জেনারেল হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন অজয় রায়। এ শিক্ষাবিদের শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী তার মরদেহ বারডেমে হস্তান্তর করা হয়েছে। শ্রদ্ধা জানাতে এসে অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, অধ্যাপক অজয় রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের একজন ছিলেন। তার ছেলেকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, এটা গোটা জাতির জন্য মর্মান্তিক ব্যাপার। তিনি বিচার চেয়ে মামলা করেছিলেন। মামলার বিচার হওয়ার আগেই তার মৃত্যু হলো। মাঝখানে চার বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেছে। আমরা চাই, অপরাধীরা শাস্তি পাক। তবে দেশে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অবস্থা উন্নত না হলে এই জঙ্গিবাদী হত্যাকাণ্ড বন্ধ হবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মু. সামাদ বলেন, অধ্যাপক অজয় রায় একজন প্রথিতযশা বিজ্ঞানী ও বুদ্ধিজীবী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন প্রবাসী শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র অংশ নিয়েছিলেন। জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, অজয় রায় ও আমি সমসাময়িক ছিলাম। আমরা একই বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করি। একই বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় যোগ দিয়েছি। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক চেতনা ছড়িয়ে দেয়ার কাজে একসঙ্গে কাজ করেছি। অজয়ের মৃত্যু আমার জন্য গভীর শোকের। আমি তার স্মৃতির প্রতি আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাই। অভিনেতা হাসান ইমাম বলেন, অধ্যাপক অজয় রায় একজন সংস্কৃতিমনা ব্যক্তি। তিনি আপাদমস্তক একজন অসামপ্রদায়িক ব্যক্তি ছিলেন। মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে ছিলেন অগ্রণী সৈনিক। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, আমরা ১৯৯২ সালে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠন করেছিলাম শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে। ১৯৯২ সাল থেকে গত ২৮ বছর অধ্যাপক অজয় রায় আমাদের সঙ্গে ছিলেন। তিনি নির্মূল কমিটির অন্যতম উপদেষ্টা হিসেবে ছিলেন। আমাদের যেকোনো আন্দোলনে মৌলবাদের বিরুদ্ধে, সামপ্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সব সময় তিনি সোচ্চার ছিলেন। ধর্মনিরপেক্ষ মানবতাবাদ ছিল তার আদর্শ। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী বলেন, বাংলা একাডেমি বিশেষ করে তার কথা স্মরণ করবে। তার বিকল্প আর কখনো হবে না। আমাদের ভাষা ও সাহিত্যের পাশাপাশি, বিজ্ঞানচিন্তায়ও তিনি অবদান রেখেছেন। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে এই আশা, তারা যেন অজয় রায়কে অনুসরণ করে। অধ্যাপক অজয় রায়ের ছেলে অনুজিৎ রায় বলেন, পিতাকে হারানোর বেদনা মর্মে মর্মে আমি অনুভব করি। তিনি শুধু আমার পিতা নন, তিনি একজন বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানী, বুদ্ধিজীবী, মুক্তিযোদ্ধা, একুশে পদকপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী, লেখক ও গবেষক। তার গুণ বলে শেষ করা যাবে না। আমার বড় ভাই অভিজিৎ রায়ের হত্যার বিচার তিনি দেখে যেতে পারেননি। হয়তো দেখে যেতে পারলে তিনি কিছুটা স্বস্তিবোধ করতেন।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
We use cookies to ensure you get the best experience on our website.