‘বুলবুল’র ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন বিধবা মমতাজ বেগম
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের ক্ষত এখনও বয়ে বেড়াচ্ছেন বিধবা মমতাজ বেগম (৬০)। প্রলয়ঙ্কারী এ ঝড়ে তার ঝুপড়ি ঘরটি উড়ে গেছে। ল-ভ- হয়ে গেছে মাথা গোঁজার ঠাই। মমতাজ বেগমের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার মির্জাগঞ্জ ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মির্জাগঞ্জ গ্রামে। টাকার অভাবে তিনি ঘরটি মেরামত করতে পারেননি এখনও। কোনরকম সহযোগিতাও জোটেনি কপালে। মমতাজ বেগমের দুই ছেলে দিনমজুর করে কোন মতে চালায় সংসার। নিরুপায় হয়ে ছেলে, বউ ও নাতি-নাতনি নিয়ে বসতভিটার ওপর ছাপড়া দিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। দিনের বেলা কোনমতে পার হলেও রাত কাটে তাদের ভয়ে। এলাকার প্রভাবশালী, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন রকমের সহযোগিতা না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে মমতাজ। মমতাজ বেগমের বাড়িতে গেলে দুই চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলেন, ‘ও ভাই আপনারা কী ঝড়ে যাগো ঘর ভাইঙ্গা গেছে হেগো নাম নেন? আমার ঘরডা ভাইঙ্গা চুরমার হইয়া গেছে। পারলে মোর একটা ঘরের নাম দিয়েন। মোর দারে টাহা নাই, আপনেগো জন্য দোয়া করমু, তবুও মোর নামটা রাইখেন।’ জানা যায়, ছোট ছোট দু’টি ছেলে রেখে তার স্বামী মমিনউদ্দীন মাঝি মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাতেন। অভাবের সংসারে ছেলেদের পড়াশোনা করাতে পারেননি। ছেলেরা বড় হলে দিনমজুর করে কোনমতে সংসার চলাচ্ছেন। তাদের সামান্য সঞ্চয়ের টাকা দিয়ে কোনরকম টিনের বেড়ার নড়বড়ে ঘর তোলেন। অন্তত: মাথা গোঁজার মত একটু ঠাঁই ছিলো। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় বুলবুল তাও কেড়ে নিলো। দুমড়ে-মুচড়ে দিয়ে গেছে আশ্রয়ের শেষ ঠিকানা। মমতাজ বেগমের বড় ছেলে ইব্রাহিম মাঝি বলেন, ঘর ভাঙ্গার পর ঘরের জন্য ইউএনও স্যারের কাছে আবেদন করেছিলাম। এখনও পর্যন্ত তো ঘর পাইলাম না। এছাড়া কোনরকম ত্রাণও পাইনি মোরা। মা, স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে খোলা আকাশের নিচে জীবনযাপন করছি। বিবাহ উপযুক্ত মেয়ে নিয়ে খোলামেলা ঘরে দুশ্চিন্তার মধ্যে কাটছে দিনগুলো। মেয়েটি নিয়ে অনেক চিন্তা হয়। গরীব বলে মোগো খবর কেউ রাখে না। সরকার একটি ঘর দিলে সবাইরে লইয়া একটু শান্তিতে ঘুমাইতে পারমু। স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. সাব্বির হোসেন ইসমাইল জানান, মমতাজ ও তার ছেলেরা খুবই অসহায় ও গরীব। ঘরটি ভেঙ্গে পড়ায় অনেক কষ্টে ছাপড়ার মধ্যে গাঁ ঠাসা দিয়ে ছেলে, বউ, নাতি-নাতনি নিয়ে থাকেন। সরকারিভাবে একটি ঘর পেলে অনেক উপকার হতো পরিবারটি। তবে শুনেছি ঘরের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেছে তারা। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলামের কাছে জানাতে চাইলে তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য ৫০ বান ঢেউটিন ও ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা অনুদান পাওয়া গেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ট্রেনিংয়ের জন্য দেশের বাইরে রয়েছেন। তিনি আসার পরে ঘরের জন্য আবেদনকারীদের তালিকা যাচাই-বাছাই করে যারা পাওয়ার উপযুক্ত তাদের মাঝে সুষ্ঠভাবে বিতরণ করা হবে।