যেভাবে ফাঁদে ফেলতেন এএসআই রিয়াজুল

মানবজমিন প্রকাশিত: ০১ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের বাঁশতৈল ফাঁড়ির এএসআই রিয়াজুল ইসলাম যেন এক আতঙ্কের নাম। তার অনৈতিক কাজের পরিধি শুধু বাঁশতৈল ফাঁড়ি এলাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। রাজত্ব ছিল বাঁশতৈল ফাঁড়ির পার্শ্ববর্তী টাঙ্গাইলের সখিপুর থানার বিভিন্ন এলাকায়ও। এএসআই রিয়াজুল, কনস্টেবল তোজাম্মেল মিলে কায়েম করেছিলেন এক ত্রাসের রাজত্ব। কখনো সিএনজির পেছনে ইয়াবা রেখে, কখনো মাদক কারবারিকে যাত্রী বেশে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে উঠিয়ে, কখনো সোর্স দিয়ে ডেকে নিয়ে আবার কখানো বা অহেতুকভাবে বিভিন্নজনকে মাদকের মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়ের অসংখ্য অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি এক যুবকের পকেটে ইয়াবা  ঢুকিয়ে ফাঁসানোর ঘটনায় বরখাস্ত হয়েছেন বাঁশতৈল ফাঁড়ির সেই পুলিশ সদস্য মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া থানার গুলরা গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে এএসআই রিয়াজুল ইসলাম। বরখাস্ত হয়েছেন তারই অপকর্মের সহচর ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থানার মোজাটি গ্রামের আক্তারুজ্জামানের ছেলে কনস্টেবল মো. রাসেলুজ্জামান, কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদি থানার ঢুলুদিয়া গ্রামের জীবন সাহার ছেলে কনস্টেবল গোপাল সাহা, কনস্টেবল তোজাম্মেল ও হালিম। সরজমিন বাঁশতৈল ফাঁড়ির আওতাধীন উপজেলার বাঁশতৈল ইউনিয়ন পরিদর্শন করলে অসংখ্য মানুষ তার ও বাঁশতৈল ফাঁড়ির কতিপয় অসাধু সদস্যদের বিরুদ্ধে মানুষকে মাদকের মামলায় ফাঁসানোর কথা বলে জিম্মি করে টাকা আদায়ের অভিযোগ করেন। বাঁশতৈল ইউনিয়ন পরিষদের স্থানীয় ইউপি মেম্বার মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, নিরীহদের শুধু মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে অর্থ আদায় নয় বরং অর্থ আদায়ের আগে ধৃত ব্যক্তিকে তার সোর্স হিসেবে কাজ করে আরো লোককে ধরিয়ে দেয়ার শর্ত দিয়েই তাদের ছেড়ে দিতেন তিনি। সিগারেট পর্যন্ত খায় না এমন অনেক ছেলেকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে অর্থ আদায় করেছেন তিনি। কামিয়েছেন কোটি টাকা। উপজেলার বাঁশতৈল ইউনিয়নের বাঁশতৈল পশ্চিমপাড়া গ্রামের মো. দুলাল মিয়ার ছেলে স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. আলম বলেন, প্রায় ৬ মাস আগে একদিন এএসআই রিয়াজুল তাকে ফোন করে ডেকে নেন। পরে তাকে বিএনপি’র রাজনীতি করার অপবাদ দিয়ে ভয় দেখিয়ে ১৪ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় এএসআই রিয়াজুল। বাঁশতৈল স্কুল পাড়া এলাকার আমজাদ হোসেন ওরফে আমজাদ কসাই অভিযোগ করেন, তার ছেলে শাহিন (২১)কে একদিন সন্ধ্যায় বাঁশতৈল বাজারে তল্লাসির নামে জনসম্মুখে ২ পিস ইয়াবা পকেটে ঢুকিয়ে ২৭ হাজার ৫০০ টাকা আদায় করেন এএসআই রিয়াজুল। তবে সে সময় ছেলে বিদেশ যাওয়ার কথা থাকায় তিনি এনিয়ে কোনো বাড়াবাড়ি করেননি বলেও জানান। বাঁশতৈল বাজারের রিকশাচালক মোস্তফা বলেন, এএসআই রিয়াজের সোর্স হিসেবে কাজ করা রফিক একদিন তাকে কয়েকটি সিগারেট নিয়ে ভাঙা হাসপাতাল নামক জায়গায় যেতে অনুরোধ করেন। এরপর সেখানে যাওয়া মাত্রই এএসআই রিয়াজ তাকে ২ পিস ইয়াবা দেখিয়ে জেলে নেয়ার হুমকি দিয়ে আদায় করেন ২০ হাজার টাকা। লজ্জায় এ ঘটনা বাড়ির লোককে জানাননি তিনি। এর আগে এএসআই রিয়াজ তাকে সোর্স হিসেবে কাজ করার কথা বললে তাতে রাজি না হওয়ায় মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকি দেন। এর ঠিক ৩ দিন পরই তাকে ইয়াবা খাওয়ার বদনাম দিয়ে ওই টাকা আদায় করেন তিনি। বাঁশতৈল বাজারের আরেক ব্যবসায়ী শহিদুল জানান, বেশ কিছুদিন আগে হোন্ডা মেরামত করতে বাজারের নাজমুলের গ্যারেজে গেলে নাজমুল তাকে বসিয়ে রেখে একটু বাইরে যায়। এর একটু পরেই হুড়মুড় করে এএসআই রিয়াজ ও তার সাঙ্গপাঙ্গ গ্যারেজে ঢুকে গাঁজা খাওয়ার মিথ্যে অপবাদ দিয়ে হাতিয়ে নেয় ৯ হাজার টাকা। বাঁশতৈল ফাঁড়ির ইনচার্জ সাইফুল ইসলামও স্বীকার করেন এএসআই রিয়াজুলের চলাফেরা ও কাজকর্ম পুলিশ বাহিনীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। এজন্য সবসময় তাকে সতর্ক করতেন তিনি। অপরদিকে টাঙ্গাইলের সখিপুর থানার উপ-পরিদর্শক লুৎফুল কবির জানান, এএসআই রিয়াজুল ও বাকি অন্য পুলিশ সদস্যরা এক যুবককে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসাতে গিয়ে ধরা পড়ার দিন অনেকেই মৌখিকভাবে তার কাছে এএসআই রিয়াজুলের নামে অভিযোগ করেছেন। সখিপুর থানাধীন হতেয়া মৌলানাপাড়া এলাকার মোখলেছুর নামের এক সিএনজিচালক অভিযোগ করেন গত ২২শে নভেম্বর ৫ পিস ইয়াবা ভর্তি একটি সিগারেটের প্যাকেট তার সিএনজিতে রেখে গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে ২০ হাজার টাকা আদায় করেন এএসআই রিয়াজুল। কাঠমিস্ত্রি বিপুল সূত্রধর অভিযোগ করেন গত ২০শে নভেম্বর তার পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে ৩১ হাজার টাকা আদায় করেন।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও