কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

মাল্টায় স্বপ্ন পূরণের স্বপ্ন রবিউলের

মানবজমিন প্রকাশিত: ২৩ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স শেষ করে চাকরি নামের সোনার হরিণের দেখা পাননি রবিউল ইসলাম রবি। তাই বলে বসে অলস সময় না কাটিয়ে বাড়ির চারপাশের নিজেদের জমিতে বিভিন্ন সবজি, ফলদ ও ঔষধি গাছের চাষ করে সকলের নজর কেড়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে নিজে সৃষ্টি করেছেন আত্মকর্মসংস্থান। বসতভিটের পাশঘেঁষা প্রায় ১৬ বিঘা জমিতে বিভিন্ন ধরনের মূল্যবান ফলদ, ঔষধি ও মসলা জাতীয় গাছ লাগালেও বিশেষ নজর কেড়েছে মাল্টার ক্ষেত। ৬ বিঘা জমিতে তিনি মাল্টার চাষ করেছেন। এ বছরই প্রথম মাল্টা ধরা শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত ৭০ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি করেছেন। আশা করছেন বেশ কয়েক বছর ধরে এ ক্ষেত থেকে মাল্টা পাবেন। যে মাল্টার টাকায় হতে পারবেন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী। রবিউল ইসলাম রবি ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের কাকলাশ গ্রামের মৃত ছবেদ আলী মণ্ডলের  ছেলে।সরজমিন দেখা যায়, কৃষক রবিউল ইসলামের বাড়ির আঙ্গিনার চারপাশে রয়েছে প্রায় সাড়ে ১৬ বিঘা জমি। যে জমিগুলোতে রয়েছে দারুচিনি,  তেজপাতা, আশফল, লটকন, কদবেল, চালতা, বেদানা, জলপাই, লিচু, আম, জাফরান,  বেল, পেয়ারা, জাম, আমড়া, করমচা, আমলকী, বকুল ফল,  লেবু, পাম গাছসহ বিভিন্ন ঔষধি বৃক্ষ। সাথী ফসল হিসেবে রয়েছে নানা ধরনের সবজি। এগুলোর মধ্যে বেশি নজরে এসেছে মাল্টার ক্ষেত। তার সাজানো মাল্টার ক্ষেত ঘুরে দেখা যায় এ বছর প্রায়  দেড় শতাধিক গাছে মাল্টা ধরে ঝুলে আছে। সবুজ রঙের মাল্টাগুলো পেকে হালকা হলুদ রঙ এসেছে।রবিউল ইসলাম রবি জানান,  ছোটবেলায় গ্রামের মানুষের ফলের বাগান দেখলে খুব ভালো লাগতো। তখন মনে হতো বড় হয়ে সুযোগ পেলে ফলের বাগান করবেন। যে বাগান দেখে অন্যরাও উদ্বুদ্ধ হবেন। লেখাপড়া শেষ করেছেন কয়েক বছর আগেই। চাকরি জোটেনি। তাই লেগে পড়েছেন তার আশানুরূপ কাজে। দূর-দূরান্ত থেকে বিভিন্ন মূল্যবান ফল, মসলা ও ঔষধি বৃক্ষের চারা এনে লাগিয়েছেন। এরমধ্যে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করেছেন মাল্টার। প্রতি পিস মাল্টার কলমের চারা পার্শ্ববর্তী চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা এলাকার দক্ষিণবঙ্গের অভিজ্ঞ মাল্টাচাষী সাখাওয়াত  হোসেনের কাছ থেকে ১৮০ টাকা দরে মোট ৮৫০টি চারা কিনে ৬ বিঘা জমিতে ২০১৭ সালের জুনের মাঝামাঝি  রোপণ করেন। তিনি জানান,  দেশি জাতের এ মাল্টা খেতে কড়া মিষ্টি এবং রসে ভরপুর। ফলে বাজারে এর চাহিদাও  বেশি। তিনি বলেন, মাল্টাসহ তার ফলের বাগানে সারাবছরের জন্য কৃষি শ্রমিক  রেখেছেন ৪ জন। তারা মাল্টাসহ সকল ফলের ক্ষেতে কাজ করে থাকেন। তিনি বলেন, এ এলাকায় তিনিই প্রথম মাল্টার চাষ করেছেন। তাই প্রথমদিকে এত বড় ঝুঁকি নিতে ভয় পাচ্ছিলেন। কিন্তু লাগানোর কিছুদিনের মধ্যেই গাছগুলো সতেজ হয়ে উঠেছিল। এরপর থেকে লাভের স্বপ্ন দেখছিলেন। তিনি শুনেছেন গাছ লাগানোর কমপক্ষে ৫ বছর পরে একটি মাল্টা গাছ ফল ধরার জন্য পরিপূর্ণতা লাভ করে। ঠিকমত পরিচর্যা করতে পারলে প্রতিটি গাছ থেকে কমপক্ষে ২০ বছর ভালোভাবে ফল পাওয়া সম্ভব। সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে বাগানটি ২০ বছর ধরে রাখতে পারলে যাবতীয় খরচ বাদে এখান থেকে কোটি টাকা আসবে বলে তিনি আশা করছেন।শিক্ষিত এই যুবক জানান, অনাবৃষ্টির সময়ে গাছে সেচের ব্যবস্থা করতে হয়। আবার অতিবৃষ্টি হলে পানি নিষ্কাশনের দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া লাগে। আবার গাছে অনেক সময় মাকড়সা লেগে গাছের পাতা কুকড়ে দেয়। গাছে ফল আসলে ভোমরা, মাছিসহ বিভিন্ন পোকামাকড়ের উপদ্রব  বেড়ে যায়। যে কারণে সারাক্ষেত ঘুরে সব সময় বাড়তি নজরদারি করতে হয়।শিক্ষিত যুবক রবিউল আরো বলেন, একই সঙ্গে লেখাপড়া  শেষ করে বন্ধুরা অনেকে চাকরি করছে। আবার অনেকে  বেকার বসে আছে। লেখাপড়া শিখে চাকরি জোটেনি বলে কখনও খারাপ লাগেনি। কেননা দেশে যত শিক্ষিত  বেকার যুবক আছে ততটা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই। তাই বলে বসে থাকলে চলবে না। তার দৃষ্টিতে কোনো কাজই ছোট নয়। বরং পরিশ্রমে কোনো কিছু উৎপাদনের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারলে নিজের মর্যাদা বাড়বে। এমন কি নিজের কাছেও ভালো অনুভব হবে।রবি’র ভাই আতাউর রহমান জানান, রবিউল ছোটবেলা  থেকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি বাড়িতে বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগাতো। এরপর লেখাপড়া  শেষ করে চাকরি হয়নি। বসে না থেকে বাড়ির পাশে যে ১৫-১৬ বিঘা জমি আছে সে সব সময় বিভিন্ন ধরনের মসলা, ঔষধি, সবজি ও ফলদবৃক্ষে সবটুকু জমি ছেয়ে ফেলেছে। ফসলি জমি তো তাই প্রথম দিকে তাকে পরিবারের পক্ষ  থেকে বাধা দেয়া হয়েছে। কিন্তু ভালো করার কারণে এখন পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে প্রতিনিয়ত উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। পরিবারের সদস্যরাও তাকে সহযোগিতা করছে।কোলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রতিবেশী আইয়ূব হোসেন জানান, শিক্ষিত যুবক রবিউল ইসলামের বাড়ি তার গ্রামেই।  ছোটবেলা থেকেই সে উৎপাদনমুখী। সবচেয়ে বড় কথা সে পরিশ্রমী। তার ধৈর্য শক্তি অনেক বেশি। সে  লেখাপড়া শিখেও চাকরির পিছু না ঘুরে নিজে ফলদবৃক্ষের ভুবন গড়ে তুলেছেন। তার এমন উদ্যোগ দেখে এলাকার অনেক শিক্ষিত বেকার তাকে অনুসরণ করতে শুরু করেছে। উৎপাদনে আত্মনিয়োগ করে  যেভাবে সে সফল হয়েছে সে কারণে প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল করিম জানান, শিক্ষিত যুবক রবিউল ইসলাম রবি স্বকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তিনি কয়েকবার তার ক্ষেত  দেখতে আমাকে নিয়ে গিয়েছেন। অত্যন্ত সৃজনশীল মনোভাবের মানুষ তিনি। তার বসতভিটের পাশের জমিতে অনেক ধরনের মসলাযুক্ত, ফলদ ও ঔষধি মূল্যবান বৃক্ষ রয়েছে। মাল্টা ক্ষেত থেকে তার লক্ষণীয় লাভ আসবে। ঠিকমতো পরিচর্যা করতে পারলে এ মাল্টা ক্ষেত থেকেই তার জীবনের অর্থনৈতিক চাকা ঘুরে যাবে বলে যোগ করেন এ কৃষি কর্মকর্তা।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও