ঘাটাইলে অবাধে পাহাড় ও টিলা কাটার হিড়িক

মানবজমিন প্রকাশিত: ১৫ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায় পাহাড়িয়া এলাকায় অবাধে চলছে পাহাড় ও টিলা কাটার হিড়িক। শুকনো মৌসুম এলেই ভাটায় ইট তৈরির কাজে ব্যবহার করার জন্য এক শ্রেণির অসাধু মাটি ব্যবসায়ী ও ভূমিদস্যুরা উঠে পড়ে লাগেন পাহাড় কাটার জন্য। রেকর্ডের ভূমির নাম করে অসাধু এই চক্র পাহাড়ে বসবাসরত সহজ সরল মানুষগুলোকে ভুলিয়ে ভালিয়ে নামমাত্র মূল্যে ৫-১০ শতাংশ রেকর্ডের জমি ক্রয় করে পাশে থাকা সরকারি খাস জমিসহ তারা অবাধে মাটি কেটে বিক্রি করে দিচ্ছেন ভাটার মালিক, ডোবা ও পুকুর ভরাট কাজে। বছরের পর বছর এভাবে মাটি কেটে পাহাড় বানাচ্ছেন। অথচ ৫-৭ বছর আগেও এসব ভূমি বড় বড় টিলা ও গাছ-গাছড়ায় ভরা ছিল। একদিকে টিলাগুলো ছিল দুই মানুষ সমান উঁচু অপর দিকে দিনের বেলায় এসব পাহাড়ের ভেতর মানুষ ঢুকতে ভয় পেতো। এসব পাহাড়ি অঞ্চলে এখন বড় বড় বিল্ডিং ও ইমারত গড়ে উঠেছে। পাহাড় আর পাহাড় নেই। পুরোটাই শহরের আদলে গড়া অন্য এক জনবসতি। বর্তমানে এখানে সমতল ভূমি বানিয়ে সবজি চাষের নাম করে ভেকু বসিয়ে ২০ থেকে ৪০ ফুট গভীর করে উঁচু পাহাড় ও টিলা কাটা হচ্ছে। পাহাড় কেটে প্রতিদিন শ’ শ’ ট্রাক, ড্রামট্রাক ও মাহেন্দ্র ট্রাক দিয়ে স্থানীয় ইটভাটায় লালমাটি বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা বাড়ছে। সরজমিন গিয়ে জানা গেছে, ঘাটাইল উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের জিগাডেঙ্গর, মাকরাই, ঘোড়ামারা, পাঞ্জাচালা, হরিণাচালা, তেঘড়ি, সন্ধানপুর ইউনিয়নের পাড়বাহুলী, চৌরাশা, দিগর ইউনিয়নের মাইধার চালা, সংগ্রামপুর ইউনিয়নের দেওয়াজানা, বগা, চেরাভাঙ্গাসহ পাহাড়ে বহু স্থানে একশ্রেণির মাটি ব্যবসায়ী গত দুই মাস যাবৎ পাহাড় ও টিলার ভোগদখলকারীদের সবজি চাষের উপযুক্ত জমি বানিয়ে দেয়ার নাম করে উঁচু পাহাড় ও টিলা কেটে লালমাটি আশপাশের ইটভায় বিক্রি করছে। স্থানীয়দের কেউ কেউ সমতল ভূমিতে বাড়ি নির্মাণ করতেও পাহাড় কেটে মাটি নিচ্ছে। কেউ মাছ চাষের জন্য পুকুর তৈরি করতেও পাহাড় বা টিলা কেটে লালমাটি বিক্রি করছে। আবার কোনো কোনো মাটি ব্যবসায়ী বনরক্ষীদের ম্যানেজ করে বনবিভাগের উঁচু পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করছে। লালমাটি কেটে বিক্রি করার কারণে অধিকাংশ ভূমির গজারি, মেহগনি, ইউক্যালিপটাস, আকাশমনি প্রভৃতি গাছগুলোও বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে পাহাড়ি এলাকার পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্টসহ মারাত্মক বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ঘাটাইল উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নে জিগাডেঙ্গর গ্রামের মৃত এবাদত আলীর ছেলে আবুবকর এবং মৃত আ. বাছেদের ছেলে আবুল হোসেন ও তার ভাই টাঙ্গাইল ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ফায়ারম্যান নুরুল ইসলাম নুরু প্রায় তিন একর ভূমির দুটি বড় পাহাড়ের গাছ ও পাহাড় কেটে ইতিমধ্যে বিক্রি করেছেন। ফলে ওই এলাকা এখন অনেকটাই সমতল ও পুকুরে পরিণত হয়েছে। এ বিষয়ে আবুল হোসেন ও নুরুল ইসলাম নুরু জানান, ওই ভূমি পাহাড় বা টিলা হলেও তাদের পৈতৃক সম্পত্তি। তারাই ওখানে গাছ রোপণ করেছিলেন। প্রয়োজনের তাগিদে গাছ কেটে লালমাটি বিক্রি করেছেন।  সরকারের ভূমি ব্যবহার আইন-২০১৬ অনুযায়ী ‘যেসব জমি বনভূমি হিসেবে টিলা, পাহাড় শ্রেণি, জলাভূমি, চা বাগান, ফলের বাগান, রাবার বাগান ও বিশেষ ধরনের বাগান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে তার শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। এসব স্থানে কোনো ধরনের আবাসিক কিংবা শিল্প-কারখানা স্থাপন করা যাবে না। করলেই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। দেশের খাল-বিল, হাওর-বাঁওড়, বিল-ঝিল ও জলাভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। এসব স্থান শুধু মৎস্য উৎপাদনের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। বালু মহাল, পাথর মহাল, বাগান, প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকার শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না’। এ আইন ভঙ্গ করলে সর্বোচ্চ ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও সর্বনিম্ন ১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা সর্বনিম্ন ২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা ২০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। এ আইনের অপরাধ দমনে জরুরি প্রয়োজনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে পারবেন। অথচ উল্লিখিত এলাকাগুলোতে স্থানীয় প্রভাবশালীরা অবাধে দিনরাত পাহাড় ও টিলা কেটে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করছে। ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোছা. নুরনাহার বেগম জানান, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আইন রয়েছে। পূর্বানুমতি ব্যতীত জমির শ্রেণি পরিবর্তন করার এখতিয়ার কারো নেই। পাহাড় ও টিলা কাটার বিষয়ে তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোছা. মোস্তারি কাদেরি জানান, পাহাড় ও টিলা কেটে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করার কোনো নিয়ম নেই। এ বিষয়ে তদন্ত করে জমির শ্রেণি পরিবর্তনকারীদের ডেকে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করা হবে। তারা কেউ না এলে আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও