খেলার মাঠেও হারুনের কাণ্ড ভিডিও ভাইরাল

মানবজমিন প্রকাশিত: ১৩ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

নারায়ণগঞ্জ থেকে সদ্য বিদায়ী বিতর্কিত পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদের নানা অপকর্ম ডালপালা ছড়াচ্ছে। পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে শুরু করে খেলার মাঠ পর্যন্ত সব জায়গায় ছিল তার দাপট। চাঁদাবাজি, মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে ও ভূমি দখল করে দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনার প্রকাশ পাওয়ার পর তোলপাড় চলছে সর্বত্র। এ রেশ কাটতে না কাটতেই প্রকাশ পেয়েছে খেলার মাঠে তার আক্রমণের শিকার একজন রেফারিকে মারধরের ভিডিও। ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে ‘মাঠ ভরা দর্শকের উপস্থিতিতে এসপি হারুন তার সহযোগী পুলিশের সদস্যরা জার্সি পরে একজন ফুটবল কোচকে মারধর করছেন। আর ওই কোচ প্রাণ বাঁচাতে দৌড়ে মাঠ ছেড়ে যাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, এসপির টিমকে জেতানোর জন্য প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়কে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মাঠ ছাড়া করা হয়। সেই ভিডিও প্রকাশ পাওয়ার পর ধিক্কারের ঝড় উঠেছে নারায়ণগঞ্জের ক্রীড়াপ্রেমীদের মধ্যে। জানা গেছে, গত ২৯শে জুন সোনারগাঁয়ে মাদক ও জঙ্গিবিরোধী প্রীতি ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করা হয়। যেখানে এসপি হারুনের নেতৃত্বে পুলিশ প্রশাসনের দল ছিল লাল জার্সিতে। আর নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনের এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার নেতৃত্বে আকাশী জার্সিতে সোনারগাঁও ফুটবল দল। সোনারগাঁ উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার তত্ত্বাবধানে বিকেল সাড়ে ৪টায় এ প্রীতি ফুটবল ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয় সোনারগাঁ যাদুঘরের পাশে শেখ রাসেল স্টেডিয়ামে। এ খেলায় এসপি একাদশের কাছে ২-০ গোলে পরাজিত হয় এমপি একাদশ।খেলায় অংশগ্রহণকারী এক খেলোয়াড় জানান, ‘রেফারিকে মারধর করে মাঠ থেকে তাড়িয়ে প্রশাসনিক ক্ষমতায় সেদিন খেলা জিতে নেয় এসপি একাদশ।’ তিনি জানান, এসপির সঙ্গে ফুটবল খেলা উপলক্ষে জেলাজুড়েই ছিল উত্তেজনা। সেজন্য উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা আন্তর্জাতিক সকল নিয়ম কানুন অনুসরণ করে খেলার আয়োজন করে। উপজেলা জুড়ে দর্শকদের উপস্থিত হওয়ার জন্য আহবান জানিয়ে মাইকিংও করা হয়। যথারীতি ২৯শে জুন বিকেলে মাঠে খেলোয়াড়দের উপস্থিতির আগেই দর্শকদের সমাগমে কানায় কানায় ভয়ে যায় মাঠের চারপাশ। মাঠও সাজানো হয় রঙ বেরঙের পতাকা দিয়ে। মাঠের এক পাশে করা হয় উপস্থাপনার মঞ্চ। পুরস্কার হিসেবে ছিল ট্রফি, মেডেল, ক্রেস্ট ও শুভেচ্ছার ফুল। কিন্তু খেলা শুরুর আগেই এসপি হারুন উদ্বোধনী বক্তব্যে ঘোষণা দেন, ‘এটা প্রীতি ম্যাচ এখানে গোল দিবে গোলরক্ষক বল ধরতে পারবে না।’ এ বক্তব্যই ছিল ফুটবল খেলার নিয়ম পরিপন্থি। তিনি বলেন, ‘১৫ মিনিট বিরতি শেষে দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে খেলা চলার এক পর্যায়ে এসপি হারুন অর রশীদ অফসাইড থেকে গোল দেন। আর সেটা রেফারির চোখে পড়লে তিনি অফসাইডের পতাকা ও বাঁশি বাজান। একইসঙ্গে গোল বাতিল ঘোষণা করেন। সঙ্গে সঙ্গে রেগে যান এসপি হারুন। গোল বাতিল করার ক্ষোভে দৌড়ে এসে রেফারিকে লাথি মারেন এসপি হারুন। আর সঙ্গে সঙ্গে চারদিক থেকে এসপি একাদশের অন্য খেলোয়াড়রা চারদিক থেকে রেফারিকে ঘিরে ফেলে মারধর শুরু করেন। কিন্তু নিরাপত্তায় থাকা অন্য পোশাক পড়া পুলিশ সদস্যরা রেফারিকে রক্ষা না করে উল্টো এসপি হারুনকে রক্ষা করে মাঠ থেকে নিয়ে যান। আর অন্য দিকে প্রাণভয়ে রেফারি দৌড়ে মাঠ ছেড়ে পালিয়ে যান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উপস্থিত দর্শকেরা মাঠে নেমে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করে। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে দর্শকদেরও বাকবিতণ্ডা হয়।’ প্রত্যক্ষদর্শী ওই ব্যক্তি আরো জানান, ‘খেলার এখানেই শেষ নয়। এসব পরিস্থিতির সময় মাঠেই উপস্থিত ছিলেন এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অঞ্জন কুমার সরকার, সোনারগাঁও থানার ওসি মনিরুজ্জামানসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পরে তাদের সকালের সহযোগিতায় পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আবারও খেলা শুরু হয়। ওই ঘটনার পর খেলা চলাকালীন এমপি একাদশের এক খেলোয়াড় খুব ভালোভাবে খেলছিলেন। একের পর এক এসপি একাদশের গোল পোস্টকে লক্ষ্য করে আক্রমণ করে যাচ্ছিলেন। যখন উভয় পক্ষই ছিল গোলশূন্য। তখন এসপি একাদশের এক সদস্য পিস্তল দেখিয়ে ভয় দেখায় যাতে সে ভালো না খেলে। অন্যথায় তাকে দেখে নেয়ার হুমকিও দেয়। এতে ভয় পেয়ে মাঠ ছেড়ে পালিয়ে যায় ওই খেলোয়াড়। পরে দশজনের দলের সঙ্গে এসপি একাদশের খেলোয়াড়রা দুই গোল দেন। তবে ততক্ষণে দর্শকরাও মাঠের খেলা ছেড়ে চলে যান। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যে রেফারিকে মারধর করে এসপি একদশের সদস্যরা তিনি হলেন আন্তর্জাতিক ফুটবল ফেডারেশনের নিয়োগভুক্ত রেফারি। ফলে বিষয়টি চাপা দিতে তোড়জোড় শুরু করেছিলেন স্থানীয় এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা। সে সময় উপস্থিত দর্শকদের হুমকি দেয়া হয় এসব ঘটনা যে প্রকাশ করবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গণমাধ্যমের কর্মীদেরও ভিডিও দৃশ্য ধারণের মেমোরি কার্ড রেখে দেয়া হয়। ফলে বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। ঘটনার পরেই ইউএনও অঞ্জন কুমার সরকার জানান, বিষয়টি ভুল বোঝাবুঝির মধ্যে হয়েছে। সেসময় তাৎক্ষণিক সেটা সমাধান করে পুনরায় খেলা শুরু হয়। তবে এ বিষয়ে লিয়াকত হোসেন খোকার সঙ্গে যোগাযোগে চেষ্টা করে তার মোবাইল নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। গত ৩ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে নারায়ণগঞ্জের এসপি হারুন অর রশীদকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দপ্তরে (ট্রেনিং রিজার্ভ) সংযুক্তির আদেশ দেয়া হয়। গত ৭ নভেম্বর এসপি হারুন আনুষ্ঠানিকভাবে নারায়ণগঞ্জ থেকে বিদায় নেয়ার পর তার বিতর্কিত নানা কর্মকাণ্ড প্রকাশ পেতে থাকে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও