অসদাচরণের অভিযোগে তুরিনকে অপসারণ

মানবজমিন প্রকাশিত: ১২ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

শৃঙ্খলা ও পেশাগত আচরণ ভঙ্গ এবং গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর বেগম তুরিন আফরোজকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে। গতকাল আইন ও বিচার বিভাগের সলিসিটর অনুবিভাগ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে তার নিয়োগ বাতিল করা হয়।এদিকে, সচিবালয়ে আইনমন্ত্রীর দফতরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে অভিযোগ তথ্য-প্রমাণের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। অপরাধীর সঙ্গে তিনি যে কথা বলেছেন তার রেকর্ড আমাদের কাছে আছে। সেখানে সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তার (তুরিন আফরোজ) গলা প্রমাণিত হওয়ায় আমরা তাকে অপসারণ করেছি। সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে আইনমন্ত্রী বলেন, আপনারা এটা জানেন যে, তার (তুরিন আফরোজ) বিরুদ্ধে অভিযোগের নিউজ অনেক হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল যে, তিনি একজন আসামির সঙ্গে (যেই মামলা তিনি নিজেই করছিলেন) আলাপ-আলোচনা করতে গিয়েছিলেন। একই সঙ্গে আলাপ-আলোচনার সময় তিনি এও বলেছিলেন যে, এ মামলার কোনো সারবর্তা (ম্যারিট) নেই। তিনি বলেন, সেই কথোপকথনের টেপ রেকর্ড করা হয়। কথোপকথনের টেপ রেকর্ড এবং তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউশন আমাদের নিকট পাঠান। আমরা এটা নিয়ে সাক্ষীদের সঙ্গে কথা বলেছি। একই সঙ্গে উনার (তুরিন আফরোজ) যতটুকু কথা বলা প্রয়োজন মনে করেছি, কথা হয়েছিল। কিন্তু যেই সাক্ষ্য-প্রমাণ আছে সেগুলো অল আর ডকুমেন্ট্রি। সে জন্য আমরা এ সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তাকে অব্যাহতি দিয়েছি। তবে তিনি আগে যে মামলা পরিচালনা করেছেন, তাতে আমরা যথেষ্ট সন্তুষ্ট। যে কারণে তাকে অব্যাহতি দেয়া হলো, তার আগ পর্যন্ত তিনি কিন্তু নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছেন। কিন্তু এ ব্যাপারে আমি জানি না তার সেন্স অব জাজমেন্ট কেন কাজ করেনি! আইনমন্ত্রী বলেন, রেকর্ডকৃত কথোপকথনে তার (তুরিন আফরোজ) দিক থেকে যেসব কথা বলা হয়েছে এবং যেটা তার গলা বলে প্রমাণিত হয়েছে, এটা উনি কেন করলেন সেটা আমরা বুঝতে পারছি না। তবে এটুকু বলবো এটা দুঃখজনক। কাজেই আমি যে খুব খুশি হয়ে করেছি (অপসারণ) তা না। তিনি আরো বলেন, তাকে অব্যাহতি দেওয়াটা আরও জরুরি হয়ে পড়ে, কারণ যে মামলাটা নিয়ে কথা হয়েছে, সেই মামলায় কিন্তু এখন চার্জ গঠন হয়ে গেছে। সে জন্যই এ ব্যাপারটার একটা নিষ্পত্তি দরকার ছিল। সেজন্যই তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তুরিন আফরোজকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, তার সাথে কথা হয়েছে। এবং যে প্রমাণাদি রয়েছে, সেটাকে যদি তিনি চ্যালেঞ্জ করতে চান করতে পারবেন, ওপেন রয়েছে। কিন্তু টেপ করা কথাবার্তা আমরা পেয়েছি এবং তার বিরুদ্ধে নালিশ পেয়েছি। এসব বিষয়ে সার্বিকভাবে আলোচনার পরই তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।তিনি আরো বলেন, আমরা আশা করি যে আইনজীবীরা এ কাজে নিয়োজিত আছেন, তারা তাদের দায়িত্ব সম্বন্ধে অত্যন্ত সচেতন। তাদের কোনো নতুন মেসেজ দিতে হবে এটা আমি মনে করি না। তারা যথেষ্ঠ নিষ্ঠার সাথে কাজ করছেন বলে আমার বিশ্বাস। এখানে যদি শৃঙ্খলার বাইরে কোনো কাজ করা হয়, যেটা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কাজকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে বা তার মান ক্ষুণ্ন করতে পারে, তাহলে আমরা তো ব্যবস্থা নেবই।ওদিকে, অপসারণের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম সাংবাদিকদের বলেন, তার (তুরিন) কর্মকাণ্ড রাষ্ট্রবিরোধিতার শামিল। কারণ এটি (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার) রাষ্ট্রের অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি বিষয়। তুরিন কেবল পেশাগত অসদাচরণ বা শৃঙ্খলা ভঙ্গই করেননি, তিনি ফৌজদারি আপরাধও করেছেন। সেজন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় তার সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করবে বলেও প্রত্যাশা করেন এই প্রসিকিউটর। জেয়াদ মালুম বলেন, প্রসিকিউশন থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পরেও তুরিন আফরোজ প্রসিকিউটরদের বরাদ্দকৃত বেতন-ভাতা গত মাস পর্যন্ত গ্রহণ করেছেন। একইভাবে সরকারি গাড়ি, গানম্যান পেয়ে আসছিলেন। প্রটেকশন প্রটোকল পেয়ে আসছিলেন এবং তার বাড়িতে হোম গার্ডও পেয়ে আসছিলেন। তার অপসারণের ফলে তাৎক্ষণিকভাবেই সব সুযোগ-সুবিধাও বাতিল হয়ে যাবে। অপসারণ প্রসঙ্গে তুরিন আফরোজের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমত আমাকে যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল, আমি একশভাগ সততার সাথে কাজ করে গেছি। জ্ঞানত আমি এমন কিছু করিনি, যাতে আইন ভঙ্গ করেছি বা কোনোভাবে আস্থা ভঙ্গ করেছি। আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থন দেয়ার সুযোগ না দিয়েই একটা সিদ্ধান্ত দিয়ে দেয়া হল। তারপরও এ সিদ্ধান্ত আমি মেনে নিচ্ছি। মেনে নিতেই হবে। তুরিন আরো বলেন, প্রসিকিউশনে আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি। এজন্য আমি গর্ববোধ করি। সম্মানের সাথে আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার একটি ইতিহাস। এই ইতিহাসের একটা অংশ আমি হয়েছি। জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ মামলা পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ। গত বছর এপ্রিলে অভিযোগ ওঠে, মামলা পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ার পর ২০১৭ সালের নভেম্বরে ওয়াহিদুল হককে ফোন করে কথা বলেন তুরিন। পরে পরিচয় গোপন করে ঢাকার একটি হোটেলে তার সঙ্গে দেখাও করেন। ওই অভিযোগ ওঠার পর প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে ওয়াহিদুল ও তুরিনের কথোপকথনের রেকর্ড ও বৈঠকের অডিওরেকর্ডসহ যাবতীয় তথ্য-প্রমাণ আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। ট্রাইব্যুনালের সব মামলা থেকে সরিয়ে দেয়া হয় তুরিনকে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও