দেশের একমাত্র নারী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ছাফিয়া

মানবজমিন প্রকাশিত: ০৬ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

ছাফিয়া খানম। পেশায় আইনজীবী। বর্তমানে তিনি রংপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। সেই সাথে মহিলা আওয়ামী লীগের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। রাজনৈতিক জীবনে অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে নব্বই দশকে নিজ উদ্যোগে গঠন করেন রংপুর মহিলা আওয়ামী লীগ। তার পরিশ্রমের সফলতা হিসেবে কর্মীরা তাকে দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি করেন। তার এই রাজনৈতিক জীবনের ত্যাগ যায়নি বৃথা। মূল্যায়ন হিসেবে পেয়েছেন আওয়ামী লীগ নেত্রী বঙ্গকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে রংপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের মনোনয়ন। অ্যাড. ছাফিয়া খানম তিনি একমাত্র দেশের নারী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। তার ও দলের অভিমত তিনি কর্মজীবনে সর্বোচ্চ পেয়েছেন। এ সফল নারীর নেপথ্যে রয়েছে জীবনের করুণ কাহিনী। রাজশাহী জেলার লালপুর থানার প্রমত্তা পদ্মা নদীর তীরে অজপাড়া গায়ে একটি রক্ষণশীল পরিবারে জন্ম ছাফিয়া খানমের। এক ভাই, দু’বোনের মধ্যে তিনি ছোট। চার বছর বয়সেই তার পিতা ইন্তেকাল করেন। অভিভাবকহীন সংসারে মা-দু’কন্যাকে নিয়ে বিপাকে পড়েন। এ সময় তার দুঃসম্পর্কের চাচার সহযোগিতায় ছাফিয়া লেখাপড়া শুরু করেন। এরই মধ্যে পদ্মার ভাঙ্গনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিলীন হয়ে গেলে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। বাল্য বয়সেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়। ঘর-সংসার বিষয় বুঝে উঠার আগেই তিনি কন্যা সন্তানের মা হন। সন্তানের বয়স ৯ মাস হতেই ছাফিয়া খানমের স্বামী ইন্তেকাল করেন। অসময়ে ১৬ বছরেই স্বামী হারা হওয়ায় শ্বশুরবাড়ি থেকে তাকে তাড়িয়ে দিলে আবার তিনি মায়ের কাছে ফিরে আসেন। ছাফিয়া খানম। সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। চোখে দেখেন অন্ধকার। এ সময় তার সাহায্যার্থে এগিয়ে আসেন বান্ধবী খালেদা খানম। বান্ধবী ছাফিয়াকে ষষ্ঠ শ্রেণির বই-পুস্তক দিয়ে স্কুলে ভর্তি করে দেয় এবং লেখাপড়ার খরচ ও উৎসাহ জোগায়। কিন্তু বাদ সাধে চাচাসহ অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনরা। তারা সাফ জানিয়ে দেন বিধবা মেয়ের লেখাপড়া হবে না। নানাজন নানান কথা বলবে এটা মোটেই শোভনীয় নয়। তিনি জেদ ধরেন লেখাপড়া করবেন। এতে স্বজনদের কাছ থেকে তিনি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। শুরু হয় নতুন জীবনযুদ্ধ। সীমাহীন বাধা-বিপত্তি, দুঃখ কষ্ট, আর্থিক অনটন সত্ত্বেও চলার এক পর্যায়ে ১৯৭৩ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেন। চাকরি জোগার করে কন্যার ভরণ-পোষণসহ লেখাপড়াও চালু রাখেন। চাকরি অবস্থায় এইচএসসি পাস করার পর ১৮ মাসের কোর্স পরিবার কল্যান-পরিদর্শিকা প্রশিক্ষণ নিয়ে লালপুর থানায় গোপালপুরে সরকার চাকরিতে যোগ দেন এবং বিএ’তে ভর্তি হন। এরই মধ্যে মেয়ে কন্যা বড় হয়ে উঠলে তিনি ভাইয়ের স্মরণাপন্ন হয়ে রংপুরে চলে আসেন। রংপুরে আসার পর বিএ, এমএ এবং এলএলবি পাশ করে আশির দশকে অ্যাডভোকেট হিসেবে এনরোলমেন্ট করার পর রংপুর আইন কলেজের প্রিন্সিপাল সিনিয়র অ্যাড. মাঃ নুরুল হকের জুনিয়র হয়ে কয়েক বছর কোর্টে প্রাকটিস করেন। তার একমাত্র কন্যার লেখাপড়ার কারণে তিনি সময় কুলিয়ে উঠতে না পারায় প্রাকটিস ছেড়ে একটি এনজিওতে চাকরি নেন। চাকরির পাশাপাশি পত্রিকায় লেখালেখি করেন। তিনি গবেষণা পরিষদের সভাপতি প্রফেসর সুফী মোতাহার হোসেনের মদতে গবেষণা পরিষদ কমিটির সহ-সভাপতি পদ লাভ করেন। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক পদবী পান। নব্বই দশকে সকল মহিলাকে এক করে গড়ে তোলেন মহিলা আওয়ামী লীগ। ১৯৯৩ সালে কাউন্সিলের মাধ্যমে সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত হন। এ পদে টানা দুই যুগ পার করে রংপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রস্তুতি নিয়ে দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার কাছে মনোনয়ন চান। রংপুরের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্য থেকে প্রধানমন্ত্রী ছাফিয়া খানমকে বেছে নেন। তিনি  অপর প্রার্থীর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হয়ে ২০১৭ সালের ২২শে জানুয়ারী রংপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দায়িত্ব পালনকালে তিনি রংপুর জেলা পরিষদের পীরগঞ্জ খালাশপীরের দখল হওয়া ৬০ শতক জমি ও বদরগঞ্জের জমি উদ্ধারসহ দোকান মার্কেট নির্মাণ করে আয়ের পথ বের করেন। পাশাপাশি রংপুর নগরের প্রাণকেন্দ্রে জেলা পরিষদ সুপার মার্কেটের পার্শ্বে তিন একর জমির উপর ১৮ তলা বিশিষ্ট অত্যাধুনিক রংপুর সিটি সেন্টার মার্কেট নির্মাণের কাজ এগিয়ে নেন। এছাড়া মসজিদ, মন্দির, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কবরস্থান উন্নয়নসহ নিয়ম-নীতির মধ্য দিয়ে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। অ্যাড. ছাফিয়া খানম মানবজমিনকে বলেন, জীবন চলার পথে তিনি যেমন অনেকের কাছ থেকে অবজ্ঞা-অবহেলা পেয়েছেন, তেমনভাবে অনেকের সহযোগিতা ও ভালবাসা পেয়েছেন। কোন দিন অন্যায়ের সাথে আপস করেনি। তিনি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালনে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হুদাসহ সকলের আন্তরিক সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি মনে করেন চাওয়া-পাওয়ার আর কিছু নেই। জীবনের শেষ প্রান্তে বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা তাকে যে সম্মান দিয়েছে তা নিয়েই মরতে চান।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও