ভেস্তে গেছে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করণ প্রচেষ্টা

মানবজমিন প্রকাশিত: ১৯ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

ভেস্তে গেছে বৃহত্তর চলনবিল অঞ্চলে স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতিতে শুঁটকি মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রচেষ্টা। শুঁটকি তৈরি কারিগররা আবারো সেই অস্বাস্থ্যকর ও সনাতন পদ্ধতিতেই শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করছে। ফলে জনস্বাস্থ্য হুমকিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। দাতা সংস্থার অর্থে পরিচালিত প্রকল্পটি একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বাস্তবায়িত হওয়ার কারণে, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হতে না হতেই চাতাল মালিকরা ফিরে গেছেন সনাতন পদ্ধতিতে। যার ফলে চলনবিল অঞ্চলে আহরিত মিঠাপানির শুঁটকি দেশে ও দেশের বাইরে ব্যাপক চাহিদা থাকলেও এর উপর এখন নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট শুঁটকি ব্যবসায়ীরা। সরজমিন চলনবিলের বিভিন্ন উপজেলার শুঁটকি চাতালে ঘুরে এ তথ্যের সত্যতা মিলেছে। দেশের মৎস্যভাণ্ডার খ্যাত চলনবিল। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্র মতে, চলনবিলে প্রায় এক হাজার ৭৫৭ হেক্টর আয়তনের ৩৯টি বিল, চার হাজার ২৮৬ হেক্টর আয়তন বিশিষ্ট ১৬টি নদী এবং ১২০ বর্গকিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট ২২ খাল রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি বিলে প্রবেশ করে সৃষ্টি করে বিশাল জলাধার। প্রজনন কাল থেকে শুরু করে শুষ্ক মৌসুম পর্যন্ত মিঠা পানির মাছের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্রে পরিণত হয় চলনবিল। এ সময় শত শত টন বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরা পড়ে জেলেদের জালে। এ বিলের মাছ দিয়ে দেশের মিঠা পানির মাছের বড় একটি অংশের চাহিদা পূরণ করা হয়ে থাকে। চলনবিলের মাছ স্বাদযুক্ত হওয়ায় এখানকার বিভিন্ন প্রজাতির মাছের শুঁটকিও দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি হয়ে থাকে।শুঁটকি ব্যবসায়ীদের দেয়া তথ্যমতে, চলনবিলের মাছের শুঁটকি পার্শ্ববর্তী ভারত, আমেরিকা, মালেশিয়া, কাতার, সৌদি আরব, বাহারাইন ও দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়ে থাকে।রাজশাহী মৎস্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. শাহীনুর রহমান জানান, বৃহত্তর চলনবিল ও তার প্লাবনভূমিতে প্রতি বছর গড়ে চারশ’ থেকে সাড়ে চারশ’ টন শুঁটকি উৎপাদন হয়ে থাকে। যার আর্থিক মূল্য প্রায় ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকা।প্রাচীনকাল থেকেই চলনবিল অঞ্চলের জেলেরা সনাতন পদ্ধতিতে মাছের শুঁটকি করে আসছেন। এ জন্য তারা উঁচু বাঁশের মাচান তৈরি করে, কাঁচা মাছ রোদে শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করে থাকেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মাছের পচন রোধে এবং পোকা ও মাছি মুক্ত রাখতে অনেক সময় কীটনাশকসহ রাসায়নিকজাত দ্রব্য মিশিয়ে শুঁটকি তৈরির ফলে এলাকায় স্বাস্থ্য ঝুঁকির আশঙ্কায় শুঁটকির বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।এ লক্ষে আধুনিক ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে শুঁটকি তৈরির জন্য বিগত ২০১৪ সালে চলনবিলের চাতাল মালিকদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি একটি প্রকল্প হাতে নেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন প্রকল্প (হেকেপ)। ২০১৬ সালে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার মহিষলুটিতে প্রকল্পটি পরিদর্শনে আসেন মালেশিয়ার কেব্যাংস্যাং ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড. মু. ইউসুফ মাসকাত, ভারতে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সুশান্ত কুমার চক্রবর্তীসহ বাংলাদেশের মৎস্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তারা প্রকল্পটি দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন। পরিচ্ছন্ন পরিবেশে শুঁটকি উৎপাদন করায় এর চাহিদাও বৃদ্ধি পায় বলে জানান শুঁটকি ব্যবসায়ীরা। কিন্তু ২০১৬ সালেই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়া মাত্রই চাতাল মালিকরা ফিরে যায় তাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে।এ নিয়ে কথা হয় চলনবিল অধ্যুষিত নওগাঁর আত্রাই উপজেলার আসামগঞ্জ, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার মহিষলুটি বাজার, উল্লাপাড়ার মোহনপুর বাজার, পাবনার চাটমোহর উপজেলার বিলমারি, নাটোরের সিংড়া উপজেলার নিংগুইর এলাকার শুটকির চাতাল মালিকদের সঙ্গে।মহিষলুটি শুঁটকি আড়তের মালিক আব্দুস সালাম জানান, দেশে-বিদেশে শুঁটকির চাহিদা থাকলেও সরকার এ ব্যাপারে উদাসীন। শুঁটকি উৎপাদনকারীদের সরকারি সহায়তা, যেমন: স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণ, প্রশিক্ষণ, এমনকি প্রণোদনা কোনোটিই না থাকায় শুঁটকির ক্ষেত্রে এমন বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।তিনি ‘হেকেপ’ প্রকল্প প্রসঙ্গে বলেন, স্যাররা এসে আমাদের সহায়তা দিয়েছিলেন বলে আমরা আধুনিক পদ্ধতিতে শুঁটকি তৈরি করেছি। কিন্তু এখন কোনো প্রকার সহায়তা না মেলায় আমরা নিজস্ব পদ্ধতিতেই শুঁটকি তৈরি করছি।সিংড়া উপজেলার নিংগুইর বাজারে কথা হয় সৈয়দপুর থেকে আসা শুঁটকি ব্যবসায়ী রুস্তম আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, এখন তো ডিজিটাল যুগ। সব খবরই সবখানে পাওয়া যায়। বেশি দাম দিয়ে হলেও ক্রেতারা ভাল শুটকি কিনতে চায়। কিন্তু ভাল ও পরিচ্ছন্ন শুঁটকি উৎপাদনে যে খরচ পড়ে, তার চেয়ে অনেক কম খরচ পরে চাতাল মালিকদের নিজস্ব পদ্ধতিতে। এ কারণে তারা নিজস্ব পদ্ধতিতে শুঁটকি উৎপাদনে তারা বেশি আগ্রহী হলেও বাজারে এর খারাপ প্রভাব পড়ছে। হেকেপ প্রকল্পের তৎকালীন উপ-প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. ফৌজিয়া এবিদ ফ্লোরার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, চলনবিলের শুঁটকি মানসম্মত ও আধুনিক পদ্ধতিতে তৈরির জন্য হেকেপ ২০১৪ সালে একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নেয়। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৬ সালে। আসলে এ বিষয়ে সবার আগে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। উৎপাদনকারীদের ঋণ, প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে হবে। সেই সঙ্গে স্থানীয় বাজার তৈরি ও আধুনিক পদ্ধতিতে উৎপাদন করা গেলে দেশি বাজারের পাশাপাশি বিদেশেও এর চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। সনাতন পদ্ধতিতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে শুঁটকি তৈরির চিত্র গোটা চলনবিল অঞ্চলের। এ কারণে তারা সরকারি সহায়তার পাশাপাশি স্থানীয় বাজার সৃষ্টি ও সংরক্ষণাগার নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও