তাদের মুখে রাঘব বোয়ালের নাম
যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে আসছে ঢাকার ক্যাসিনো সম্রাজ্যের নানা চমকপ্রদ কাহিনী। শুক্রবার র্যাবের হাতে আটক হয় টেন্ডার মোঘল জি এম শামীম । গ্রেপ্তারের পর তাদের মুখ থেকেই বেরিয়ে আসছে এসব চক্রের সঙ্গে জড়িত রাঘব বোয়ালদের নাম। দুইজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গিয়ে রাঘব বোয়ালদের নাম জানতে পেরেছে র্যাব। এখন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তুতি চলছে। ক্যাসিনো সম্রাট খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার নেতৃত্বাধীন ক্যাসিনোর মাসোহারা চলে যেতো বড় ভাইদের পকেটে। ওইসব বড় নেতারা থানা পুলিশকে ম্যানেজ করার কারণে খালেদ তার ক্যাসিনো নির্বিঘ্ন চালিয়েছেন। ক্যাসিনোর মাসোহারার টাকা চলে যেতে পুলিশের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তার পকেটেও। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে খালেদ র্যাবকে জানিয়েছেন, তার একক ক্ষমতায় ক্যাসিনো তিনি চালাতেন না। শীর্ষ অনেক বড় ভাইদের পরামর্শ ও সহযোগিতায় সহযোগিতায় ক্যাসিনো চলতো। সেই ক্যাসিনোগুলো রংমহলে পরিণত করেছিলেন তিনি। র্যাব ওইসব বড় ভাইদের নজরদারিতে রেখেছে। তারা যাতে দেশ ত্যাগ করতে না পারে ওই ব্যাপারে র্যাবের যোগাযোগ বিভাগ ইমিগ্রেশন পুলিশদের সঙ্গে লিঁয়াজো করছে। এদিকে জিকে বিল্ডার্স-এর চেয়ারম্যানকে আটক করে র্যাব শুক্রবার রাতে উত্তরা র্যাব-১ এর কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে র্যাবের একটি দল তাকে রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। জিজ্ঞাসাবাদে উত্থান কীভাবে তার বিস্তারিত শামীম নিজেই বর্ণনা দিয়েছেন। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারি তার কব্জায় কীভাবে যেতো তা তিনি র্যাব সদস্যদের জানিয়েছেন। সরকারি ও বিভিন্ন বেসরকারি উচ্চ পর্যায়ের ঠিকাদারি পাওয়ার ক্ষেত্রে যুবলীগের সিনিয়র নেতাদের হাত রয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি কাজ পাইয়ে দেয়ার নামে মোটা অংকের কমিশন দিতেন ওইসব নেতাদের। এ বিষয়ে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার মানবজমিনকে জানান, খালেদ ও শামীমকে র্যাব প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব তদন্ত কার্যক্রম আরও বাড়িয়েছে। যদি কারও নামে অভিযোগ আসে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোন নিরীহ ব্যক্তি হয়রানির শিকার যাতে না হয় সেইদিকেও লক্ষ্য রাখছে র্যাব। তিনি আরও জানান, দুর্নীতিবাজ, টেন্ডারবাজ, সস্ত্রাসী ও জঙ্গির বিরুদ্ধে অভিযান চলমান থাকবে। যতোই রথি-মহারথি হোক কোন ছাড় দেয়া হবে না। তিনি আরও জানান, যাদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ আসবে তাদের বিরুদ্ধেই অভিযান চলবে। র্যাবের গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ক্যাসিনো পরিচালনাকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এবং টেন্ডারবাজদের কিছু তথ্য তাদের কাছে আগে থেকেই ছিল। কিন্তু, ওইসব মহারথিদের হাত অনেক লম্বা হওয়ার কারণে তাদের আটক করা সম্ভব হয়নি। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিগন্যাল পাওয়া পর তাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। প্রথম অভিযান শুরু হয় ক্যাসিনো গুলোতে। র্যাব সূত্রে জানা গেছে, খালেদকে গ্রেপ্তারের পর র্যাব জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। কিন্তু, দলগত ক্ষমতার দম্ভে ও বড় ভাইদের তার ওপর আশীর্বাদ থাকার কারণে তিনি প্রথমে কোন তথ্যই দিতে চাচ্ছিলেন না। পরে র্যাবের সদস্যরা তার কাছ থেকে কৌশলে তথ্য আদায় করেন। সূত্র জানায়, ক্যাসিনোর ব্যাপারে তার কোন ধারণা ছিল না। যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের প্রথম সাড়ির এক শীর্ষ নেতার সঙ্গে সখ্য হওয়ার পর তিনি ঢাকাসহ বিভিন্নস্থানে ক্যাসিনো চালাতে থাকেন। খালেদের আগে ওইসব ক্যাসিনো দেখাশোনা করতেন যুবলীগের মতিঝিল থানার এক নেতা। কিন্তু, যুবলীগের ওই শীর্ষ নেতার সঙ্গে তার মনোমালিন্য হওয়ার কারণে খালেদ দেখাশোনা করতে থাকেন। র্যাব মতিঝিল জোনের ওই নেতাকে খুঁজছে। ঢাকা ছাড়াও গাজীপুরের বোর্ডঘর এলাকায় তার আরও ৪ টি ক্যাসিনো আছে বলে র্যাব জানতে পেরেছে। তাকে র্যাবের সদস্যরা গ্রেপ্তারের পরেই ওই ৪ টি ক্যাসিনো বন্ধ করে পালিয়েছে অন্যরা। র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে খালেদ জানিয়েছে, রাজধানীতে যে কটি আধুনিক ক্যাসিনো ছিল সেগুলোর বেশিরভাগই অপারেটিং সিস্টেম দেখভালের দায়িত্বে ছিল সে। আর তার ক্যাসিনো ব্যবসা চালাতে সহযোগিতা করতেন, ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) যুবলীগের এক শীর্ষ নেতা। সূত্র জানায়, খালেদ র্যাবকে জানিয়েছে যে, ক্যাসিনো চালানো হতো শুধু এক বা দুইজন নেতার শেল্টারে। এর সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবকলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের অনেকে আছেন। এছাড়াও মূল দলের এক উচ্চ পর্যায়ের নেতা রয়েছেন। গত জুলাই মাসে চাঁদার টাকার ভাগভাটোয়া নিয়ে কাকরাইলে এক নেতার ব্যক্তিগত অফিসে একটি বৈঠক হয়। সেখানে উতপ্ত বাক্য বিনিময় ঘটে। সেখানে মতিঝিল জোনের পুলিশের এক উর্দ্ধতন কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন বলে সূত্র দাবি করেছে।