ছবি সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস : না শুকাতে ঘাম দিয়ে দাও দাম

মিরাজ রহমান
সাংবাদিক ও লেখক
প্রকাশিত: ০১ মে ২০১৪, ০০:১১
আপডেট: ০১ মে ২০১৪, ০০:১১

উত্তর থেকে দক্ষিণ ও পশ্চিম থেকে পূর্ব সীমান্ত পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী আজ প্রযুক্তির জয়গান ধ্বনিত। চোখধাঁধানো স্থাপত্যকলা, কারুকার্যখচিত শিল্পের ছোঁয়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষকাল অতিক্রম করছি বর্তমানে আমরা । বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির স্বর্ণযুগ বলা হয় বর্তমান সময়কে । প্রভূত এ অর্জন ও উৎকর্ষের নেপথ্যে কিছু ত্যাগ রয়েছে। রয়েছে কিছু বিসর্জন। শ্রমশিল্পের ভাষায়, কোনো বস্তু ব্যবহারযোগ্য হয়ে ওঠা কিংবা কোনো ধরনের উৎকর্ষ আমাদের জন্য উপকারী তখনই হয়, যখন তা কোনো শ্রমের বিসর্জনে অর্জিত বা নির্মিত হয়। মোটকথা, বস্তু ব্যবহারযোগ্য কিংবা উপকারী হয়ে ওঠার নেপথ্যে শ্রমই প্রথম ও প্রধান উপাদান। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাথার ঘাম পায়ে ফেলে শ্রমিকরা কতভাবে যে এই বিশ্বকে সচল রেখেছেন, সমুন্নত রেখেছেন উন্নয়নের এই ধারাকে, তার সঠিক পরিসংখ্যান অসম্ভব। শ্রমজীবী এই সমাজটি না থাকলে অচল হয়ে যেত এসব উৎকর্ষ। থেমে যেত আমাদের জীবনধারা। মুহূর্তের মাঝে মাটিতে মিশে যেত- গগনচুম্বী এতো সব গৌরব-অহঙ্কার। কিন্তু আফসোস ও পরিতাপের বিষয় হলো, সঠিকভাবে হিসাব নিলে দেখা যাবে যে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি বঞ্চনার শিকার হয় এই শ্রমিক শ্রেণী। সবচেয়ে বেশি মূল্যহীন ও মানহীন জীবন যাপন করেন পৃথিবীর শ্রমজীবী মানুষ। শ্রমজীবী মানুষ বা শ্রমিকদের শোষণ ও নিপীড়নের এই সমস্যা মামুলি কিংবা এক-দুদিনে সৃষ্ট কোনো সমস্যা নয়, বহুকাল ধরে চলে আসছে এই অত্যাচার, জারি রয়েছে এই বঞ্চনা। সভ্যতাকে পুঁজি করে যতই দিন যাচ্ছে, পৃথিবী যত বেশি হচ্ছে প্রযুক্তিময়- ততই বেড়ে চলছে শ্রমজীবী মানুষের এই বঞ্চনা, বৃদ্ধি পাচ্ছে এই অত্যাচার। দিন দিন বেড়েই চলছে নিগৃহীত শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যা। মে দিবসের ইতিহাস ১৮৮৬ সালের ১লা মে আমেরিকার মেহনতী শ্রমিকশ্রেণী দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের দাবীসহ আরো কয়েকটি ন্যায্য দাবী ও অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে জীবন বিসর্জন দিয়ে পৃথিবীর ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব শ্রমিক আন্দোলনের সূচনা করেছিল। ১লা মে’র ঐ ধর্মঘট দিবসের আগে যুক্তরাষ্ট্র বা বিশ্বের কোথাও শ্রমনীতি বা শ্রমিক আইন ছিল না। শ্রমিকদের মানবিক ও অর্থনৈতিক অধিকার বলতেও কিছু ছিল না। তারা ছিল মালিকদের দাস মাত্র। তাদের কাজের কোন নির্দিষ্ট সময়সীমা ছিল না। ছিল না সাপ্তাহিক কোন ছুটিও। ছিল না চাকুরীর স্থায়ীত্ব ও ন্যায়সঙ্গত মজুরীর নিশ্চয়তা। মালিকরা তাদের ইচ্ছামত শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করিয়ে নিত। এমনকি দৈনিক ১৮-২০ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করতেও বাধ্য করত শ্রমিকদের। এ অন্যায়, বঞ্চনা ও জুলুমের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিকরা পর্যায়ক্রমে তীর্ব আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। এ আন্দোলনের অংশ হিসাবে আমেরিকান ফেডারেশন অব লেবার -এর ১৮৮৫ সালের সম্মেলনের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের দাবীতে ১৮৮৬ সালের ১লা মে আমেরিকা ও কানাডার প্রায় তিন লক্ষাধিক শ্রমিক শিকাগোর হে মার্কেটে ঢালাই শ্রমিক, তরুণ নেতা এইচ সিলভিসের নেতৃত্বে এক বিক্ষোভ সমাবেশের মাধ্যমে সর্বপ্রথম সর্বাত্মক শ্রমিক ধর্মঘট পালন করে। শ্রমিকদের সমাবেশ চলাকালে মালিকদের স্বার্থ রক্ষাকারী পুলিশ ও কতিপয় ভাড়াটিয়া গুন্ডা সম্পূর্ণ বিনা উস্কানিতে অতর্কিতভাবে গুলী চালিয়ে ৬ জন শ্রমিককে নৃশংসভাবে হত্যা ও শতাধিক শ্রমিককে আহত করে। কিন্তু এতেও শ্রমিকরা দমে যায়নি। শ্রমিকদের ইস্পাতকঠিন ঐ সফল ধর্মঘটের কারণে কোন কোন মালিক ৮ ঘণ্টা কর্ম সময়ের দাবী মেনে নিতে বাধ্য হয়। ফলে শ্রমিকরা আরো উৎসাহী ও আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে ওঠে এবং সর্বস্তরে ৮ ঘণ্টা কর্ম সময়ের দাবী প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ২রা মে রবিবারের সাপ্তাহিক বন্ধের দিনের পর ৩ তারিখেও ধর্মঘট অব্যাহত রাখে। নৃশংস ঐ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে আয়োজিত ৪ঠা মে শিকাগো শহরের হে মার্কেটের বিশাল শ্রমিক সমাবেশে আবারো মালিকগোষ্ঠীর গুন্ডা ও পুলিশ বাহিনী বেপরোয়াভাবে গুলী বর্ষণ করে। এতে ৪ জন শ্রমিক নিহত ও বিপুল সংখ্যক আহত হয়। রক্তে রঞ্জিত হয় হে মার্কেট চত্বর। গ্রেফতার করা হয় শ্রমিক নেতা স্পাইজ ও ফিলডেনকে। ঘটনার এখানেই শেষ নয়। এই নৃশংস হত্যাকান্ডের পর শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে রীতিমত চিরুনী অভিযান চালিয়ে শিকাগো শহর ও এর আশপাশের এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারী ফিশার, লুইস, জর্জ এঞ্জেল, মাইকেল স্কোয়ার ও নীবেসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ শ্রমিক নেতাকে। পরবর্তীতে শ্রমিকদের এই ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনের বিরোধিতাকারী মালিকপক্ষের ব্যক্তিদের সমন্বয়ে জুরি বোর্ড গঠন করে ১৮৮৬ সালের ২১ জুন শুরু করা হয় বিচারের নামে প্রহসন। একতরফা বিচারের মাধ্যমে ১৮৮৬ সালের ৯ অক্টোবর ঘোষিত হয় বিচারের রায়। রায়ে বিশ্বজনমতকে উপেক্ষা করে শ্রমিক নেতা পার্সন্স, ফিলডেন, স্পাইজ, লুইস, স্কোয়ার, এঞ্জেল ও ফিশারের বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ প্রদান করা হয় এবং ১৮৮৭ সালের ১১ নভেম্বর সে আদেশ কার্যকর করা হয়। শ্রমিক নেতা ও কর্মী হত্যার এ দিবসটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে প্রতিবছর ১লা মে শ্রমিক হত্যা দিবস ও আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস হিসাবে পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। দৈনিক ৮ ঘণ্টা কার্য সময় ও সপ্তাহে এক দিন সাধারণ ছুটি প্রদানের ব্যবস্থা করে প্রথম শ্রম আইন প্রণীত হয়। অন্যদিকে নারকীয় এ হত্যাযজ্ঞ গোটা বিশ্বের শ্রমিকদের অধিকারে এনে দেয় নতুন গতি। শিকাগো শহরে সৃষ্ট এ আন্দোলন ক্রমশ দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বময়। পৃথিবীর সকল শ্রমজীবী মানুষ এ আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে দেয় দুনিয়ার মজদুর এক হও শ্লোগানটি। ১২৫ বছর আগে ঘটে যাওয়া সে ঘটনাটির কথা এখন প্রতিবছর বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্মরণ করা হয়ে থাকে বিশ্ব শ্রমিক দিবস বা মে দিবস হিসাবে। [সূত্র : bn.wikipedia.org/wiki/আন্তর্জাতিক_শ্রমিক_দিবস] ইসলামের দৃষ্টিতে শ্রমিকের অধিকার বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে শ্রমিক দিবস। গ্রহণ করা হচ্ছে নানা ধরনের কর্মসূচি। আন্দোলনে আন্দোলনে মুখরিত হচ্ছে দেশ-বিদেশের আকাশ-বাতাস। কিন্তু আসল কাজ কিছুই হচ্ছে না। যিনি কিংবা যে সংস্থার উদ্যোগে আন্দোলন হচ্ছে, লোকচক্ষুর আড়ালে তিনি ও সেই সংস্থাই শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে, সভা-সেমিনারে বড় বড় বুলি আওড়ানো এবং বাস্তবে তা প্রয়োগ করা এক কথা নয়। বিশ্বব্যাপী পালিত এই শ্রমিক দিবসের সার্থকতা অর্জন করতে হলে আমাদের মহানবি (সা.) প্রদত্ত আদর্শের কাছে ফিরে যেতে হবে। তাঁর নির্দেশিত বিধি-বিধানকে বাস্তবে প্রয়োগ করার মাধ্যমে শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব। কারণ শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে তিনি শুধু কথাই বলেননি, বাস্তবেও প্রয়োগ করেছেন তাঁর কথা। তিনি নিজেও কাজ করেছেন শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ কিংবা সভ্যশালীন কোনো সমাজে নয়, বর্বর একটি যুগে শ্রমিক অধিকার বাস্তবায়নের সোনালি ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন মহানবি (সা.) । চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন শ্রমিক অধিকার আদায়ের চিত্র। বাতলে দিয়েছেন এই আন্দোলনের পথ ও প্রক্রিয়া। কাজে-কর্মে, চলায়-বলায় নিজের সর্বস্ব দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন শ্রমজীবী মানুষের অধিকার। শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য প্রাপ্য না দেওয়ার ভয়াবহতার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন, 'ভয়াবহ কিয়ামতের দিন কিছু লোক আমার মমতাময়ী আশ্রয় থেকে বঞ্চিত থাকবে।' সাহাবা আজমাইনরা জিজ্ঞেস করলেন, কারা সেই হতভাগা? নবিজি (সা.) বললেন, 'নির্ধারিত পারিশ্রমিক দেওয়ার চুক্তিতে শ্রমিক নিয়োগ করার পর কাজ শেষে যারা পূর্ণ পারিশ্রমিক প্রদান করে না।' (আল-হাদিস) শ্রমজীবী মানুষের অধিকারের ব্যাপারে পূর্ণ সচেতন ছিলেন নবিজি (সা.)। শ্রমিকদের সম্পর্কে তিনি বলেছেন, 'তোমার অধীনস্থদের তোমার আপন ছেলেসন্তানের মতো মনে করো এবং তোমরা যা খাও, যা পরিধান করো, তাদেরও তা খেতে ও পরিধান করতে দাও।' (আল-হাদিস) শ্রমিকদের প্রতি ভালোবাসা কিংবা কেবল তাদের অধিকার আদায়ের ব্যাপারেই নয়, শ্রমিকদের কাজ নির্ধারণ ও পারিশ্রমিক প্রদানের নীতিও বাতলে দিয়েছেন তিনি। নবিজি (সা.) বলেছেন, 'শক্তি-সামর্থ্যের অতিরিক্ত কোনো কাজ শ্রমিকদের ওপর চাপিয়ে দিয়ো না। শক্তি-সামর্থ্যের অতিরিক্ত কোনো কাজ দিলে সে ক্ষেত্রে সাহায্য করো তাদের।' (আল-হাদিস) তিনি আরো বলেছেন, 'শ্রমিকদের গায়ের ঘাম শুকানোর আগেই তাদের মজুরি প্রদান করো।' (ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/২৯৮৭) মানবতার দিশারি হজরত মুহাম্মদ (সা.), যাঁকে সৃষ্টি করা না হলে কিছুই সৃষ্টি করা হতো না। মহিমান্বিত ব্যক্তিত্বের অধিকারী নবিজি (সা.) নিজে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছেন। প্রতি পাত্র পানি উত্তোলনের মজুরি হিসেবে একটি করে খেজুর গ্রহণ করেছেন আল্লাহর নবি। কোনো ধরনের কায়িক শ্রমকে খাটো করে দেখেননি তিনি। নিজের কাজ নিজে করার ব্যাপারে সর্বদা উৎসাহিত করতেন সাহাবাদের। শ্রমের মর্যাদা দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন, 'কোনো ধরনের শ্রমকে তাচ্ছিল্য করো না তোমরা। শ্রম আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম।(আল-হাদিস) বৈধতার মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ যেকোনো পেশা বা কাজকে স্বাগত জানিয়েছে ইসলাম। ইসলামে শ্রম ও শ্রমিকের মর্যাদা শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার ধর্ম ইসলামে শ্রমিকের মর্যাদা ও অধিকারের কথা বিধৃত হয়েছে। শ্রমিকদের প্রতি সুবিচারের নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। ইসলাম শ্রমের প্রতি যেমন মানুষকে উৎসাহিত করেছে, তেমনি শ্রমিকের সম্মান ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার পূর্ণ প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নবি মুহাম্মাদ (সা.) শ্রমিক ও শ্রমজীবী মানুষকে অত্যন্ত সম্মানের দৃষ্টিতে দেখতেন। কারণ যারা মানুষের সুখের জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলে নিজেদেরকে তিলে তিলে নিঃশেষ করে দেয়, তারাতো মহান আল্লাহর কাছেও মর্যাদার অধিকারী। শ্রমের মর্যাদা বুঝাতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, কারো জন্য স্বহস্তের উপার্জন অপেক্ষা উত্তম আহার্য আর নেই। আর আল্লাহর নবি দাঊদ (আ.) স্বহস্তে জীবিকা নির্বাহ করতেন। (বুখারি, মিশকাত হা/২৭৫৯) হজরত আবূ হুরায়রা (রা.) বলেন, যেই সত্তার হাতে আবূ হুরায়রার প্রাণ তার কসম! যদি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ, হজ ও আমার মায়ের প্রতি সদ্ব্যবহারের ব্যাপারগুলো না থাকত, তাহলে আমি শ্রমিক হিসাবে মৃত্যুবরণ করতে পছন্দ করতাম। (বুখারি হা/২৫৮৪; মুসলিম হা/৪৪১০) ইসলামে শাসক-শাসিতের দায়িত্ব ও অধিকার শাসক কারা? শাসক তো তারাই, যারা মুসলিম জনগণের যাবতীয় কাজের দায়িত্বশীল বা জিম্মাদার। যেমন সাধারণভাবে রাষ্ট্র শাসন ব্যবস্থায় প্রধান ব্যক্তি অথবা বিশেষ করে কোনো একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল কোনো ব্যক্তি। উভয়ই মুসলিমদের অভিভাবক বলে বিবেচিত। দেশের নাগরিক বা প্রজা সাধারণের ওপর এদের যেমন অধিকার রয়েছে, তাদের ওপরও প্রজা সাধারণের অধিকার রয়েছে। শাসক বা রাষ্ট্র পরিচালকদের ওপর প্রজা সাধারণের অধিকার এই যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে তারা রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে যে আমানত লাভ করেছেন এবং জিম্মাদারী গ্রহণ করেছেন সে মোতাবেক তারা দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের দিকে লক্ষ্য রেখে তাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করবে। আর সেটা করতে হবে মুমিনদের পথ অনুসরণের মাধ্যমেই। সে পথের মানেই হচ্ছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কর্মপদ্ধতি। কারণ, এ পথেই তাদের, তাদের প্রজাবর্গ ও যারা তাদের অধিনস্থ রয়েছে তাদের জন্য সৌভাগ্য রয়েছে। প্রজাদের থেকে শাসকদের জন্য সন্তুষ্টি লাভের এটাই সর্বোত্তম মাধ্যম, এর মাধ্যমেই তাদের মধ্যকার সম্পর্ক মজবুত হয়, তারা তাদের শাসকদের নির্দেশের প্রতি আনুগত্য করে, যে আমানত তারা তাদের প্রতি ন্যস্ত করেছে সেটা সংরক্ষণে তৎপর থাকে। কেননা, যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে তাকে লোকেরাও ভয় করে চলে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে সন্তুষ্ট রাখে আল্লাহ মানুষের ব্যাপারে তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান এবং জনগণের মাধ্যমে আল্লাহ তাকে সন্তুষ্ট রাখেন। কারণ, সমস্ত মানুষের অন্তর তো আল্লাহর হাতেই নিবন্ধ তিনি যে দিকে চান, সে দিকেই তা প্রত্যাবর্তন করেন। আর মুসলিমদের জিম্মাদার তথা শাসকের অধিকার হচ্ছে এই যে, জনগণের পক্ষ থেকে তারা যে ব্যাপারে দায়িত্বশীল সে ব্যাপারে তাদের কল্যাণ কামনা করা প্রজাদের কর্তব্য। তারা কোনো ব্যাপারে গাফেল বা অন্যমনস্ক হয়ে গেলে সে ব্যাপারে তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেওয়াও প্রজা সাধারনের কর্তব্য। তারা সত্য পথ থেকে বিচ্যুত হলে তখন তাদের জন্য দোয়া করতে হবে। আর আল্লাহর আনুগত্যের খেলাফ নয় তাদের এমন সব কাজে সহযোগিতা ও সমর্থন করা প্রজাদের কর্তব্য। কেননা এরূপ সহযোগিতার মাধ্যমেই তারা তাদের ওপর ন্যাস্ত দায়িত্ব সঠিক এবং সুশৃংখলভাবে আঞ্জাম দিতে পারেন। এর বিপরীত যদি তাদের শুধু বিরুদ্ধাচরণ ও তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহই করা হয়, তা হলে সমাজে বিশৃংখলা দেখা দিবে বৈকি। আর এজন্যই আল্লাহ তাআলা তাঁর এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্যসহ সামাজিক দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গেরও আনুগত্য করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, হে ঈমানদার লোকেরা! আল্লাহর আনুগত্য করো, আরও আনুগত্য করো আল্লাহর রাসূলের। আর আনুগত্য কর সেসব লোকের যারা তোমাদের ব্যাপারে ক্ষমতাপ্রাপ্ত।’ (সূরা আন-নিসা: ৫৯) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, একজন মুসলিমের কর্তব্য হচ্ছে যতক্ষণ পর্যন্ত তার নেতা তাকে কোনো প্রকার পাপের কাজে আদেশ না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তার কথা শোনা এবং তার আনুগত্য করা- চাই তা তার কাছে ভালো লাগে কি ভালো না লাগে। তবে যখন সে কোনো অন্যায় কাজে আদেশ করবে তখন তার কথা শোনা এবং তার প্রতি আনুগত্য দেখানো যাবে না’। (মুসলিম, ১৮৩৯) আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, আমরা একদা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সফরে ছিলাম। অতঃপর আমরা একটি স্থানে উপনীত হলাম। তারপর একজন নামাজের জন্য আমাদের আহবান জানালো। আর আমরাও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গিয়ে হাজির হলাম। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন আল্লাহ্ যাকেই এ পৃথিবীতে নবিরূপে প্রেরণ করেছেন, তাকে এ দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করেছেন যে, তিনি তার উম্মাতকে ভালো কাজের নির্দেশ দিবেন এবং যা কিছু অকল্যাণকর সে ব্যাপারে তাদের ভীতি প্রদর্শণ করবেন। আর তোমাদের এই যে উম্মাত তার প্রথমাংশের জন্য যা কিছু মঙ্গলকর তা তারা লাভ করেছেন। আর তার শেষ অংশের জন্য এমন সব বালা-মুসিবত তথা অমঙ্গল আসতে থাকবে যার সাথে তোমরা কখনও পরিচিত নও। আবার কিছু বিপর্যয় ও ফেতনা আসবে, যা মানুষকে একে অপরের উপর প্রলুব্ধ করবে। আবার কিছু ফেতনা বা পরীক্ষা আসবে, তখন মুমিন ব্যক্তি বলবে, এটাতেই তো আমার ধ্বংস রয়েছে। তারপর তা কেটে যাবে। তারপর আবার কিছু ফিতনা বা পরীক্ষা আসবে, তখন মুমিন বলতে থাকবে, এটা এটা। এমতাবস্থায় যে ব্যক্তি জাহান্নামের আগুন থেকে নিষ্কৃতি এবং জান্নাতে প্রবেশ করতে চায়, তার মৃত্যু যেন এ অবস্থায় আসে যে, সে আল্লাহ এবং আখেরাতের ওপর ঈমানদার। আর সে এমন ব্যক্তির কাছে এমনভাবে আসবে যেভাবে আসা সে লোকটি পছন্দ করে। আর কোনো ব্যক্তি যদি কোনো ইমামের হাতে বাইআত তথা আনুগত্যের শপথ করে এবং অন্তর দিয়েই তাকে ইমাম হিসেবে গ্রহণ করে, তখন সে যেন তার সাধ্যানুসারে তার আনুগত্য করে। এর পর যদি অন্য কেউ তার সে ইমামের বিরুদ্ধে ঝগড়া করতে আসে তখন তোমাদের কর্তব্য হলো তার গর্দানে আঘাত করা। ( মুসলিম, ১৮৪৪) তাছাড়া কোনো এক ব্যক্তি এই বলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের জন্য যখন নেতা মনোনীত হয় তখন তারা চায় যে আমরা যেন তাদের অধিকারগুলো আদায় করি। অথচ তারা আমাদের অধিকারগুলো আদায় করতে নারাজ। এই ব্যাপারে আপনার কি অভিমত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই ব্যাপারে নিরুত্তর রইলেন অর্থাৎ অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। উক্ত লোকটি এরপর তাকে আবারও প্রশ্ন করল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তাদের কথা শোন এবং তাদের আনুগত্য কর। তারা যে দায়িত্ব গ্রহণ করেছে তার জবাবদিহী তারাই করবে আর তোমাদের ওপর যে দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে তার দায়দায়িত্ব তোমাদের ওপরই বর্তাবে।’ (মুসলিম, ১৮৪৬) জনসাধারণের ওপর শাসকবর্গের অধিকার এই যে, তারা যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাস্তবায়নের ব্যাপারে তাদের সহযোগিতা চাইবে তাতে সহযোগিতা করবে। এছাড়া তাদের প্রত্যেককেই কাজের নিজ নিজ গণ্ডি ও পরিসীমা এবং সামগ্রিক ভাবে সমাজে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন থাকবে। যাতে করে সকল কাজ তার স্বাভাবিক গতিতে চলে। কেননা, শাসকবর্গকে যদি প্রজাগণ তাদের সাধারণ প্রয়োজনীয় কাজে সহযোগিতা না করে তা হলে তা পূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হতে পারে না। ইসলামে মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক শ্রমিক অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে অথবা এভাবে বলা যেতে পারে, শ্রমিকরা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার প্রধান কারণ মালিক ও শ্রমিকের মধ্যকার বৈষম্য। এই বৈষম্য যতদিন দূর হবে না ততদিন চলবে এই সমস্যা, ততদিনই জারি থাকবে শ্রমিকদের বঞ্চিত করার এই স্রোতধারা। মালিক-শ্রমিকের মধ্যকার বৈষম্য দূরীকরণেই কাজ করেছেন নবিজি (সা.) । শ্রমঅধিকার প্রতিষ্ঠায় এটাই ছিলো রাসুল [সা.] -এর অন্যতম মিশন। কারণ তিনি জানতে মালিক শ্রমিকের মাঝে বিদ্যমান বৈষম্য দীর করতে পারলেই দূরীভূত হবে অধিকাংশ সমস্যা। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য তাঁর বাতলানো নীতিমালার মূল উদ্দেশ্যই হলো মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যকার ভেদাভেদ দূর করা, একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করা। তাই সব ধরনের হিংসা, ভেদাভেদ ও বৈষম্য ভুলে নবি (সা.)-এর বাতলানো পথে শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ে সচেতন হতে হবে আমাদের। আর এ জন্য চাই মালিক ও শ্রমিকদের আন্তরিকতা। একপক্ষীয় আন্দোলনের মাধ্যমে কখনোই এ অধিকার আদায় করা সম্ভব নয়। পরিশ্রম করে সৎভাবে উপার্জনের শিক্ষা দেয় ইসলাম । ইসলামের মূলনীতিতে মালিক-শ্রমিকের কোনো ব্যবধান ও বৈষম্য নেই। হাদিসে ইরশাদ হচ্ছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, তারা (মজুর, শ্রমিক ও অধীন বেতনভোগী কর্মচারীরা) তোমাদের ভাই। আল্লাহ তাদের দায়িত্ব তোমাদের ওপর অর্পণ করেছেন। অতএব, যার কোনো ভাইকে তার অধীন করে দেয়া হয়েছে, সে যেন তাকে তা-ই আহার করতে দেয়, যা সে নিজে আহার করে। যেন সেই পরিধেয় পরিধান করতে দেয়, যা সে নিজে পরিধান করে থাকে। আর তাকে যেন এমন কাজ করতে বাধ্য না করে, যা করলে সে পর্যুদস্ত হবে। আর যদি এমন কাজ করতে তাকে বাধ্য করে, তাহলে যেন সে তাকে সহযোগিতা করে। (বুখারি_ হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী মালিক-শ্রমিকের মধ্যে এমন সৌহার্দ্যমূলক সম্পর্ক সৃষ্টি হলে শ্রমিকদের সব অসন্তোষ চিরতরে বন্ধ হবে। কথায় কথায় কল-কারখানা বন্ধ, জ্বালাও-পোড়াও, হরতাল-অবরোধের দরকার পড়বে না। ইসলাম মনে করে, পার্থিব জগতে কোনো উন্নতি শ্রম ব্যতিরেকে সম্ভব নয়। তাই ইসলামে শ্রমের গুরুত্ব ও মর্যাদা অত্যন্ত তাৎপর্যময়। ইসলামী বিধান মতে, মালিকের কর্তব্য হচ্ছে, শ্রমিক নিয়োগের আগে অবশ্যই তার মজুরি নির্ধারণ করে নেয়া ও কাজ শেষ করা মাত্রই শ্রমিককে তার পারিশ্রমিক প্রদান করা। শ্রমিকরা দিনান্তে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে শুধু পরিবারের প্রয়োজন পূরণের নিমিত্তে। এই মজুরিই তাদের অবলম্বন। এ অবস্থায় তারা যদি যথাযথ মজুরি না পায়, তাহলে তাদের নানাবিধ দুর্দশায় পড়তে হয়। ইসলামে মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক হবে পিতা-সন্তানের ন্যায়। নিজের পরম আত্মীয়ের মতোই শ্রমিকের সাথে আন্তরিকতাপূর্ণ আচরণ করা, পরিবারের সদস্যদের মতই তাদের আপ্যায়ন করা, শ্রমিকের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার প্রতিটি মুহূর্তের প্রতি মালিকের খেয়াল রাখা এবং তাদের সুবিধা-অসুবিধার কথা বিবেচনা করা মালিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য। শ্রমিককে তার প্রাপ্য পূর্ণভাবে যথাসময়ে প্রদান করাও মালিকের একটি প্রধান দায়িত্ব। অনেক সময় শ্রমিকদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে মালিকগণ উপযুক্ত মজুরী না দিয়ে যৎ সামান্য মজুরী দিয়ে শ্রমিকদের অধিকার বঞ্চিত করে। এ ধরনের মালিকদের সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, মহান আল্লাহ বলেন, ক্বিয়ামতের দিন তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হবে। তাদের মধ্যে একজন হল যে শ্রমিকের নিকট থেকে পূর্ণ শ্রম গ্রহণ করে অথচ তার পূর্ণ মজুরী প্রদান করে না। (বুখারি, মিশকাত হা/২৯৮৪) অপরদিকে একজন শ্রমিকের প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য হল- চুক্তি মোতাবেক মালিকের প্রদত্ত কাজ অত্যন্ত নিষ্ঠা ও বিশ্বস্ততার সাথে সম্পাদন করা। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ ঐ শ্রমিককে ভালবাসেন যে সুন্দরভাবে কার্য সমাধা করে। (জামে তিরমিযি হা/১৮৯১)কিন্তু কোন কোন শ্রমিক মালিকের কাজে ফাঁকি দিয়ে নিয়মিত হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে বেতন উত্তোলন করে থাকে, যা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। এজন্য তাকে ক্বিয়ামতের মাঠে অবশ্যই বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। আর যদি শ্রমিক তার উপর অর্পিত দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করে, তাহলে তার জন্য রাসূলুল্লাহ (সা.) দ্বিগুণ পুরস্কারের কথা ঘোষণা করে বলেন, তিন শ্রেণীর লোকের দ্বিগুণ ছওয়াব প্রদান করা হবে। তাদের মধ্যে এক শ্রেণী হল -ঐ শ্রমিক যে নিজের মালিকের হক্ব আদায় করে এবং আল্লাহর হক্বও আদায় করে। (বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত হা/১১) পরিশিষ্ট পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। আয়োজন করা হচ্ছে বিভিন্ন সভা-সেমিনারের। অতিব শ্রমিকভক্ত কোনো মালিক হয়তো শ্রমিকদের মাঝে ফ্রি খাবার বিতরন করছেন এই দিন উপলক্ষ্য। হুংকার-শ্লোগান দিয়ে হয়তো কোনো দায়িত্বশীর ব্যক্তিত্ব বলছেন, এগিয়ে চলো শ্রমিক ভাইয়েরা আমরা আছি তোমাদের সাথে। কিন্তু বাস্তবে কাজই হচ্ছে না কোনো। যিনি শ্রমিক খেটেই মরছেন তিনি। আর যিনি মালিক অত্যাচার আর অবহলোর পাহাড় গড়েই চলছেন তিনি। যে গার্মেন্টস শ্রমিক কোটি কোটি মানুষের বস্ত্র তৈরী করে উন্নত বিশ্বে প্রেরণ করছে, তার স্ত্রী ও সন্তানের দেহে বস্ত্র নেই। যে শ্রমিক বহুজাতিক কোম্পানীতে কোটি কোটি মানুষের জন্য ওষুধ তৈরী করছে সেই মৃত্যুর সময় মুখে দেয়ার মতো ওষুধ পায় না, খাদ্যের অভাবে বিরাট বিরাট অট্টালিকায় শ্রমিকের হাড় ও মাংস একাকার হয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। সভ্যতার চরম উন্নতির এ যুগে সর্বত্রই মেহনতী মানুষ লাঞ্চিত, বঞ্চিত, শোষিত এবং অবহেলিত। তাহলে সমাধান কোথায়? কোথায় এই অবহেলা-অত্যাচর আর বঞ্চনা-শোষণের শেষ সীমানা? সমাধান দিয়েছে ইসলাম। প্রকৃত অর্থে শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার নীতিমালা বাতিয়েছেন রাসুল [সা.]। সুন্দর এ পৃথিবীর রূপ-লাবণ্যতায় শ্রমিকদের কৃতিত্বই অগ্রগণ্য। কিন্তু শত আক্ষেপ! সভ্যতার কারিগর এ শ্রেণীটি সর্বদাই উপেক্ষিত, অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত। উদয়াস্ত উষ্ণ ঘামের স্যাঁতসেঁতে গন্ধ নিয়ে খেটে যে শ্রমিক তার মালিকের অর্থযন্ত্রটি সচল রাখে, সেই মালিকেরই অবিচারে শ্রমিকদের অচল জীবনটি আরো দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। এটাকে সেই মৌমাছির সাথে তুলনা করা যায়, যারা দীর্ঘ পরিশ্রমের মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করে চাকে সঞ্চয় করে, কিন্তু তার ভাগ্যে একফোঁটা মধুও জোটে না। পুঁজিবাদের সমর্থক ম্যানডেভিল তার বই ‘ফিবল অব দি বিজ’ গ্রন্থে লিখেছেন-“ গরীব ও অসহায় লোকদের থেকে কাজ নেয়ার একমাত্র উপায় হল তাদেরকে গরীব থাকতে দাও এবং সবসময় তাদেরকে পরনির্ভরশীল করে রাখ। এদের যা প্রয়োজন তা কিঞ্চিত পূরণ কর। খেটে খাওয়া (শ্রমজীবী) মানুষকে স্বাবলম্বী করা আত্মঘাতী পদক্ষেপ বৈ কিছুই নয়।” এজন্য সাম্রাজ্যবাদী, পুঁজিবাদী বিশ্ব চায় না আমাদের মতো দরিদ্র জনগোষ্ঠী স্বাবলম্বী হোক। সুতরাং সমাজতন্ত্র ও পুঁজিবাদী অর্থ ব্যবস্থায় মালিক-শ্রমিকের বৈরিতাপূর্ণ সম্পর্কের অবসান ঘটিয়ে ইসলামি অর্থ ব্যবস্থা ও শ্রমনীতি বাস্তবায়ন করে তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপন করতে হবে। আর এজন্য সর্বাগ্রে উচিত ইসলাম প্রদর্শিত মালিক-শ্রমিক নীতিমালার পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ ও বাস্তবায়ন। মাওলানা মিরাজ রহমান ইমেইল : [email protected]