
ছবি সংগৃহীত
সাইকিয়াট্রিস্ট এবং সাইকোলজিস্টের মাঝে কী পার্থক্য আছে?
আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৭, ০২:০৯
যারা ফোবিয়া বা আতঙ্কে ভুগেন তারা সাইকোলজিস্টকে দেখালেই অনেক বেশি উপকারিতা পাবেন। মডেল: খুশবু খানম, ছবি: রিপন, প্রিয়.কম।
(প্রিয়.কম) যদি আপনার মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে দুশ্চিন্তা হয় তাহলে আপনার সাহায্য নেয়া প্রয়োজন। কিন্তু আপনার কোন ডাক্তারের সাথে কথা বলা উচিৎ তা বুঝবেন কী করে? আপনি কী সাইকিয়াট্রিস্ট এর কাছে যাবেন নাকি সাইকোলজিস্ট এর কাছে যাবেন? কিন্তু সাইকিয়াট্রিস্ট এবং সাইকোলজিস্ট এর মধ্যকার পার্থক্য যদি না জানেন তাহলে আপনি একা নন। ‘আমরা সব সময়ই এটা দেখি’ বলে জানান আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন ডিভিশন অফ এডুকেশন এর পরিচালক ও এমডি ট্রিস্টান গরিন্ডো। তিনি বলেন ‘এই বিষয়ে অনেক দ্বিধা আছে’।
এদের মধ্যে সামঞ্জস্য থাকলেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য ও বিদ্যমান। চলুন তাহলে জেনে নিই সাইকিয়াট্রিস্ট এবং সাইকোলজিস্ট এর মধ্যকার পার্থক্যের বিষয়ে।
যে কারণে তারা একই রকম
সাইকিয়াট্রিস্ট বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এবং সাইকোলজিস্ট বা মনোবিজ্ঞানী উভয়ে ভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষিত চিকিৎসক যারা আপনার মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাকে মোকাবেলা করতে সাহায্য করতে পারেন। তারা উভয়েই আপনার সমস্যা নিয়ে আপনার সাথে কথা বলতে পারেন।
যে কারণে তারা ভিন্ন
সাইকিয়াট্রিস্টরা হচ্ছেন চিকিৎসক। যারা মেডিকেল কলেজ থেকে স্নাতক পাস করেন, ১ বছরের ইন্টার্নশিপ সম্পন্ন করেন এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার চিকিৎসার সাথে যুক্ত থাকেন ৩ বছর।
সাইকোলজিস্টরা সাইকোলজি বা মনোবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক পাস করেন। তারা মন এবং মানুষের আচরণ নিয়ে পড়াশুনা করেন। তারা চিকিৎসক নন। একজন সাইকোলজিস্ট দর্শন শাস্ত্রে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করতে পারেন অথবা ক্লিনিক্যাল বা কাউন্সেলিং সাইকোলজি এর উপর ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করতে পারেন। সাধারণত তারা ১-২ বছরের ইন্টার্নশিপ করেন। সাইকোলজিস্টরা সাইকোলজিক্যাল টেস্ট (আইকিউ টেস্ট বা পারসোনালিটি টেস্ট) নেয়ার বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকেন।
সাইকিয়াট্রিস্টদের মেডিকেল ট্রেনিং থাকার কারণে তারা ঔষধ সেবনের পরামর্শ দিতে পারেন। এটাই তাদের মধ্যকার উল্লেখযোগ্য পার্থক্য। কিছু ক্ষেত্রে সাইকোলজিস্টরাও সীমিত সংখ্যক ঔষধের ব্যবস্থাপত্র দিতে পারেন যদি তারা সাইকোফারমাকোলজি এর কোর্স সম্পন্ন করেন।
তাদের সমকক্ষতা
সাইকিয়াট্রিস্ট এবং সাইকোলজিস্ট উভয়েই সাইকোথেরাপি অনুশীলনের বিষয়ে – রোগীদের সাথে তাদের সমস্যার বিষয়ে কথা বলার জন্য প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকেন। তাদের ভিন্ন প্রেক্ষাপট এবং প্রশিক্ষণের কারণে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধানের ধরন ভিন্ন হয়।
সাইকোলজিস্ট বা মনোবিজ্ঞানী আপনার আচরণের প্রতি গভীরভাবে মনোযোগ দেবেন। আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল এসোসিয়েশনের পরিচালক ও পিএইচডি সি ভেইল রাইট বলেন, ‘আপনি যদি বিষণ্ণতায় ভুগেন এবং বিছানা ছেড়ে উঠতে না পারেন তাহলে এটি আচরণগত সমস্যা’। মনোবিজ্ঞানীরা আপনার ঘুমের ধরণ, খাওয়ার ধরণ এবং আপনার নেতিবাচক চিন্তার বিষয় চিহ্নিত করবেন যা সমস্যা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে।
আমেরিকান সাইকিয়াট্রিস্ট এসোসিয়েশন এর পরিচালক রানা পারেখ বলেন, ‘জীববিজ্ঞান এবং স্নায়ুরসায়নের বিষয়ে শক্তিশালী অনুভূতি কাজ করে সাইকিয়াট্রিস্টদের’। ‘তাদের রোগ নির্ণয়ের বিষয়টি ভিন্ন ধরনের হয়। এক্ষেত্রে কাউকে বিষণ্ণ বলার আগে আমরা এই বিষয়ে নিশ্চিত হই যে, তাদের ভিটামিনের ঘাটতি বা থাইরয়েডের সমস্যা নেই’। একবার মানসিক সমস্যা শনাক্ত হওয়ার পর মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা ঔষধ গ্রহণের পরামর্শ দেন।
আপনার কাকে প্রয়োজন?
একজন সাইকিয়াট্রিস্টকে দেখানোর সম্ভাব্য উপকারিতা হচ্ছে, একজন চিকিৎসক হিসেবে প্রশিক্ষণ বা জ্ঞান থাকার কারণে অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্য সমস্যার বিষয়ে এবং ঔষধের প্রভাবের কারণে আবেগিয় বা আচরণগত লক্ষণের বিষয়ে মূল্যায়ন করতে পারেন তিনি। সাইকিয়াট্রিস্ট আপনার প্রাথমিক চিকিৎসক বা অন্য বিশেষজ্ঞদের সাথেও কাজ করতে পারেন।
মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন- তীব্র বিষণ্ণতা, বাইপোলার ডিজঅর্ডার বা সিজোফ্রেনিয়া এর ক্ষেত্রে শারীরিক লক্ষণ মারাত্মক আকার ধারণ করে এবং নিজের যত্ন নেয়াটা যখন কঠিন হয়ে পড়ে তখন একজন সাইকিয়াট্রিস্ট সাহায্য করতে পারেন।
মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার তীব্রতা কম হলে একজন সাইকোলজিস্ট সাহায্য করতে পারেন আপনাকে। রাইট বলেন, ‘অনেকেই ঔষধ গ্রহণের ধারণাটি পছন্দ করেন না’। যারা আসক্ত হয়ে যাওয়ার বা শারীরিক রসায়নের পরিবর্তনের বিষয়ে ভয় পান, তারাই প্রাথমিক অবস্থায় সাইকোলজিস্টকে দেখান।
রাইট বলেন, আপনার সমস্যার ধরণই আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে। চিকিৎসাগত বিষণ্ণতায় ভুগেন যারা তারা ঔষধ গ্রহণের মাধ্যমে উপকৃত হতে পারেন। অন্যদিকে যারা ফোবিয়া বা আতঙ্কে ভুগেন তারা সাইকোলজিস্টকে দেখালেই অনেক বেশি উপকারিতা পাবেন। সাধারণত যখন একজন সাইকোলজিস্ট এমন একজনকে চিকিৎসা করেন যার মধ্যে তীব্র লক্ষণ (আত্মহত্যা বা অযৌক্তিক চিন্তা কাজ করে) দেখেন তখন তিনি তাকে সাইকিয়াট্রিস্ট এর সাথে কথা বলার পরামর্শ দেবেন তার সমস্যাটি শনাক্ত করা এবং ঔষধের ব্যবস্থাপত্রের জন্য।
রাইট বলেন, ‘সাইকোলজি এবং সাইকিয়াট্রি উভয়েই বিশ্বাস এবং গোপনীয়তার গভীর সম্পর্কে আবদ্ধ’।
সূত্র: ওয়েব এম ডি
সম্পাদনা: কে এন দেয়া