প্রতীকী ছবি।

তাকদীর কী?

মিরাজ রহমান
সাংবাদিক ও লেখক
প্রকাশিত: ২৪ মে ২০১৭, ১১:৩৫
আপডেট: ২৪ মে ২০১৭, ১১:৩৫

(প্রিয়.কম) তাকদীর শব্দটি আরবি ‘কাদারুন’ মূলশব্দ থেকে নিষ্পন্ন বা উৎপন্ন। এর অর্থ নির্ধারণ করা, ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি। পরিভাষায় তাকদীরের সংজ্ঞা হলো, সৃষ্টির যাবতীয় বিষয় তথা ভালমন্দ, উপকার-অপকার ইত্যাদির স্থান-কাল এবং এসবের শুভ ও অশুভ পরিণাম পূর্ব হতে নির্ধারিত হওয়া।

ব্যাখ্যা হলো, জগতের যাবতীয় বস্তু তথা মানুষ ও জিনসহ যত সৃষ্টি রয়েছে সবকিছুর উৎপত্তি ও বিনাশ, ভাল ও মন্দ, উপকার ও অপকার ইত্যাদি কখন কোথায় ঘটবে এবং এর পরিণাম কী হবে- সৃষ্টির পূর্বেই আল্লাহ্ তাআলা তা নির্ধারণ করে রেখেছেন। জগতে যা কিছু ঘটছে এবং ঘটবে সবই তাকদীরে লিপিবদ্ধ রয়েছে। তাকদীরের বাইরে কিছুই নেই। কিছু হয় না। রাসূলুল্লাহ্ (সা.) ইরশাদ করেন, প্রত্যেক জিনিসই তাকদীর অনুসরণে সংঘটিত হয়ে থাকে। এমনকি অক্ষমতা এবং বুদ্ধিমত্তাও। (মিশকাত শরিফ, পৃষ্ঠা-১৯)

আরবি ‘কাদার’ শব্দের অর্থ বোঝানোর জন্য সাধারণত আরেকটি শব্দ ব্যবহৃত হয়, তা হলো ‘কাযা’। ‘কাযা’ শব্দের অভিধানিক অর্থ ফায়সালা করা, হুকুম দেওয়া ইত্যাদি। পরিভাষায় কাযা বলা হয়, অনন্তকাল ধরে সৃষ্টবস্তু সম্পর্কে আল্লাহ্ তাআলার অনাদি ইচ্ছা বা পরিকল্পনাকে। আর ‘কাযার’ ইচ্ছা ঐ সংক্ষিপ্ত পরিকল্পনার বিস্তারিত ও বাস্তব রূপ। (নিবরাস, শরহু শরহিল আকাইদ, পৃষ্ঠা-১৭৪; কাওয়াইদুল ফিকহ, পৃষ্ঠা-৪৩১)

মোটকথা, কোনো জিনিসই তাকদীরের বাইরে নয়। তবে তাকদীর মানুষের কাজের কারণ হয় এবং তাকদীর লিপিবদ্ধ আছে বলেই মানুষ ভালমন্দ ইত্যাদি করছে বিষয়টি এমনও নয়। বরং মানুষ ভবিষ্যতে যা করবে আল্লাহ তা লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন বলে মানুষ করেছে, এটও ঠিক নয়। বিষয়টি বোধগম্য করার জন্য একটি উদাহরণ পেশ করা যায়। ধরা যাক, একজন অভিজ্ঞ ডাক্তার তার রোগীর অবস্থা জানেন বলে তার ডায়রিতে লিখে রাখলেন যে, এ রোগী অমুক সময় অমুক অবস্থায় মারা যাবে। অবশেষে যদি তাই হয়, এক্ষেত্রে ডাক্তারের লিখন তার মৃত্যুর কারণ নয়। ঠিক তদ্রুপ আল্লাহ তাআলা মানুষের অবস্থা জানেন বলে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। তবে এ লিপিবদ্ধকরণ মানুষের কার্যের কারণ নয়। মানুষের কার্যের কারণ মানুষের ইচ্ছা বা সংকল্প। কাজেই ভালমন্দ কাজের জন্য মানুষ নিজেই দায়ী হবে। (মিশকাত শরিফ, বাংলা, প্রথম খন্ড, পৃষ্ঠ-৬৭)

কারো কারো মতে, তাকদীর দুই প্রকার- এক. মুবরাম। দুই. মুয়াল্লাক। যে তাকদীরে কোনো পরিবর্তন হয় না তাকে তাকদীরে মুবরাম বলে। যেমন, মানুষের মৃত্যু, রিজিক ইত্যাদি। আর যে তাকদীরে পরিবর্তন হয় তাকে তাকদীরে মুয়াল্লাক বলে। যেমন- ঔষধ ও দোআর দ্বারা তাকদীর পরিবর্তন হওয়া। (নিবরাস, শরহু শরহিল আকাইদ, পৃষ্ঠা-১৯৪)

তাক্দীরের বিষয়টি কখন লিপিবদ্ধ করা হয়েছে এ সম্পর্কে হাদিসে বর্ণিত আছে। রাসূলুল্লাহ্ (সা.) ইরশাদ করেন, আসমান-জমিন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে আল্লাহ্ তাআলা সৃষ্টির তাকদীর লিপিবদ্ধ করেছেন। তখন তার আরশ ছিল পানির উপর। (মিশকাত শরিফ, পৃষ্ঠা-১৯)

সম্পাদনা: ফারজানা রিংকী