(প্রিয়.কম): আমাদের বন্ধুদের মাঝে অনেকেই আছে যারা মাঝে মাঝে এখানে সেখানে ঘুরতে যায় আর ফিরে আসে বিশাল সব গল্প সহ। হয়ত সেরকম কোন গল্পেই শুনেছেন ভয়ানক ফ্লাশ ফ্লাড এর কথা। সেই ভয়ানক ফ্লাশ ফ্লাডের হাত থেকে কিভাবে তারা জীবন হাতে করে ফিরেছে একথা বিভিন্ন ভাবে শুনতে শুনতে আপনার কান শেষ।

 

আসলে কি এই ফ্লাশ ফ্লাড? কেন এটা নিয়ে এত কথা?

 

অল্প কিছু কথায় আসুন বুঝে দেখার চেষ্টা করি। মনে করুন আপনি ভ্রমণে বেড়িয়ে কোন ঝিরিপথ দিয়ে হাঁটছেন। বেশ গভীর ঝিরিপথ, হঠাৎ করে আকাশ কালো করে বৃষ্টি শুরু হল। প্রচুর পরিমাণে পানি জমে গেল আপনার উপস্থিত থাকা এলাকায় আর পাহাড়ি এলাকা বলে সেইসব পানিয়ে গড়িয়ে পড়তে শুরু করবে এবং খুব দ্রুতই সব এসে হাজির হবে ঝিরিপথে। একটু আগে যেটা ছিল পায়ে হাঁটা রাস্তা, মুহূর্তেই সেটা পরিণত হতে পারে একটা খরস্রোতা নদীতে। সেই প্রচণ্ড স্রোতে আপনাকে ভাসিয়ে নিতে পারে, স্রোতে ভেসে আসা ডালপালা, বড় গাছের কাণ্ড এসব আপনাকে আঘাত করে আহত করতে পারে।

 

এটাকেই বলে ফ্লাশ ফ্লাড। মুহূর্তে শুরু হয়ে আবার কিছুক্ষণেই শেষ হয়ে যেতে পারে এটা। আর এটা এত দ্রুত আসে, যে সঠিক সময়ে সতর্ক না হলে দেখা যাবে আপনি কোন দিকে ভেসে যাচ্ছেন, নিজেও বুঝতে পারছেন না। ফ্লাশ ফ্লাডকে পাহাড়ি ঢল বলা হয় বাংলায়।

 

ফ্লাশ ফ্লাড কি কেবল পাহাড়েই হয়? আসলে এভাবে বলা যায়, হঠাৎ করে, খুব কম সময়ের নোটিশে বিপুল পরিমাণ পানির প্রবাহ চলে আসলে সেটাকে ফ্লাশ ফ্লাড বলা যায়। কিছুদিন আগে হাওর এলাকায় বাধ ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যে বিপুল পানির ঢল নামল, যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হলেন হাজার হাজার মানুষ, সেটাকেও ফ্লাশ ফ্লাড বলা যেতে পারে।

 

 

তবে ফ্লাশ ফ্লাড জিনিসটা মারাত্মক হলেও এটার আগাম সতর্ক বার্তা পাওয়া সম্ভব একটু চোখ-কান খোলা রাখলেই। আকাশ খারাপ করছে, বৃষ্টি হতে পারে এরকম মনে হলেই আপনাকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় চলে আসতে হবে এবং যদি হাতে সময় থাকে তাহলে কিছুটা সময় উঁচু কোন জায়গায় অপেক্ষা কাটিয়ে দেয়া যেতে পারে। কিন্তু যদি এরকম হয় যে আপনাকে যেতেই হবে, পৌঁছাতেই হবে কোন গন্তব্যে, তাহলে হাঁটতে হাঁটতেই নজর রাখুন চারপাশে, যে কোন জায়গাকে নিরিখ করুন যে দরকারে সেখানে উঠে আশ্রয় নেয়া যাবে কিনা অল্প সময়ের নোটিশে। শরীরে বৃষ্টির ফোঁটা পড়ার সাথে সাথে কিংবা দূরে উঁচুতে কোথাও বৃষ্টি হচ্ছে বুঝতে পারলে সাথে সাথে আশে পাশে কোথাও আশ্রয় নিয়ে নিন।

 

ফ্লাশ ফ্লাড নিয়ে এতটা কথা কারণ হল, এই মারাত্মক জিনিসটা আসলেই মানুষ মেরে ফেলতে পারে। শুকনো হাঁটু পানির ঝিরি মুহূর্তেই মাথা ছাড়িয়ে যাওয়া অথৈ পানি হয়ে যেতে পারে। বান্দরবানের বেশ কিছু ঝিরিপথে ভরা বর্ষায় ট্রেক করতে গিয়ে চরম বিপদে পড়েছেন এরকম মানুষ একেবারে কম নেই। মারাও গেছেন বেশ কিছু মানুষ।

 

তাই সাবধান। সম্ভব হলে বর্ষায় ঝিরিপথ থেকে দূরে থাকুন। যদি যেতেই হয়, চোখ-কান খোলা রাখুন সর্বোচ্চ পর্যায়ে।