ডলফিনদের দেখা পেতে চলে যান মাছ ধরার ট্রলারে চেপে। ছবি- সংগৃহীত

আপনার খুব কাছেই আছে ডলফিনের স্বর্গরাজ্য

আফসানা সুমী
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ২২ জুলাই ২০১৭, ১৪:১৫
আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৭, ১৪:১৫

(প্রিয়.কম) সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড। বৃটিশরা ভেবেছিল, এই এলাকা এত গভীর যে নিশ্চয়ই এর কোন তল নেই! এটি আসলে একটি খাদ। বিশ্বের ১১ টি গভীরতম খাদের একটি। অনেকে মনে করেন এটি বিশ্বের ২য় গভীরতম খাদ।
 
সুনীল শান্তিময় সাগরের রঙ এখানে আরও গভীর নীল। সাগরতলের এই ম্যারিন ভ্যালিতে বাস করে ডলফিন, তিমিসহ আরও নানান প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণী। তাই এখানে গেলে ডলফিনের মজার কার্যকলাপ দেখার সুযোগ রয়েছে শতভাগ।
 
ধারণা করা হয়, এক লক্ষ পঁচিশ হাজার বছর আগে এই খাদ তৈরি হয়েছে। আয়তনে এটি ৩,৮০০ বর্গকিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। ভাবছেন এমন সুন্দর এই জায়গায় কীভাবে যাবেন! নিশ্চয়ই জায়গাটি গভীর কোনো মহাসমুদ্রে! যাওয়াও দুঃসাধ্য!
 
জেনে অবাক হবেন যে, সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডের অবস্থান দূরে কোথাও নয়। আমাদের বঙ্গপোসাগরে। মংলা সুন্দরবনের দুবলার চর বা সোনার চর থেকে থেকে এর দূরত্ব ৩০-৪০ কিলোমিটার।
 
সর্বোচ্চ ১,৩৪০ মিটার পর্যন্ত গভীর এই জায়গাটি আলাদা রঙের কারণে দূর থেকে নজরে পড়ে। তিমি, পপাস ডলফিন পৃথিবীর বৃহত্তম ইরাবতী ডলফিন, গোলাপি পিঠকূজো ইন্দো প্যাসিফিক ডলফিন ও মসৃণ পিঠের (পাখনাহীন) ইমপ্লাইস ডলফিনসহ নানান প্রজাতির প্রাণীদের এই অভয়ারণ্য থেকে ঘুরে আসতে পারেন আপনিও। সে এক অতুলনীয় রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হবে নিঃসন্দেহে। সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড পৃথিবীর একমাত্র সোয়াচ যেখানে তিনটি সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী একসঙ্গে দেখা যায়।
 
সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড এর পরিচিতি এর পেছনে বাংলাদেশের যে প্রাণী বিজ্ঞানীর নামটি নামটি জড়িত তিনি হলেন, রুবাইয়াৎ মনসুর (মুগলি)। বাংলাদেশীদের মধ্যে তিনি সর্বপ্রথম এই জায়গাটির ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠেন এবং একে একে নানা প্রজাতির ডলফিন এবং তিমির খোঁজ বের করেন।
 
পথের খোঁজঃ
ঢাকা থেকে সরাসরি চলে যান মংলা। মংলা থেকে প্রতিদিনই বিভিন্ন ধরনের মাছ ধরার ট্রলার সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড যায় মাছ ধরার জন্য। এদের যে কোনো ট্রলারে উঠে চলে যেতে পারেন।
 
সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ডে একটি নির্দিষ্ট এলাকা আছে যেখানে রাতে মাছ ধরার নৌকা ট্রলারগুলো অবস্থান করে যদি সম্ভব হয় তাহলে সাগরে একটা রাত কাটিয়ে আসার চেষ্টা করবেন, সেই অনুভূতিটা নিশ্চয় অসাধারণ হবে, তবে ট্রলার ঠিক করার আগে বিস্তারিত কথা বলে নিবেন।
 
এছাড়া কুয়াকাটা থেকে সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড প্রায় ৯০ কি মি দূরে। কুয়াকাটা থেকে সরাসরি যাওয়া যায় কিনা সে ব্যাপারটা নির্ভর করে ট্রলার পাওয়ার উপর।
 
টিপস-
সী-গাল পাখির অবস্থান নির্ভর করে অনেক সময় ডলফিন বা তিমির অবস্থান বোঝা যায়। যদি দেখেন সী-গাল পাখি পানির কাছাকাছি চক্কর দিচ্ছে তাহলে বুঝবেন আশাপাশে ডলফিন এর অবস্থান রয়েছে।
 
সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ডেই নাকি ১৮৬৩ সালে গ্যাডফ্লাই নামে একটা ২১২ টন ব্রিটিশ গানবোট ভারত থেকে ইংল্যান্ডে বিপুল পরিমান ধনরত্ন নিয়ে যাওয়ার সময় ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে যায়। তাই বলে ওখানে গিয়ে আবার ধনরত্ন খোঁজা শুরু করে দেবেন না!
 
তথ্য এবং মূল উপাদানঃ বিল্লাহ মামুন, প্রকৃতিপ্রেমী এবং ব্লগার।
 
সম্পাদনাঃ ড. জিনিয়া রহমান।
আপনাদের মতামত জানাতে ই-মেইল করতে পারেন [email protected] এই ঠিকানায়।