ছবি সংগৃহীত

শিক্ষকতা ও সাংবাদিকতায় সমানে সমান মাওলানা লিয়াকত আলী

মিরাজ রহমান
সাংবাদিক ও লেখক
প্রকাশিত: ৩০ জানুয়ারি ২০১৭, ১৩:২৭
আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৭, ১৩:২৭

মাওলানা লিয়াকত আলী। ছবি : সংগৃহীত

(প্রিয়.কম) মাওলানা লিয়াকত আলী- বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী একজন আলেমে দীন। তিনি মূলত একজন শিক্ষক হলেও সাংবাদিকতা তার পছন্দের একটি বিষয়। মাদরাসায় পড়াশুনার পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়াশুনা করেছেন। মাদরাসায় পড়াশুনা করার পাশাপাশি কেন আপনি সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়াশুনা করেছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে মাওলানা লিয়াকত আলী বলেন, ‘যেহেতেু আমি আলেম হয়েছি, ইসলাম প্রচারে আমাকে কাজ করতে হবে- এমনটা আমার ইচ্ছা ছিল। আর ইসলাম প্রচারে কাজ করার জন্য মিডিয়াকে আমার কাছে সবচেয়ে কার্যকর মাধ্যম বলে মনে হয়েছে। আর মিডিয়াতে কাজ করতে হলে এবং ভালো অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত হতে চাইলে- এই বিষয়ে পড়াশুনা বা একাডেমিক ডিগ্রীর অর্জন করার কোনো বিকল্প নেই। তাই মাদরাসায় পড়াশুনা করেও আমি সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়াশুনা করেছি।’

পিতা আবদুস সবুর সরদার এবং মাতা অভিজাত বিবির সন্তান লিয়াকত আলীর জন্ম ১৯৬৫ সালের ১২ মে খুলনায়। গ্রামের বাড়ির গুমানতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হওয়ার মাধ্যমে মাওলানা লিয়াকত আলীর পড়াশুনা জীবনের প্রাতিষ্ঠানিকতার শুরু হয় এবং ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনাও করেন তিনি। এরপর স্কুল ছেড়ে মাদরাসায় ভর্তি হয়েছেন। গোপালগঞ্জের গওহরডাঙ্গা মাদরাসা মাওলানা লিয়াকত আলীর একাডেমিক জীবনের প্রথম ধর্মীয় শিক্ষালয়। প্রথম মাদরাসা। মাদরাসায় পড়াশুনার ধারাবাহিকতায় ঢাকাস্থ জামিয়া কোরআনিয়া লালবাগ থেকে কওমি শিক্ষা ক্যারিকুলামে দাওরায়ে হাদিস সমাপ্ত করেছেন তিনি। পাশাাপাশি এসএসসিতে যশোর বোর্ডে মেধাতালিকায় ৬ষ্ঠ স্থান এবং এইচএসসিতে ঢাকা বোর্ডে ৭ম স্থান অধিকারের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় বি.এ (অনার্স) ও এম.এ (মাস্টার্স) সম্পন্ন করেছেন।

বাংলাদেশের সংবাদপত্র বা সাংবাদিকতা অঙ্গনে যে কয়জন আলেমে দীন তাদের মেধা ও শ্রম দিয়ে গ্রহণযোগ্য একটি স্থান অর্জন করে নিতে সক্ষম হয়েছেন মাওলানা লিয়াকত আলী তাদের অন্যতম। শিক্ষকতায় নিমগ্ন মানুষটি ভালোবাসার একটি বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে সাংবাদিকতা। বর্তমানের তিনি দৈনিক নয়া দিগন্তের সিনিয়র সহ-সম্পাদক হিসেবে কর্মরত আছেন। দৈনিক নয়াদিগন্তের সাথে যুক্ত রয়েছেন এর পথচলা শুরু থেকেই। এর আগে প্রায় ১০ বছর কাজ করেছেন দৈনিক মুজাদ্দিদে। সাংবাদিকতার পাশাপাশি মাওলানা লিয়াকত আলী দায়িত্ব পালন করছেন মিরপুরস্থ মাদরসা দারুর রাশাদের শিক্ষা সচিব ও জামিয়া রহমানিয়া ঢাকার সিনিয়র মুহাদ্দিস হিসেবে। এছাড়া তিনি নদওয়াতুল উলামা কেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক ইসলামি সাহিত্য সংস্থার ঢাকা ব্যুরোর সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে কাজ করছেন।   

মিডিয়াতে কাজ করছেন কেন? জানতে চাইলে লিয়াকত আলী বলেন, ‘সাংবাদিকতায় বিষয়ে পড়াশুনা করেছি, সংবাদপত্রে বা মিডিয়াতে কাজ করাই তো আরাম প্রথম ও প্রধান ক্যারিয়ার হওয়া উচিত।’

১৯৮৪ সালের ২৩ মে দৈনিক আজাদে ‘দারিদ্র বিমোচনে ইসলাম’ শিরোনামে মাওলানা লিয়াকত আলীর প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়। তার রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যাও কম নয়। বিখ্যাত ফকিহ আবুল লাইস সমরকান্দীর রচিত বুসতানুল আরেফিন গ্রন্থটির অনুবাদ তার জীবনের প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ। আরবী, উর্দু ও ইংরেজি থেকে অনুবাদেও তিনি সিদ্ধহস্ত। মাওলানা লিয়াকত আলীর রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থের মাঝে আলোকিত ভাবনা, ইসলামের অবদান, সময়ের মূল্য ও জীবন সাধনা, খেলাফতে রাশেদা, শরহে নুখবাতুল ফিকর, দিগ্বিজয়ী মুসলিম সেনাপতি, উন্নত জীবনের পাথেয়, কওমি মাদরাসা : নেসা ও নেজাম এবং আন্তর্জাতিক ঘটনা প্রবাহের নেপথ্য কাহিনীর নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো। বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থের কাজ সম্পাপ্ত করেছেন বলেন তিনি জানান। গ্রন্থটির নাম ফিলিস্তিন সমস্যা ও ইহুদি চক্রান্ত। এছাড়া বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্মারকগ্রন্থেও তার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে। মুজাহিদে আযম আল্লামা শামছুল হক ফরিদপুরী (রহ.) স্মারকগ্রন্থ, সাইয়্যেদ আবুল হাসান আলী নদভি (রহ.) স্মারকগ্রন্থ, কাজি মুজাহিদুল ইসলাম কাসেমী (রহ.) স্মারকগ্রন্থ এবং তাবলীগ জামাতারে বাংলাদেশের আমির মাওলানা আবদুল আজিজ (রহ.) স্মারকগ্রন্থ এর মাঝে অন্যতম । 

ইসলাম ও মিডিয়ার মধ্যকার সম্পর্ক ব্যক্ত করতে গিয়ে মাওলানা লিয়াকত আলী বলেন, ‘মিডিয়া একটি হাতিয়ার। খুবই শক্তিশালী হাতিয়ার। যে কোনো হাতিয়ারের মতো একেও ভালো এবং খারাপ উভয় দিকে ব্যবহার করা সম্ভব। পয়সার এপিঠ-ওপিঠের মতো মিডিয়ারও সাদা-কালো দুটি রূপ রয়েছে। কালো রূপকে না দেখে আমাদের উচিত ইসলাম প্রচারের কাজে মিডিয়ার যথার্থ ব্যবহারে মনযোগী হওয়া।’

করতে চেয়েছেন বা স্বপ্ন দেখেছেন কিন্তু করা হয়নি বা স্বপ্ন পূরণ হয়নি এমন কোনো কিছু আপনার জীবনে আছে কিনা? এভাবে জানতে চাইলেন তিনি বলেন, ‘ইসলাম পন্থীদের শক্ত ও মজবুত প্রভাব সমৃদ্ধ একটি মিডিয়ার স্বপ্ন আমার অনেক দিনের এবং এটাই বর্তমানে আমাকে খুব বেশি আহত করে। জানি না এই স্বপ্ন আদৌও পূরণ হবে কিনা। স্বপ্ন পূরণ না হওয়ার কথা ভেবে স্বপ্ন দেখা তো আর বন্ধ রাখা যায় না। এছাড়া যদি আল্লাহ কবুল করেন ইসলাম বিষয়ক একটি পূর্ণাঙ্গ গবেষণা প্রতিষ্ঠান করার ইচ্ছা রয়েছে আমার।’ 

সম্পাদনা: গোরা