ছবি সংগৃহীত

বাইরে খেলাধূলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে শিশুর বিকাশে

আফসানা সুমী
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ১৭ জানুয়ারি ২০১৭, ১২:৫৯
আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৭, ১২:৫৯

শিশুদের বিকাশের জন্য বাইরে খেলাধুলা খুবই জরুরি। মডেল: অরিক, অর্পিতা, অন্বি। ছবি: রিপন

(প্রিয়.কম) শিশুরা বাইরে খেলা-ধূলা করবে এই স্বাভাবিক ব্যাপারটি এখন আর স্বাভাবিক নেই। বরং স্কুল শেষে বাসায় ফিরে ভিডিও গেমস খেলা, বন্ধুরা মিলে প্রতিযোগিতা করে গেমসের লেভেল ক্রস করা এগুলোই এখন স্বাভাবিক। শিশুরা এমনকি ভুলে যাচ্ছে দাবা, লুডু, ক্যারাম খেলা। শীতে পাড়ায় মহল্লায় ব্যাডমিন্টন খেলার আয়োজন চোখে পড়ে ঠিকই কিন্তু সেখানে আমাদের স্কুল পড়ুয়া ভবিষ্যত বাংলাদেশকে দেখা যায় কমই। স্কুলের অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বেশীরভাগ শিশুই অংশ নেয় না। হাতে গোনা কিছু ছেলেমেয়েকে দেখা যায় যারা শারীরবৃত্তীয় এসব চর্চায় আগ্রহী।

পরিস্থিতি যখন এমন, তখন অভিভাবকের দায়িত্ব কী? সন্তান ঘরে থাকছে বলে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলা নাকি সন্তানের বিকাশের এই প্রতিবন্ধক সময়কে অতিক্রম করতে তাকে সাহায্য করা? বাহির মানেই অনিরাপদ, কথাটি আসলে কতটা সত্য আর এই অনিরাপত্তার দোহাই দিয়ে আমরা কী আমাদের শিশুদের সুস্থ স্বাভাবিক বেড়ে ওঠাকে বাধাগ্রস্থ করছি না?

জেনে নিন, কী কী কারণে শিশুদের ঘরের বাইরে খেলাধূলা করা উচিত। 

সৃজণশীলতা এবং কল্পনাপ্রবণতা বাড়ায়
প্রকৃতির মাঝে শিশুরা পায় খেলার নানান উপাদান। আর সেগুলো ব্যবহার করে খেলা যায় নানান রকম খেলা। সেখানে নেই কোন সীমা, নেই বাঁধা। ভাবনার তরী ভিড়তে পারে যে কোন তীরে। এক কাগজে যেমন হয় নৌকা, তেমনি হয় বাড়ি আবার তেমনি হতে পারে ফুল। মাটি দিয়ে হতে পারে শহীদ মিনার, হতে পারে উনুন আবার হতে পারে পুতুল।

আত্মবিশ্বাস তৈরিতে সাহায্য করে
শিশু যখন সৃষ্টি করতে শিখে যায় নিজের হাতেই তখন তার আত্মবিশ্বাসটিও বাড়তে থাকে সমানতালে। সে জানে তার মাঝে আছে বিশাল এক ক্ষমতা। ধীরে ধীরে সে শেখে নিজেই নিজের সিদ্ধান্ত নিতে। শেখে ঝুঁকি নিতে।

চিন্তাশীলতা বাড়ায়
প্রকৃতির মাঝে যখন উপাদানের কোন অভাব নেই তখন সে উপাদান নিয়ে চিন্তারও কোন অভাব হয় না। শিশু যত দেখে তত বোঝার চেষ্টা করে, জানার চেষ্টা করে। কোনটা কেন ঘটে, কীভাবে ঘটে, কিসের সাথে কী মেশালে কী হয়, কেন হয় এমন অজস্র প্রশ্ন আসে তার মাথায়। এভাবে বিকাশ হয় তার চিন্তাশক্তির, বুদ্ধির।

স্ট্রেস এবং অবসাদ দূর করে
আপনি হয়ত ভাবছেন শিশুদের স্ট্রেস বা অবসাদ বলে কিছু নেই। কিন্তু তা আসলে নয়। স্কুলে পরীক্ষার চিন্তা, শিক্ষকের প্রতি ভয়, পরিবারে বড়দের মাঝে দ্বন্দ্ব শিশুর উপর প্রভাব বিস্তার করে। তার ছোট্ট মনে কোনটা রূপ নেয় স্থায়ী ভয়ে, কোনটা পরিণত হয় হতাশায়। প্রকৃতি তার মনোযোগকে নিয়ে আসে সৃষ্টিশীল কাজে।

স্বাস্থ্য ভাল রাখে
খেলাধূলা, দৌড়ঝাঁপ শিশুর স্বাস্থ্য ভাল রাখে। আপনি হয়ত ভাবছেন, বাইরে যাওয়া মানেই ধুলোবালির সংস্পর্শে যাওয়া আর এটা মানেই অসুস্থতা। আসলে ধারণাটি ভুল। সূর্যরশ্মিতে আছে ভিটামিন ডি, যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়া প্রাকৃতিক আলোবাতাসের মাঝে যত বেশী থাকা যায় ততই তা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।

দলবদ্ধতা শেখায়
সবাই দলবদ্ধ হয়ে কাজ করতে পারে না। নেতা হওয়া অথবা নেতৃত্বের অধীনে কাজ করতে পারা দু’টোই যোগ্যতার বিষয়। এমন অনেক মানুষ আছেন যারা কারও অধীনতা মানতে পারেন না আবার নিজেও কিছু করতে পারেন না। এধরণের মানুষকে নিয়ে কাজ করা খুবই কঠিন। বাইরে অন্যান্য শিশুদের সাথে খেলাধূলা করা শিশুর মাঝে দলবদ্ধ হয়ে কাজ করার যোগ্যতা তৈরি করে।

উপস্থিত বুদ্ধি তৈরি করে
শিশুরা সবাই মিলে বানিয়েছে অনেক গুলো কাগজের নৌকা। ভাসিয়ে দিয়েছে জমে থাকা মাঠের পানিতে। কিন্তু কেন যেন ডুবে যাচ্ছে কারও কারও নৌকা। একসাথে চলছে ব্যাডমিন্টন খেলা। আলো যখন কমে এসেছে সে সময়ই নষ্ট হয়ে গেল খেলার কোটের লাইট। এমন অনেক সমস্যার সমাধান করতে হয় তাৎক্ষণিক। ঘরে বসে যা কখনোই শেখা সম্ভব নয়।

দায়িত্ব নিতে শেখায়
শিশুরা দায়িত্ব এড়াতে জানে না। তারা যখনই সমস্যার সম্মুখীন হয় তখনই সেটার সমাধান করার জন্য বুদ্ধি বের করতে থাকে আর সবাইকে নিয়ে কিছু না কিছু একটা সমাধান বের করে ফেলে। ঘরে বসে ভিডিও গেমস খেলা শিশুদের কোন দায়িত্বই নিতে হয় না। সরাসরি যে শিক্ষা পাওয়ার কথা শুধু মৌখিক উপদেশ প্রদাণে তা কখনোই গড়ে ওঠে না।

সুত্র : চাইল্ড মাইন্ড ইন্সটিটিউট

সম্পাদনা  : রুমানা বৈশাখী