কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

সাহিত্যকর্মী ও প্রকাশক কাজী হাসান। ছবি: আবু সুফিয়ান জুয়েল, প্রিয়.কম।

মানুষ তার ভালোলাগার দিনগুলোর সঙ্গে বৃক্ষ রোপণকে জড়িয়ে নিক: কাজী হাসান

শিবলী আহমেদ
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ৩১ মে ২০১৭, ১৭:৪৮
আপডেট: ৩১ মে ২০১৭, ১৭:৪৮

(প্রিয়.কম) সাহিত্যকর্মী ও প্রকাশক কাজী হাসান। বৃক্ষের সঙ্গে তার প্রেম দীর্ঘদিনের। স্বপ্ন ছিল নিজের একটি বাগান করার। সেই স্বপ্ন বাস্তবে ধরা দেয় ২০১২ সালের ২৩ জুন। একটি কাঠবাদাম গাছ রোপণের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল তার বাগানের অনানুষ্ঠানিক যাত্রা। ঢাকার অদূরে মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার ভবেরচরে প্রায় ১৯ কাঠার জমির ওপর তার বাগান অবস্থিত। বাগানের নাম ‘সোনারং তরুছায়া’। পাঁচ বছর ধরে সেই বাগানের গাছেদের সঙ্গে তার সখ্যতা। বৃক্ষের প্রতি গভীর মমত্ববোধ নিয়ে গড়ে তুলেছেন ‘শাইখ সিরাজ ফার্মার্স ক্লাব’। গত সপ্তাহে ব্যস্ত ছিলেন ‘জাতীয় ফুল শাপলা বাঁচাই শাপলায় সাজাই’ নামক একটি উদ্যোগ নিয়ে। বরেণ্য ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে ‘স্মারক বৃক্ষ’ও রোপণ করে থাকেন তিনি। আসন্ন পরিবেশ দিবস উপলক্ষে প্রিয়.কম কথা বলে ‘গাছ ভাই’ নামে পরিচিত বৃক্ষপ্রেমী কাজী হাসানের সঙ্গে।

প্রিয়.কম: আপনার বাগান তথা বৃক্ষ নিয়ে কার্যক্রমের নাম ‘সোনারং তরুছায়া’ হলো কীভাবে?

কাজী হাসান: আসলে বৃক্ষ রোপণ, বৃক্ষ সংরক্ষণ এগুলো নিয়ে আমি মূলত কাজ করি । আমার একটি বাগান রয়েছে। আমার কার্যক্রম ও বাগানের নাম একই- ‘সোনারং তরুছায়া’। 'সোনারং' নামটি বিক্রমপুরের একটি গ্রামের নাম। এ গ্রামে অনেক খ্যাতিমান লোকের জন্ম। এই গ্রামে জন্ম নেওয়া ব্যক্তিত্ব পণ্ডিত ক্ষিতিমোহন সেন, রবীন্দ্রনাথের নিয়োগকৃত শান্তি নিকেতনের প্রথম ভিসি ছিলেন। ক্ষিতিমোহন সেন যখন সোনারং ছেড়ে কলকাতায় চলে গেলেন, তখন তার মানসিকভাবে ভালো লাগাটা ছিল না! এই যে গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়া। তিনি শান্তি নিকেতনে তার বাড়ির নাম দিয়েছিলেন সোনারং। এবং সেই বাড়িতে বড় হন তাঁর নাতি নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেন। তাছাড়া সোনারং একটি পজিটিভ নাম, তাই নেওয়া। আর তরুছায়া তো শাব্দিক অর্থেই বোঝা যায় গাছের ছায়া। একটি ব্যক্তিগত বাগানকে 'সোনারং তরুছায়া' নামে পরবর্তীতে আমার কার্যক্রমে রূপায়িত করেছি। 'সোনারং' নামে আমি বরেণ্য ব্যক্তিত্বগণের ওপর গবেষণামূলক কাজ করি। আমাদের একটি লিটলম্যাগ বের হতো ‘সোনারং’ নামে। আমি যখন বৃক্ষবিষয়ক কাজ করি, তখন সেটাকে বলি- সোনারং তরুছায়া। আর রাতে আমি যেখানে ঘুমাই, মানে আমাদের নারায়ণগঞ্জের বাড়িটির নাম 'সোনারং গৃহছায়া'।

প্রিয়.কম: এ ধরনের কার্যক্রমের মূল উদ্দেশ্য কী?

কাজী হাসান: বৃক্ষ রোপণকে কীভাবে আরও নান্দনিকভাবে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, সে চেষ্টা করছি। বৃক্ষ রোপণ নানাভাবেই হয়, তার মধ্যে আবেগ কতটুকু থাকে জানি না। কিন্তু আমি আবেগ দিয়ে, শৈল্পিকভাবে কাজটি করতে চেয়েছি। আমি চাই মানুষ তার ভালো লাগার দিনগুলোর সঙ্গে বৃক্ষ রোপণকে জড়িয়ে নিক। যেমন জন্মদিনে বা কারো বিয়ের দিনে গাছ লাগানোর একটা ব্যাপার থাকতে পারে। সন্তান জন্ম হওয়ার দিন বাবা মা দশটি গাছ লাগিয়ে ফেলতে পারেন। পরবর্তীতে সন্তানদের বিয়ে দেওয়া বা অন্য কোনো আর্থিক প্রয়োজনীয়তায় এই গাছগুলো থেকে অর্থের জোগান পাওয়া যাবে। মানে যে কোনো উৎসবের সঙ্গেই একটি গাছকে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে।

প্রিয়.কম: মুন্সিগঞ্জের যে জমির ওপর আপনার বাগানটি অবস্থিত, সেটি কি আপনার নিজের নাকি সরকারি অনুদান?

কাজী হাসান: আমার পৈতৃক জমি। সরকার প্রদত্ত জমি পাওয়ার কোনো ভাবনা নেই। কেননা এতে যে লবিং এবং অনেক সময় যে নোংরামি করতে হয়, তাতে গাছের প্রতি আমার ভালোবাসা কমে যেতে পারে।

প্রিয়.কম : আপনার বনায়ন কী ঐ বাগান পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকবে, নাকি জমির পরিমাণ আরও বাড়িয়ে বৃক্ষ রোপণ করবেন?

কাজী হাসান: আমি একটি গাছ কিনতে পারি ৩০ টাকায়, কিন্তু একটি জমি কিন্তু ৩০ টাকায় পাওয়া যায় না। আমার বাগান আরও বড় হোক, আরও গাছ সেখানে লাগাব- এটা আমি চাইছি না। আমি এখন চাই অন্যের বাগান সমৃদ্ধ করতে। সেই অর্থে কাজ করে যাচ্ছি। আমার বাগানটি একটা অ্যাড্রেস মাত্র। মানে একটি কেন্দ্র, সেখান থেকেই আমি আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাগুলো করি আর কি!

প্রিয়.কম: এত বড় একটি বাগানের পরিচর্যার খরচ আসে কীভাবে?

কাজী হাসান: শখের বসে বাগানটি করা, যখন জমিটি বাগান উপযোগী করা হয়, আমাদের মুন্সিগঞ্জ হচ্ছে অপেক্ষাকৃত নিম্নাঞ্চল। সেখানে হুট করেই একটি জায়গায় বাগান করা যায় না। বর্ষাকালে জমি তলিয়ে যায়, মাসতিনেক পানির নিচে থাকে। যে কারণে ভিটি করতে হয়, বালি কিংবা মাটি দিয়ে ভরাট করতে হয়। আগে আমার এত পরিকল্পনা ছিল না। একটি দুটি গাছ রোপণ করতে করতে সেখানে এখন প্রায় ১৮০ প্রজাতির প্রায় সাড়ে তিনশটি গাছ রয়েছে। তো এটার খরচ আমি আমার ব্যক্তিগত উপার্জন থেকেই বহন করি। আমার ওখানে দুজন লোক পরিচর্যার কাজ করে। সব মিলিয়ে উক্ত বাগানের পেছনে আমার দৈনিক ৬৫০ টাকা খরচ হয়।

প্রিয়.কম: তাহলে তো খরচ বহন করতে আপনার কিছুটা কষ্ট হয়...

কাজী হাসান: একটু তো হয়ই। সেটা একটু কষ্ট করেই করি আরকি আমি। তবে সময়টা সামনে এমন আসছে যে- কিছু কিছু মানুষ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন।

প্রিয়.কম: কেউ কোনো রূপ সহযোগিতা করে না?

কাজী হাসান: এটা মূলত গাছ দিয়ে সহযোগিতা। এটা বৈষয়িক কোনো সহযোগিতা নয়। গাছ দিয়ে যে সহযোগিতা করা হয়, সেটি নিতে গেলে বরং ব্যয় বাড়ে, কমে না। আসলে পৃষ্ঠপোষকতার কথা ঘোষণা দিয়ে বলার মতো কিছু নেই, তেমন কারো নামও নেই।

বৃক্ষপ্রেমী কাজী হাসান। ছবি: আবু সুফিয়ান জুয়েল; প্রিয়.কম।

প্রিয়.কম: রোপণের ক্ষেত্রে কোন ধরনের গাছকে আপনি বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন?

কাজী হাসান: আমি প্রথমত ফলদ গাছকে বেশি গুরুত্ব দিই। আপনি একটি ফল বাগান করলে- এক গাছ থেকে আরেক গাছের মধ্যে যে দূরত্ব, তার মধ্য খানে আপনি একটু খালি জায়গা পাবেন। সেই খালি জায়গায় আপনি ফুলগাছ রোপণ করতে পারেন। এটা সম্ভব। যদি ফল গাছের ছায়া বেশি হয়, তাহলে সেটা সম্ভব না। কিন্তু কোনো ফল গাছের ছায়া দেওয়ার মতো অবস্থায় পৌঁছতে সময় লাগবে পাঁচ বছরের মতো। তো উক্ত সময়ে দুটি ফল গাছের মাঝখানে ফুলগাছ রোপণ করতে পারেন। ফুল গাছ মানুষের মনের চাহিদা পূরণ করবে। এতে মানুষ উৎসাহিত হয়ে অন্য গাছেরও যত্ন নেবে।

প্রিয়.কম: কাঠ পাওয়া যায়-এমন বৃক্ষ রোপণ করলে তো আর্থিক সচ্ছলতা চলে আসে…

কাজী হাসান: আমরা মূলত কাঠ গাছকে বেশি গুরুত্ব দিই, কিন্তু কাঠ গাছকে আমি সব ক্ষেত্রে রোপণের পরামর্শ দিই না। কারণ কাঠ গাছই একমাত্র গাছ- যাকে রোপণই করা হয় কেটে ফেলার ইচ্ছায়। মানে দীর্ঘ ভালোবাসা নিয়ে সেটি রোপণ করা হয় না। ১০ বা ২০ বছর পর কেটে ফেলার উদ্দেশ্যেই সেটি রোপণ করা হয়। সে জন্যই পাহাড়ি গাছ বা কাঠ পাওয়া যায় এমন গাছকে আমি একটু কম গুরুত্ব দিই। তবে ঐ যে যেটা বললাম- কেউ যদি তার সন্তানের ভবিষ্যতের আর্থিক জোগান হিসেবে কাঠ গাছ রোপণ করতে চান, করতে পারেন। একটি গরিব ঘরের শিশু, শিশুটি যেদিনই স্কুলে ভর্তি হবে, সেদিনই যদি ওর হাত দিয়ে একটি গাছ লাগান হয়, তাহলে ভবিষ্যতে ওর কোনো পরীক্ষার খরচ মানে ফরম ফিলআপের সময় সেই গাছটি বিক্রয় যোগ্য হয়ে উঠবে। তখন সেই গাছ থেকে ওর ফরম ফিলআপের টাকা আসতে পারে। কিংবা উচ্চ শিক্ষার জন্য কোথাও ভর্তির টাকা চলে আসতে পারে। কিন্তু আমি চাই মানুষ কাঠ গাছের তুলনায় ফল ধরে- এমন গাছের উপর বেশি গুরুত্ব দিক।

প্রিয়.কম: ‘শাইখ সিরাজ ফার্মার্স ক্লাব’ গড়ে তোলার পেছনে কারণ কী?

কাজী হাসান: গাছ রোপণ কিংবা কৃষি নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে, আমরা যারা নগরে থেকে বড় হয়েছি, তারা কিন্তু কৃষকদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে কৃষিতে ফিরে যাইনি। অনেকে গাছ রোপণ করা কিংবা পোল্ট্রি করা এগুলোতে সরাসরি কৃষকদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হইনি। আমার কাছাকাছি চলে এসেছিল- শাইখ সিরাজের ভূমিকাটি। উনি হচ্ছেন আমার দেখা একমাত্র ব্যক্তিত্ব যিনি গণমাধ্যমের মধ্য দিয়ে কৃষি ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখা ব্যক্তি। সেই ভালোবাসা থেকে, তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা রেখে, আমি 'শাইখ’ সিরাজ' নামটি ব্যবহার করে আমাদের কার্যক্রমের একটি ইউনিট পরিচালনা করি। এটি আমারই প্রতিষ্ঠিত, এটা শাইখ সিরাজ ভাইয়ের কোনো সহযোগিতা নিয়ে নয়, তাঁর প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশের মধ্য দিয়ে এটি প্রতিষ্ঠা করেছি।

প্রিয়.কম: স্মারক বৃক্ষ হিসেবে কী কী গাছ রোপণ করা হয়?

কাজী হাসান: স্মারক বৃক্ষ হচ্ছে- যে ব্যক্তির উদ্দেশ্যে স্মারক বৃক্ষটি রোপিত হবে, তাঁর পছন্দের কোনো বৃক্ষ রোপণ করা হয়ে থাকে।

প্রিয়.কম: আপনি আপনার বৃক্ষ রোপণের সঙ্গে তারকাদের যুক্ত করে কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন। এটি কোন উদ্দেশ্যে?

কাজী হাসান: তারকাদের মানুষ অনুকরণ করেন, অনুসরণ করেন। তাদের ভালোলাগাকে নিজের মধ্যে ধারণ করতে চান। এজন্য আমি তাঁদের সঙ্গে আমাকে রেখেছি। আমাদের দেশের অনেক তারকাই নিভৃতে বৃক্ষপ্রেমী, তাঁদের মধ্যে অনেকেই বৃক্ষ নিয়ে কাজ করেন- এটা কিন্তু তেমন একটা প্রচার পায় না। আমি চাই সেই প্রচারটিও হোক।

প্রিয়.কম: সাহিত্যের সঙ্গে আপনার এই বৃক্ষ প্রেমকে যুক্ত করলেন কীভাবে?

কাজী হাসান: আমি এখানে লেখকদের এনেছি মানে বৃক্ষপ্রেমী ব্যক্তিত্বদের এনেছি। যেমন হুমায়ূন আহমেদ হচ্ছেন আমাদের কথাসাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। তিনি কিন্তু লেখালেখি ছাড়াও একটি বৃহৎ কাজ করে গিয়েছেন। আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় ভেষজ বাগানের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। আমি হুমায়ূন আহমেদের বাগান থেকে কিছু গাছ এনে আমার নিজের বাগানে রোপণ করেছি। যেমন- নীল গাছ, ও কারি পাতা গাছসহ আরও কয়েকটি গাছ এনেছি। ভবিষ্যতে আরও অনেক লেখক বা তারকাদের আমি এর সঙ্গে যুক্ত করব।

প্রিয়.কম: নীল গাছটি বর্তমানে কী অবস্থায় আছে?

কাজী হাসান: নীল গাছ আসলে দীর্ঘজীবী গাছ নয়, এই গাছটির বীজ মাটিতে পড়লে আবার চারা জন্মায়। আপনি যদি আপনার বাগানে লজ্জাবতী গাছ রোপণ করেন, সে গাছ যদি বছর খানেক পর মারাও যায়, সে গাছের প্রজন্ম মারা যাবে না কখনো। এর বীজ মাটিতে পড়ে প্রতি বছরই অজস্র গাছ জন্মাবে। সেটা আমাদের অন্যান্য শস্যের ক্ষেত্রেও হতে পারে। নীল তো একটা শস্যই।

বৃক্ষপ্রেমী কাজী হাসান। ছবি: আবু সুফিয়ান জুয়েল; প্রিয়.কম।

প্রিয়.কম: শুনেছি আপনারা প্রতি বছর বৃক্ষ উৎসবের আয়োজন করে থাকেন...

কাজী হাসান: শাইখ সিরাজ ভাইয়ের নামে যে ইউনিটটি করেছিলাম, সেখান থেকেই বৃক্ষ উৎসব করতে চেয়েছিলাম। পরে দেখলাম - আমাদের এখানে দল বা ব্যক্তির নামে সার্বজনিন কোনো কাজ করা মুশকিল। যে কারণে শাইখ সিরাজ ফার্মার্স ক্লাব থেকে কিছু কাজ করে যাচ্ছি, কিন্তু এখন আমি আমার মূল নামে মানে সোনারং তরুছায়ায় ফিরে এসেছি। সোনারং তরুছায়া থেকে জুন- জুলাই মাসের মধ্যেই বৃক্ষ উৎসব আয়োজিত হয়। এটি দুমাস ব্যাপী চলে। আমরা যে নানা জায়গায় বৃক্ষ রোপণের কথা বলে যাই, তারই একটি আনুষ্ঠানিক রূপ হচ্ছে বৃক্ষ উৎসব।

প্রিয়.কম: বৃক্ষ উৎসবে আসলে কী কী করা হয়?

কাজী হাসান: গাছ বিতরণে উৎসাহিত করা, আমরা নিজে থেকে বিতরণ করি এবং অন্যকে বিতরণে উৎসাহিত করি। এগুলোই হচ্ছে উৎসবের কাজ।

প্রিয়.কম: ‘জাতীয় ফুল শাপলা বাঁচাই, শাপলায় সাজাই’- এটি মূলত কী এবং কেন এর আয়োজন?

কাজী হাসান: এটি একটি ইভেন্ট। এটি করেছে আমাদের সহযোগী সংগঠন। সমমনা তিনটি সংগঠন মিলে করেছে।  মতিঝিলের শাপলা চত্বরের শাপলা একটি ভাস্কর্য। ঢাকায় 'শাপলা সরোবর' তৈরি করা উচিত। আমাদের উচিত আমাদের জাতীয় ফুলকে নানাভাবে রিপ্রেজেন্ট করা। ভারতের জাতীয় ফুল পদ্ম, ওরা কিন্তু ওদের সর্বোচ্চ সম্মাননাটি প্রদান করে ‘পদ্মশ্রী’ নামে। আমরাও কিন্তু  ‘শাপলা সম্মাননা’ প্রচলন করতে পারি।

প্রিয়.কম: বিলুপ্তপ্রায় গাছ, যেমন ধরুন নাগলিঙ্গম কিংবা তালি পাম- এগুলো সংরক্ষণে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন কী?

কাজী হাসান: আমাদের বিলুপ্ত প্রায় গাছ নিয়ে কার্যক্রম কম। ভূমিকা কম। এ নিয়ে আমি তেমনভাবে কাজ করিনি। আপনি যে দুটি গাছের নাম বললেন, এর মধ্যে তালি পামের ফুল ফোটে অনেক দেরিতে। কিন্তু আমাদের দেশে এখন বনায়ন যোগ্য জমির সংকট। ফুল গাছ রোপণের জন্য যে জমি থাকতেই হবে তেমন কিন্তু না। আপনি ইচ্ছা করলে বাড়ির ছাদেও ফুলগাছ রোপণ করতে পারবেন। নাগলিঙ্গম বা তালিপাম কিন্তু ছাদে রোপণ করা সম্ভব না। তবে আমাদের দেশে বেশ কিছু সংগঠন রয়েছে যারা এগুলো নিয়ে কাজ করে। আমি শুধু চেয়েছি ভালোলাগা গাছগুলোকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে। বিলুপ্তপ্রায় গাছগুলোর প্রতি মানুষের ভালোলাগা এখনও তৈরি হয়নি। মানুষ অনেক সময় এসব গাছ সম্পর্কে জানেও না। যা হোক, বিলুপ্তপ্রায় গাছ রক্ষার্থে যারা কাজ করে যাচ্ছেন, তাঁদের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। তারা এ কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাক এবং সরকার এ বিষয়ে সহায়তা করুক- সে কামনা করি। কারণ বিলুপ্ত প্রায় গাছ রক্ষার্থে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দরকার, সরকারি উদ্যানগুলোতে এ গাছগুলো রোপণ করা দরকার।

প্রিয়.কম: বিমানবন্দর সড়কে সম্প্রতি যেসব বনসাই স্থাপন করা হয়েছে, সে বিষয়ে আপনার অভিমত কী?

কাজী হাসান: সেগুলো বনসাই না। দেখতে বনসাইয়ের মতো। আসলে দুই আড়াই ফুটের উপরে বনসাই হয় না। এগুলো আসলে অর্নামেন্টাল গাছ।, যা বেশি ছায়া দেবে না, আর অত বেশি মায়াও দেবে না। এটাকে আমি অতটা সমর্থন করি না। এই গাছগুলো যদি তেমন রঙিন পাতা বিশিষ্ট হতো, মনকাড়া রঙের হতো, তাহলে আমি মেনে নিতাম। সরকার যদি এখানে হিজল, কৃষ্ণচূড়া, জারুল কিংবা বকুল গাছ লাগানোর ব্যবস্থা করতেন তাহলে ভালো হতো।

প্রিয়.কম: বিদেশী গাছের আমদানিতে আমাদের দেশজ বৃক্ষরোপণের উপর কোনোরূপ নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে কি?

কাজী হাসান: নেগেটিভ প্রভাব ফেলবে না। কারণ বিদেশী গাছ যেগুলো ব্রিটিশ আমলে আমাদের এখানে এসেছিল সেগুলো কিন্তু রয়েই গিয়েছে। যেমন ধরুন ইউকিলিপটাস। এই গাছ প্রচুর পানি শোষণ করে। পাশের গাছকে সে পানি নিতে দেয় না। আকাশমনি গাছের নামেও এ ধরনের একটি বদনাম শোনা যায়। যদিও আমার বাগানে থাকা আকাশমনি গাছের নিচেই একটি সজীব টগর গাছ রয়েছে। মানে আমি সত্যতা পাইনি।  তাছাড়াও আমরা কিন্তু বিদেশী ফলের প্রতি একটু বেশিই আগ্রহী। আমরা ড্রাগন ফল ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে কিনি। বা ধরুন স্ট্রবেরি- এই গাছগুলো যদি আমাদের দেশে আরও বেশি করে রোপণ করা হয়, তাহলে বিদেশী ফলের প্রতি দেশি মানুষের মোহ কেটে যাবে, পাশাপাশি পুষ্টির ঘাটতিও কমবে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমরা আমাদের দেশিগাছ কেটে বিদেশী গাছ রোপণ করব।

প্রিয়.কম: আপনি বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে পরিবেশের জন্য সহায়ক ভূমিকা রেখে চলেছেন...

কাজী হাসান: আমি কিন্তু পরিবেশের কথা ভেবে গাছ রোপণ করিনি। আমি আমার ভালোলাগার কথা ভেবে গাছ রোপণ করেছি। এই ভালোলাগার গাছ থেকে যদি আমি ফল পাই, ফুল পাই, কাঠ কিংবা ছায়া- যা-ই পাই তা আমার জন্য বোনাস পাওয়া। পরিবেশের উন্নতি হলে সেটাও আমার কাছে বোনাস। হ্যাঁ, আমার বৃক্ষ রোপণ পরিবেশ সহায়ক হচ্ছে- এটা তো মাথার ভিতরে ছিলই কিন্তুতো ভেবেই আমার বৃক্ষ রোপণে নামা নয়। কারণ পরিবেশকে আমি ভালোবাসলে তো আমি- রাস্তায় ময়লা ফেলতাম না, আমি কাগজ ফেলতাম না। সেগুলো তো আমি পরিষ্কার করছি না সেভাবে। আমি থুতু ফেলছি, আমরা যে কোনো একটি দেওয়াল ঘেঁষে প্রস্রাব করতে দাঁড়িয়ে যাচ্ছি। তো আমরা গাছ নিয়েই কেন এত পরিবেশ সংক্রান্ত কথা বলব! আমরা অন্য কিছু নিয়েওতো পরিবেশ সচেতন হতে পারি। তবে হ্যাঁ, এটি বোনাস। বৃক্ষ যদি বেশি রোপিত হতো, আমাদের পরিবেশ আরও স্বস্তিকর হতো।

বৃক্ষপ্রেমী কাজী হাসান। ছবি: আবু সুফিয়ান জুয়েল; প্রিয়.কম।

প্রিয়.কম: বাইরের দেশগুলোতে ‘বৃক্ষ শোভিত ভবন’ চোখে পড়ে। আমাদের দেশে সেরকম হলে মন্দ হতো না...

কাজী হাসান: যিনি আর্কিটেক্ট, তার যদি বৃক্ষ প্রেম থাকে, তাহলে আমি নিশ্চিত যে উনি বাড়ির ডিজাইনে কোনো না কোনো ভাবে গাছ নিয়ে আসবেন। এটা এভাবে হতে পারে যে- রাজউক তো প্ল্যানগুলো দেয়, তো রাজউক একটি শর্ত দিয়ে দিতে পারে- যে বিল্ডিং এর প্ল্যানের মধ্যে গাছ থাকতে হবে। এটা করা যেতেই পারে কারণ একটি ভবন নির্মানে যত টাকা ব্যয় হয়, ভবনটি ঘিরে যদি পাঁচ লক্ষ টাকার গাছ লাগানো হয় তাতে তেমন কোনো আর্থিক ক্ষতি হবে না। যেহেতু গাছ অক্সিজেন দেয়, সেহেতু বিল্ডিংকে ঘিরে লাগানো গাছ আমাদের অক্সিজেন দেবে, এতে আমরা উপকৃতই হব। তাছাড়াও এখন যারা নগর পিতা রয়েছেন, তারা কিন্তু ট্যাক্স মউকুফের একধরনের ঘোষণা দিয়েছেন। যারা ছাদ বাগান করবেন- রেশিও অনুযায়ী তাঁদের ট্যাক্স কমানো হবে। এটি খুব ভালো একটি উদাহরণ। এর পাশাপাশি নগর পিতাগণ এক ধরনের পুরস্কারের আয়োজন করতে পারেন যাতে মানুষ বৃক্ষ রোপণে আগ্রহী হন।

প্রিয়.কম: প্রসঙ্গ সুন্দরবন বনাম রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র...

কাজী হাসান: আমি সব সরকারের আমলেই দেখেছি- যেটি নিয়ে একটু বেশি বিতর্ক হয়, সেটি নিয়েই কেন যেন সরকার একদম গেড়ে বসে! তা করতেই হবে! সরকার অন্তত সবার কথা না শুনুক, কিছু লোকের কথা শুনুক। রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র না দিয়ে আরেকটু দূরে স্থাপন করা যেতে পারে। এই সুন্দরবনের কারণেই কিন্তু সিডরের মতো একটি ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিছুটা হলেও প্রশমিত হয়েছিল। হ্যাঁ আমাদের বিদ্যুতের প্রয়োজন আছে কিন্তু সুন্দরবনের ভারসাম্য রক্ষা না করে নয়।

প্রিয়.কম: কাগজ তৈরিতে বৃক্ষ নিধন অপরিহার্য। সুতরাং কাগজের সংবাদপত্র বনাম অনলাইন সংবাদ- কোনটিকে সমর্থন করেন?

কাজী হাসান: সত্য কথা বলতে কি- সময়টা আসলে কাগজের দিকে ঝুঁকে থাকার নয় বা সময় এরকম থাকবে না। আধুনিকতাকে মেনে নিতে হবে। একটা সময় আমরা হয়তো সব কিছুতেই ভার্চুয়ালি নির্ভর করব।

প্রিয়.কম: কাঠের আসবাবপত্র ব্যবহারে আপনার কোনো মতান্তর রয়েছে কী?

কাজী হাসান: ঐ যে বললাম- আমরা কাঠ গাছ রোপণই করি কেটে ফেলার জন্য। এখনতো কাঠের বিকল্প আসবাব বের হয়েছে। আর যারা কাঠের ফার্নিচারের ব্যবসা করছেন- তারা নিজেদের জায়গায় ১০ হাজার গাছ রোপণ করে নিক। সেগুলো দিয়ে তারা আসবাবপত্র বানিয়ে বিক্রি করুক।

প্রিয়.কম: আপনি বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে পরিবেশের জন্য সহায়ক ভূমিকা রেখে চলেছেন...

কাজী হাসান: আমি কিন্তু পরিবেশের কথা ভেবে গাছ রোপণ করিনি। আমি আমার ভালোলাগার কথা ভেবে গাছ রোপণ করেছি। এই ভালোলাগার গাছ থেকে যদি আমি ফল পাই, ফুল পাই, কাঠ কিংবা ছায়া- যা-ই পাই তা আমার জন্য বোনাস পাওয়া। পরিবেশের উন্নতি হলে সেটাও আমার কাছে বোনাস। হ্যাঁ, আমার বৃক্ষ রোপণ পরিবেশ সহায়ক হচ্ছে- এটা তো মাথার ভিতরে ছিলই কিন্তুতো ভেবেই আমার বৃক্ষ রোপণে নামা নয়। কারণ পরিবেশকে আমি ভালোবাসলে তো আমি- রাস্তায় ময়লা ফেলতাম না, আমি কাগজ ফেলতাম না। সেগুলো তো আমি পরিষ্কার করছি না সেভাবে। আমি থুতু ফেলছি, আমরা যে কোনো একটি দেওয়াল ঘেঁষে প্রস্রাব করতে দাঁড়িয়ে যাচ্ছি। তো আমরা গাছ নিয়েই কেন এত পরিবেশ সংক্রান্ত কথা বলব! আমরা অন্য কিছু নিয়েওতো পরিবেশ সচেতন হতে পারি। তবে হ্যাঁ, এটি বোনাস। বৃক্ষ যদি বেশি রোপিত হতো, আমাদের পরিবেশ আরও স্বস্তিকর হতো।

প্রিয়.কম: বাইরের দেশগুলোতে ‘বৃক্ষ শোভিত ভবন’ চোখে পড়ে। আমাদের দেশে সেরকম হলে মন্দ হতো না...

কাজী হাসান: যিনি আর্কিটেক্ট, তার যদি বৃক্ষ প্রেম থাকে, তাহলে আমি নিশ্চিত যে উনি বাড়ির ডিজাইনে কোনো না কোনো ভাবে গাছ নিয়ে আসবেন। এটা এভাবে হতে পারে যে- রাজউক তো প্ল্যানগুলো দেয়, তো রাজউক একটি শর্ত দিয়ে দিতে পারে- যে বিল্ডিং এর প্ল্যানের মধ্যে গাছ থাকতে হবে। এটা করা যেতেই পারে কারণ একটি ভবন নির্মানে যত টাকা ব্যয় হয়, ভবনটি ঘিরে যদি পাঁচ লক্ষ টাকার গাছ লাগানো হয় তাতে তেমন কোনো আর্থিক ক্ষতি হবে না। যেহেতু গাছ অক্সিজেন দেয়, সেহেতু বিল্ডিংকে ঘিরে লাগানো গাছ আমাদের অক্সিজেন দেবে, এতে আমরা উপকৃতই হব। তাছাড়াও এখন যারা নগর পিতা রয়েছেন, তারা কিন্তু ট্যাক্স মউকুফের একধরনের ঘোষণা দিয়েছেন। যারা ছাদ বাগান করবেন- রেশিও অনুযায়ী তাঁদের ট্যাক্স কমানো হবে। এটি খুব ভালো একটি উদাহরণ। এর পাশাপাশি নগর পিতাগণ এক ধরনের পুরস্কারের আয়োজন করতে পারেন যাতে মানুষ বৃক্ষ রোপণে আগ্রহী হন।

প্রিয়.কম: প্রসঙ্গ সুন্দরবন বনাম রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র...

কাজী হাসান: আমি সব সরকারের আমলেই দেখেছি- যেটি নিয়ে একটু বেশি বিতর্ক হয়, সেটি নিয়েই কেন যেন সরকার একদম গেড়ে বসে! তা করতেই হবে! সরকার অন্তত সবার কথা না শুনুক, কিছু লোকের কথা শুনুক। রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র না দিয়ে আরেকটু দূরে স্থাপন করা যেতে পারে। এই সুন্দরবনের কারণেই কিন্তু সিডরের মতো একটি ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিছুটা হলেও প্রশমিত হয়েছিল। হ্যাঁ আমাদের বিদ্যুতের প্রয়োজন আছে কিন্তু সুন্দরবনের ভারসাম্য রক্ষা না করে নয়।

প্রিয়.কম: কাগজ তৈরিতে বৃক্ষ নিধন অপরিহার্য। সুতরাং কাগজের সংবাদপত্র বনাম অনলাইন সংবাদ- কোনটিকে সমর্থন করেন?

কাজী হাসান: সত্য কথা বলতে কি- সময়টা আসলে কাগজের দিকে ঝুঁকে থাকার নয় বা সময় এরকম থাকবে না। আধুনিকতাকে মেনে নিতে হবে। একটা সময় আমরা হয়তো সব কিছুতেই ভার্চুয়ালি নির্ভর করব।

প্রিয়.কম: কাঠের আসবাবপত্র ব্যবহারে আপনার কোনো মতান্তর রয়েছে কী?

কাজী হাসান: ঐ যে বললাম- আমরা কাঠ গাছ রোপণই করি কেটে ফেলার জন্য। এখনতো কাঠের বিকল্প আসবাব বের হয়েছে। আর যারা কাঠের ফার্নিচারের ব্যবসা করছেন- তারা নিজেদের জায়গায় ১০ হাজার গাছ রোপণ করে নিক। সেগুলো দিয়ে তারা আসবাবপত্র বানিয়ে বিক্রি করুক।

প্রিয়.কম: আপনার দৃষ্টিতে আমাদের দেশের বীজ ব্যাংক এর সম্প্রসারণ প্রয়োজন রয়েছে কি?

কাজী হাসান: হ্যাঁ, বীজ ব্যাংক বাড়ানো উচিত এবং বীজ ব্যাংক রাষ্ট্রীয়ভাবেই বাড়ানো উচিত। আমাদের যেসব নার্সারি রয়েছে, সেখানে নির্দিষ্ট কিছু গাছ ছাড়া অন্যান্য গাছ কিন্তু তেমন পাওয়া যায় না।বীজ তো নয়ই! তাই উপজেলাভিত্তিক বীজ ব্যাংক বাড়ানো উচিত বলে আমি মনে করি। কারণ বীজ নিয়েও বিশ্বস্ততার ঘাটতি রয়েছে আমাদের দেশে। তাই সরকারি উদ্যোগে বীজ ব্যাংক বাড়াতে হবে, যাতে মানুষ ভরসা করতে পারে।

প্রিয়.কম: আপনার সবচেয়ে সবচেয়ে প্রিয় গাছের নাম কী?

কাজী হাসান: প্রিয় গাছের নাম তিনভাগে বলতে হবে। একটা ফুলের দিকে বলতে হবে, একটা ফলের দিকে বলতে হবে, একটা কাঠের দিকে বলতে হবে। ফল গাছের মধ্যে কাঁঠাল গাছ, ফুলের ক্ষেত্রে শিউলি ফুল এবং কাঠের ক্ষেত্রে কাঠ বাদাম গাছ।

প্রিয়.কম: আপনার বাগানে এমন কী গাছ রয়েছে যা অন্য কোথাও নেই?

কাজী হাসান: তেমন তো হওয়া সম্ভব না, তাহলে তো আমার বাগানই লুট হয়ে যাবে। কারণ তখন হয়তো আগ্রাসী বৃক্ষপ্রেমিকেরা সেই গাছ তুলেও নিয়ে আসতে পারে। আমার বাগানে যা আছে যেটি অন্য বাগানে হয়তো নেই, সেটি হচ্ছে- গাছ তথা বাগানের প্রতি আমার তীব্র আবেগ!

প্রিয়.কম: পরবর্তী বছরের কর্ম পরিকল্পনা কী?

কাজী হাসান: আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে- শিশুদের কাছে বেশি করে গাছ পৌঁছে দেওয়া। কারণ শিশুরা যদি নিজের মধ্যে  শৈশবেই গাছের প্রতি ভালোবাসা তৈরি করতে পারে, তাহলে ওর জীবদ্দশায় আর কখনই বৃক্ষের প্রতি প্রেমের ঘাটতি হবে না। আমরা তো প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে অনেক কিছু ধারণ করি, সেটা যদি আমরা ছোটবেলা থেকেই ধারণ করতে পারতাম, তাহলে আমরা অনেক বেশি শুদ্ধ একটি পরিবেশ তৈরি করতে পারতাম।

প্রিয়.কম: আপনি তো একজন বৃক্ষপ্রেমী। প্রেমের প্রতিদানে কী পেলেন?

কাজী হাসান: এটার প্রতিদান হচ্ছে- এই যে, একটি গাছ বেড়ে উঠছে, গাছের কচি পাতা বের হচ্ছে, ফুল হচ্ছে- এটা ভালো লাগে। স্বাভাবিক কারণেই গাছের মধ্যে এগুলো ঘটে কিন্তু আমি মনে করছি- আমি গাছের সেবা করছি বলেই এই পাতা, ফুল কিংবা ফল হচ্ছে। এতে আমি একধরনের আনন্দের মধ্যেই থাকি। এটাই আমার প্রাপ্ত প্রতিদান।

প্রিয়.কম: দেশে আপনার মতোই অন্যান্য যত বৃক্ষপ্রেমী রয়েছেন, তাঁদের প্রতি আপনার বক্তব্য...

কাজী হাসান: তাঁরা প্রত্যেকেই অনেক শ্রদ্ধার ব্যক্তি আমার কাছে। আমি তো বৃক্ষকে ভালোবেসে এসেছি বৃক্ষ ভুবনে। অন্যান্য বৃক্ষপ্রেমীরা হয়তো অনেক তাত্ত্বিক জ্ঞান নিয়ে এসেছেন। অনেকেই এ বিষয়ে রিসার্চ করেন। তাঁরা বৃক্ষকে সম্প্রসারিত করার পদ্ধতিগুলো হয়তো জানেন। তাঁরা আমার চেয়ে অনেক ভালো কাজ করছেন। আমি তাঁদের তুলনায় কিছুই করিনি।

প্রিয়.কম: আপনার পরবর্তী পরিকল্পনা কী?

কাজী হাসান: আমি আরেকটি কাজ করতে যাচ্ছি- শেকড়ে শেকড় সম্প্রদান। মানে যাঁরা তারকা কিংবা ধনাঢ্য ব্যক্তি, যাঁরা তাঁদের শৈশবকাল গ্রামে কাটিয়েছেন, কিন্তু একটা পর্যায়ের পর তাঁর ব্যস্ততা বা অবস্থান তৈরি হবার পর হয়তো আর গ্রামমুখী হতে পারেননি, হয়তো গ্রামের মানুষ তাঁর উপর ক্ষোভ বা রাগ পুষে রেখেছেন, কারণ তিনি হয়তো তাঁর নিজ গ্রামের মানুষের জন্য কিছু করেননি বা করতে পারেননি, তেমন ব্যক্তিদের গ্রামমুখী করা। কারণ গ্রাম হচ্ছে তাঁর শেকড়। তাঁকে তাঁর গ্রামে নিয়ে গিয়ে, তাঁর বিদ্যাপীঠে তাঁর হাত দিয়ে বৃক্ষ রোপণ করানো। এতে শেকড়ে শেকড় সম্প্রদান করানো হবে। এছাড়াও উক্ত ব্যক্তি তাঁর বিদ্যাপীঠের বর্তমান শিক্ষার্থীদের হাতে গাছের চারা তুলে দিয়ে তাদেরকে বৃক্ষ রোপণে উৎসাহিত করবেন।

প্রিয়.কম: আসন্ন পরিবেশ দিবস উপলক্ষে আপনার ব্যক্তিগত উদ্যোগ কী?

কাজী হাসান: আমি প্রতি বছর পরিবেশ দিবসে একটি না একটি গাছ রোপণ করার চেষ্টা করি। এবারের পরিবেশ দিবসে আমি একাধিক গাছ রোপণ করব।

প্রিয়.কম: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

কাজী হাসান: প্রিয়.কম তার নামের মতোই প্রিয় হয়ে উঠেছে সবার কাছে। প্রিয়.কম যদি পরিবেশের কথা ভেবে, পরিবেশ নিয়ে কাজ করা আরও ব্যক্তিত্ব বা কর্মসূচীকে তুলে ধরে, তাহলে মানুষ আরও উৎসাহিত হবে। এটাই আমার কামনা। ধন্যবাদ প্রিয়.কমকে।

সম্পাদনা: প্রিয় সাক্ষাৎকার/গোরা