
ছবি সংগৃহীত
প্রিয় গন্তব্য: পুরানো ঢাকার ঐতিহাসিক জিনজিরা প্রাসাদ
প্রকাশিত: ২২ মার্চ ২০১৭, ১২:৪৮
আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৭, ১২:৪৮
আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৭, ১২:৪৮
ধ্বংসপ্রায় জিনজিরা প্রাসাদ। ছবি: সংগৃহীত।
(প্রিয়.কম): বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার সাথে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পলাশী নামক স্থানে যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল তাই পলাশীর যুদ্ধ নামে পরিচিত। এই যুদ্ধের মাধ্যমেই বাংলা নবাবদের শাসনকাল শেষ হয়, বাংলা বিহার উড়িষ্যার অধিপতির পতন হয়। যার ফলে ভারতবর্ষে পরবর্তী দু’শ বছর ব্যাপী ইংরেজদের শাসনকাল সূচনা হয়। রাজ্যহারা নবাব সিরাজদ্দৌলার স্ত্রী লুৎফুন্নেছা এবং তাঁর শিশুকন্যাকে মীরজাফর পুত্র মীরনের নির্দেশে ঢাকায় বন্দী করে রাখা হয়েছিল। সিরাজের পতনের পূর্ব পর্যন্ত ষড়যন্ত্রকারীরা ঘষেটি বেগমকে ব্যবহার করলেও সিরাজের পতনের পর আর তাকে কোনও সুযোগই দেয়া হয়নি। এ সময় তারা তাদের মা শরফুন্নেছা, সিরাজের মা আমেনা, খালা ঘষেটি বেগম, সিরাজের স্ত্রী লুৎফুন্নেছা ও তার শিশুকন্যা সবাইকে ঢাকার জিনজিরা প্রাসাদে বন্দী করে রাখা হয়। ঢাকার বর্তমান কেরানীগঞ্জে অবস্থিত এই জিনজিরা প্রাসাদে তারা বেশ কিছুদিন বন্দী জীবন যাপন করার পর মীরনের নির্দেশে ঘষেটি বেগম ও আমেনা বেগমকে নৌকায় করে নদীতে ডুবিয়ে মারা হয়।
লর্ড ক্লাইভের হস্তক্ষেপের ফলে শরফুন্নেছা, সিরাজের স্ত্রী লুৎফুন্নেছা এবং তাঁর শিশুকন্যা রক্ষা পান এবং পরবর্তীতে তাদেরকে মুর্শিদাবাদে আনা হয়। ইংরেজ কোম্পানি সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সামান্য বৃত্তির ওপর নির্ভর করে তাদেরকে জীবন ধারণ করতে হয়। সিরাজের মৃত্যুর দীর্ঘ ৩৪ বছর পর লুৎফুন্নেছা ১৭৯০ সালে ইন্তেকাল করেন।
কোথায়: বাংলাদেশের ঢাকা শহরের বুড়িগঙ্গা নদীর ওপারে কয়েক শ’ গজ দূরে অবস্থান। একসময় এটা ছিল নির্জন গ্রাম যার নাম হাওলি বা হাবেলি, বর্তমানে ঘিঞ্জি বসতি। ছোট গলিপথে একটু এগোতে একটা প্রবেশ তোরণ। তোরণের দুই পাশে স্থায়ী ভবন নির্মাণ করে আবাস গড়ে তোলা হয়েছে। চার দিকে দোকানপাট, ঘরবাড়ি, অট্টালিকায় প্রবেশ অনেক কষ্টসাধ্য।
কীভাবে যাবেন: বুড়িগঙ্গা নদী পার হয়ে সোয়ারীঘাট সংলগ্ন বড় কাটরায় গিয়ে খোঁজ করলেই নির্দেশনা পাওয়া যাবে।
ইতিহাস: প্রখ্যাত ব্রিটিশ লেখক জেমস টেইলর তার ‘টপোগ্রাফি অব ঢাকা’ বইতে নবাব ইব্রাহিম খাঁকে জিনজিরা প্রাসাদের নির্মাতা বলে উল্লেখ করেছেন। ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. মুনতাসির মামুন বলেন, জিনজিরা প্রাসাদের সঙ্গে অষ্টাদশ শতাব্দীর বাংলার ইতিহাসের এক বিষাদময় স্মৃতি জড়িত। নবাব সিরাজউদ্দৌলার মা, স্ত্রী ও শিশু কন্যা এক সময় এই জিনজিরা প্রাসাদে বন্দী ছিলেন। উমি চাঁদ, জগত শেঠ এবং রায় দুর্লভদের পরামর্শে প্রাসাদ থেকে মুর্শিদাবাদ নিয়ে যাবার ছল করে নওয়াজিস ঘষেটি বেগম, নবাব সিরাজের মা আমিনা বেগম, নওয়াজিসের উত্তরাধিকারী একরামউদ্দৌলার শিশুপুত্র মুরাদউদ্দৌলা, নবাব বেগম এবং শিশু কন্যাকে ধলেশ্বরীর বুকে ৭০ জন অনুচরসহ ডুবিয়ে হত্যা করা হয়। হোসেন কুলি ও সরফরাজের বংশধরগণ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে দেওয়ানী ভার অর্পণ করার পর বন্দীদশায় জিনজিরা প্রাসাদেই অবস্থান করছিলেন। ইতিহাসবিদ নাজির হোসেনের কিংবদন্তি ঢাকা গ্রন্থে বলা হয়, নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরিবারকে দীর্ঘ ৮ বছর জিনজিরা প্রাসাদে বন্দী করে রাখা হয়। মোগল শাসকদের অনেককে এই দুর্গে নির্বাসন দেয়া হয়েছিল।
৪০০ বছরের পুরাতন ধ্বংসপ্রায় এই প্রাসাদটি বাংলার বহু উত্থান পতনের সাক্ষী। আর কিছুদিনের মাঝে এই প্রাসাদ তার অস্তিত্ব হারাতে পারে। তাই ঐতিহাসিক এই স্থাপনাটি হারিয়ে যাবার আগেই দেখে আসুন।
তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া।
৬ মিনিট আগে
৯ মিনিট আগে
১০ মিনিট আগে
rtvonline.com
| বিজয়নগর
১৭ মিনিট আগে