ছবি সংগৃহীত

পাঠকের প্রশ্ন : আমার দ্বিতীয় স্ত্রী এখন তাঁর দ্বিতীয় স্বামীর কাছে ফিরে যেতে চায়...

রুমানা বৈশাখী
বিভাগীয় প্রধান (প্রিয় লাইফ)
প্রকাশিত: ২৬ জানুয়ারি ২০১৭, ১৭:০৭
আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৭, ১৭:০৭

ছবিটি প্রতীকী, দাম্পত্য প্রায়ই হয়ে উঠতে পারে কল্পনাতীত জটিল। ছবি : সংগৃহীত 

পাঠকের প্রশ্ন : আমরা ৮ ভাই, ৩ বোন। আমি সবার ছোট। খুব ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছি। তখন আমার বয়স ৩ বছর। বাবার স্মৃতি খুব কমই আছে আমার মনে। আমরা খুব সম্ভ্রান্ত পরিবার হওয়ায় আর্থিক কষ্ট বুঝিনি। আমার বড় ভাইয়েরা আমাদের মোটামুটি আগলে রেখেছিল।

ভাইয়েরা বাবার ব্যবসাই করেছে। আমি আর ইমিডিয়েট বড় ভাই, আমাদের বয়সের ব্যবধান ১ বছর। আমরা যখন ক্লাস এইটে পড়ি তখন বড় ভাইয়েরা সব বিষয়-সম্পদ ভাগ বাটোয়ারা করে দেয়। আমাদের ব্যবসা আলাদা করে দেয়। তখন থেকেই আমার স্ট্রাগলিং শুরু। আমি ব্যবসা আর পড়াশোনা দুটোই পাশাপাশি চালিয়ে যেতে থাকি। অনেক কষ্ট করেছি তখন। একসময় আমার ব্যবসা দাঁড়িয়ে যায়। আমিও মাস্টার্স কমপ্লিট করি।

এর মাঝে অনেকের সাথেই আমার পরিচয় হয়, কারও সাথে ভালো লাগা বা ভালবাসার সম্পর্কও গড়ে ওঠে। কিন্তু তা বেশি দূর গড়ায়নি। আমি মোটামুটি এস্টাবলিশড হয়ে যখন পাত্রী দেখা শুরু করি, তখন অনেক বেশিই পাত্রী দেখে ফেলি। বেশি বাছবিচার করতে গিয়ে আমার ফ্যামিলির ভাই-বোনদের একটু বেশিই বিরক্ত করে ফেলি হয়তো।

শেষে আমার বোন ঘটকের মাধ্যমে এক মেয়ের ছবি দেখায়। আমারও ভাল লাগে। আমরা ওই মেয়েকে সামনাসামনি ওদের বাড়িতে দেখতে যাই। গিয়ে আমি হতাশ হই, এ মেয়ে সে মেয়ে নয়। আর একে আমার পছন্দও হয়নি একটুও। আমি আমার বোনকে জানিয়ে দেই। আমার ভাই-বোন তার আগেই তাদের সাথে পজিটিভ আচরণ করতে থাকায় আমি জোরালোভাবে না বলতে পারি না। তখন আমি বলি এর ছোট বোনটিকে আমার পছন্দ হয়েছে, যদি ওরা রাজি হয়, তবে ছোটটিকে আমি বিয়ে করতে চাই। আমার বোন আমাকে আশ্বাস দেয়, ছোটটির ব্যাপারে সে কথা বলবে। তারপর আমরা ওদের বাড়ি আবার যাই কথা ফাইনাল করতে। কিন্তু গিয়ে জানতে পারি, ওরা বড়কে রেখে ছোটকে বিয়ে দিতে রাজি নয়। তারপর আমার ফুপাত ভাই আমাকে বুদ্ধি দেয়, বিয়ে কর। বউ এর সাথে শালি তো ফ্রি। আমিও বোকার মত চুপ করে থাকি এবং এখানেই বিয়ে করি।

বিয়ে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন ছিল। কিন্তু বিয়ের রাতেই আমি ব্যর্থ হই। আমাদের মধ্যে কোনো স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক হয় না আমার স্ত্রীর যোনিতে সমস্যার কারণে। সেদিন আমি খুব ভেঙে পড়ি। অনেকের মুখেই অনেক কথা শুনেছি এতদিন, তাহলে আমি কি শেষ পর্যন্ত কোন হিজড়াকে বিয়ে করেছি? মানসিকভাবে আমি শেষ হয়ে যাইতার পরদিন সকালে আমার বোনকে সব জানাই। আমার বোন তখনি ডিভোর্স দিতে বলে। কিন্তু আমি পারি না। আমার কেবলই মনে হতে থাকে আমি মেয়েটির জীবনে একটা দাগ ফেলে দিলাম। তারপর আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সাথে কথা বলে ওকে চিকিৎসা করাই এবং ধীরে ধীরে আমাদের জীবন স্বাভাবিক হয়।

সবকিছু ভালই চলছিল। এলাকায় আমার ক্ষমতা আর টাকার কারণে আমার স্ত্রী ধরাকে সরা জ্ঞান করতে শুরু করে। সংসারের কিছুই করে না সে। সারাদিন ফোন, টিভি, ফেসবুক এসব নিয়ে পড়ে থাকে। আমি বন্ধুদের সাথে খেলি, ঘুরি, আড্ডা দেই।আর ও সংসার ফেলে ছেলেদের সাথে ফোনালাপে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

তখন আমার একটা বাচ্চাও হয় এবং তা হঠাৎ করেই। কোনরকম প্ল্যান ছাড়াই। কিন্তু এতেও আমার স্ত্রীর কোনোরুপ কিছুই পরিবর্তন হয় না। সে তার মতোই চলতে থাকে। আমার বাচ্চাকেও সে দেখে না। আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন আমাকে বোঝায় যে ওর মানসিক সমস্যা আছে। তাদের কথামত আমি ওর মানসিক চিকিৎসাও করাই। তবুও কিছুই হয় না। আমার মেয়েকে আমি, আমার শাশুড়ি এবং শ্যালিকারা মিলে দেখাশোনা করি। এর মাঝেই আমার স্ত্রী আমার এক বন্ধুর সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে যায় এবং তা আমার অগোচরে।পরে আমি যখন সব জানতে পারি, তখন ওকে আমি আর মেনে নিতে পারি না। কিন্তু আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন আর আমার স্ত্রী কখনো আমার পা ধরে কান্নাকাটি করেছে, কখনো আমাকে ভয় ভীতি দেখিয়ে ডিভোর্স দিতে বাধা দেয়। এমতাবস্থায় আমার করনীয় কী?

এভাবেই গোঁজামিল দিয়ে আগোছালো ভাবে কোনরকমে চলছিল আমার জীবন।এর মাঝে আমার খুব পরিচিত আর দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের খবর শুনি,যে ওর বরের সাথে ওর ডিভোর্স হয়েছে।খুব অল্পদিনের বিয়ে ছিল ওর।একদিন রাস্তায় হঠাৎ দেখা হয়ে যায় অনেক বছর পরে।ও যখন স্কুলে,কলেজে পড়তো, তখন থেকেই ওর প্রতি আমার একটা ভালোলাগা ছিল।তারপর বিভিন্ন ব্যস্ততায় ওকে আমি একসময় ভুলেই যাই। কিন্তু হঠাৎ দেখা হয়ে যাওয়া তে আবার আগের কথা মনে পড়ে যায়। আমি ওর সাথে আলাপ শুরু করি নতুন করে। ওর ব্যক্তিত্ব, ওর নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখা, ওর রক্ষণশীলতা... সব কিছুতে আমি আবার নতুন করে ওকে নিয়ে ভাবতে শুরু করি।এবং ওকে তা জানাই। কিন্তু ও আমাকে ঠিক বিশ্বাস করতে পারেনা। আর আমার স্ত্রী আছে, বাচ্চা আছে এসব অযুহাত দেখিয়ে ও দূরে সরে যায়। এরপর একটা খুব প্রতিষ্ঠিত ছেলের সাথে ওর বিয়ে হয়ে যায়।

আমিও সব ভুলে আবার নতুন করে আমার স্ত্রীকে আরেকটা সুযোগ দেই। এবং সব ভুলে যাওয়ার জন্যই আমরা এবার প্লান করেই বাচ্চা নেই। আরেকটা মেয়ে হয় আমার। এরপরে শুরু হয় নতুন নাটক,আমার ভাগ্নী-জামাই (ভাগ্নির হাসব্যান্ড, ফ্রান্সে থাকে) এর সাথে আমার খুব ভালো সম্পর্ক। সেই সুত্রেই ওর সাথেও ভালো সম্পর্ক হয়।আর আমার স্ত্রী নতুন করে ভাগ্নি জামাই এর সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে যায়।এর মাঝে ২ বছর কেটে গেছে।

এরপর আমি ওকে ওর বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেই।একাই চলছিল আমার জীবন। হঠাৎ শুনি আমার সেই দূর্সম্পর্কের বোন, ও চলে এসেছে ওর বাবার বাড়ি। একেবারে চলে এসেছে। ওর একটা বাচ্চা হয়েছে। ওর স্বামী একের পর এক অন্য মেয়েদের সাথে অবৈধ সম্পর্কে জড়ানোর কারণে ও চলে এসেছে। আমার খুব কষ্ট হতো ওর জন্য।খুব মায়াও হতো। বিয়ের ২/৩ বছর যেতে না যেতেই ও বাচ্চাসহ চলে এলো! এরপর আমি আমার একাকীত্ব ভুলে থাকতে ওর সাথে আবার আলাপ শুরু করি এবং জানতে পারি ওর ডিভোর্স হয়ে গেছে। তখন আমি ওকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেই। এবং গোপনে আমরা বিয়েও করি। যেহেতু আমার প্রথম স্ত্রী আমাকে অনেক ভয় দেখাতো তাই গোপনে আমি ওকে বিয়ে করি। কিন্তু ওর সাথে কিছু সময় কাটানো ছাড়া ওর দায়িত্ব আমি ঠিকমতো পালন করতে পারিনি। এমনকি ওর বাচ্চাকেও কখনো আমি বাবার আদর দিতে পারিনি। কিন্তু আমাদের মাঝে কথা ছিল আমাদের ৩ টা বাচ্চা। আমরা দুজনই ওদের বাবা আর মা। কিন্তু আমি কিছুই পারিনি।

আমি খুব লজ্জিত আর অনুতপ্ত। ও সব সহ্য করেছে। কিন্তু এর মাঝে হঠাৎ ওর আগের স্বামীর সাথে যোগাযোগ হয়,বাচ্চার কারণে।এবং সে নাকি তার ভুল বুঝতে পেরেছে।তাই সে তার স্ত্রী আর বাচ্চাকে ফিরে পেতে চায়।আর তাই আমার দ্বিতীয় স্ত্রীও ওর আগের স্বামীর কাছেই ফিরে যেতে চায়। তাই ও বলেছে, আমি যেন আমার স্ত্রী কে নিয়ে সংসার করি আর ওকে ডিভোর্স দিয়ে দেই। কিন্তু আমি কিছুতেই এটা মেনে নিতে পারছি না।আমি ওকে খুব ভালবাসি। আমি জানি সেও আমাকে খুব ভালবাসে।কিন্তু সামাজিকতা আর বাচ্চার কথা ভেবে সে ফিরে যেতে চাইছে।কিন্তু আমি ওকে ছেড়ে কীভাবে থাকবো? আমার প্রথম স্ত্রী কেই বা কিভাবে আমি মেনে নেবো? এই জীবনে আমি কি পাপ করেছিলাম? কেন এতো কষ্ট? প্লিজ আমাকে একটু সমাধান দেবেন।

প্রশ্নটি আমাদের ফেসবুক পেজে করেছেন : নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুরুষ

চাইলে আপনিও যেকোনো প্রশ্ন করতে পারেন আমাদের কাছে। আর নিজের নাম গোপন রাখতে চাইলে প্রশ্ন পাঠাতে পারেন পেজের ইনবক্সে, সঙ্গে লিখে দিতে হবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। আমাদের ফেসবুক পেজ দেখতে এখানে ক্লিক করুনআর উত্তর জানতে এখানে ক্লিক করুন

স্বাস্থ্য হোক বা সৌন্দর্য, খেলা হোক বা সিনেমা, দাম্পত্য বা প্রেম, অফিসের সমস্যা কিংবা আইনি, বিজ্ঞান হোক বা রাজনীতি, স্কুল-কলেজ হোক বা সামাজিক ও পারিবারিক কোনো সমস্যা। যে কোনো সমস্যা লিখে জানান আমাদের। আপনার হয়ে সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করবো আমরা। সেই সঙ্গে সুন্দর প্রশ্ন করে প্রতিদিন জিতে নিতে পারেন ৫০ টাকার মোবাইল ফোন ব্যালান্স!

 

আপনার প্রশ্ন, বিশেষজ্ঞের উত্তর।

আপনার জন্যই অপেক্ষায় আছি আমরা।