
ছবি সংগৃহীত
পাঠকের প্রশ্ন: স্বামীর সাথে আর অভিনয় করতে পারছি না...
আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৭, ১৬:৪৭
ছবিটি প্রতীকী, ছবি : সংগৃহীত
পাঠকের প্রশ্ন: আমার বাবার আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না, আপু। তাই আমার মা বিউটি পার্লার দেয়। ঠিক তখন একজন টাকাওয়ালা লোকের সাথে আমার মায়ের সম্পর্ক হয়, তাই আমার বাবাকে ডিভোর্স দেয়। তখন আমি চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ি আর আমার ভাইয়ের চার বছর। তখন থেকে আমার জীবনে বন্ধু কমে যায়, কেউ মিশত না আমার সাথে। আম্মু মাঝে মাঝে আসতো আমার স্কুলে। সেটা আমার বাবা জানলে আমাকে খুব নোংরা ভাষায় গালি-গালাজ করত। একবার আমি বাবাকে না জানিয়ে মায়ের সাথে দেখা করতে যাই সেটা বাবা জানতে পেরে বাসা থেকে বের করে দেয় আর বলে আমার মা একজন খারাপ নারী, আর একটি জারজ সন্তান, পরে আমার চাচি আমাকে বাসায় নিয়ে আসে। তখন আমি ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়তাম। সেদিন মনে হচ্ছিল আমি মরে যাই। কোনো শেয়ার করার মানুষ ছিল না। এভাবে সব সময় অশান্তি লেগেই থাকত।
যখন সপ্তম শ্রেণিতে উঠলাম তখন বাবাকে বিয়ে করতে বলি। বাবা বিয়ে করল। তখন আরেক অশান্তি শুরু হলো, সৎমায়ের। আমার দাদি আমাকে বলে যে আমার মা আমাকে রেখে গিয়েছে অশান্তি করার জন্য, আমার জন্য পরিবারে সব অশান্তি। আমি ঠিক করলাম আম্মুর কাছে চলে যাব, আম্মু সব সময় আমাকে ডাকত। কিন্তু আমি বাবাকে ছেড়ে যেতে পারতাম না। অবশেষ আম্মুর কাছে চলে গেলাম।
এ সময় এক ছেলের সাথে সম্পর্ক হয়। তারপর ভালোই যায় দুটি বছর। ও আমার প্রথম ভালোবাসা ছিল। ওর সাথে আমার শারীরিক সম্পর্ক ছাড়া সব হয়। আমি যখন নবম শ্রেণিতে উঠলাম। তখন ঢাকা পড়তে যায়, তারপর আমার সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দেয়। আমি আবার খুব একা হয়ে পড়ি। তারমধ্যে আমার সৎবাবা প্রায় রাতে মদ খেয়ে এসে আমার মাকে মারধোর করত, এসময় আবার আমার আর একটি ছেলের সাথে পরিচয় হয়, তারপর আবার ভালোবাসার সম্পর্ক হয়, কিন্তু বাসার সবাই জানতে পারে এবং সেটা মেনে নেয় না। আমার পরিবারের সবাই ওকে অনেক অপমান করে। ও তখন থেকে আমার পরিবারের লোকজন অপছন্দ করে, আমাকে নানা রকম কথা বলত পরিবার নিয়ে। আমাকে খুব সন্দেহ করত। আমারও আর ভালো লাগত না মা-বাবা কারও সাথে থাকতে। তাই চিন্তা করলাম বিয়ে করব। বিয়ে করলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
ওকে বিয়ের কথা বললাম ও রাজি হয়। তাই মাত্র চার মাসের সম্পর্কে বিয়ে করি। শুরুতে ও ওর বাসায় থাকত, আমি আমার বাসায়। আমার মাধ্যমিক শেষ হলে বাসায় জানাব, কিন্তু যখন দশম শ্রেণিতে উঠলাম তখন আমি প্রেগন্যান্ট হই, বাসা থেকে বিয়েও ঠিক করে। বাসায় জানলে কেউ মেনে নেবে না, তাই আমি পালিয়ে যাই। শুরুতে আমার বাবা আমাকে মেনে নেয়, পরে প্রেগন্যান্ট শুনে মাও মেনে নেয়। সবই ঠিক ছিল কিন্তু আমার বর তখনও আমাকে সন্দেহ করত। আমার মা-বাবাকে নিয়ে খোটা দিত, মেনে নিতে পারতাম না। আমি সবসময় বাবা-মায়ের ডিভোর্স নিয়ে মানসিকভাবে চিন্তায় থাকি আর ঐ ব্যাপার নিয়ে আমাকে কথা শোনায়-আমার মা খারাপ মহিলা। ওর ব্যবসার জন্য আমার মায়ের কাছ থেকে টাকা নেয়, কিন্তু কোন লাভ হয় না। সেজন্য ও আমাকে বলে আমার মায়ের পাপের টাকা তাই উন্নতি হয়নি। আমার বিয়ের এখন সাত বছর হচ্ছে, আর আমার একটি পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে আছে, এখন পর্যন্ত ও আমাকে বাবা-মাকে নিয়ে খোটা দেয় এবং বলে যে আমার বাবা-মা ওকে কী দিয়েছে? অমুকের শ্বশুরবাড়ি থেকে এটা-সেটা দিয়েছে, আরো অনেক কথা। আগে আমি উত্তর দিতাম। এখন আর ভালো লাগে না। কয়েকদিন আগে আমার ফুপাতো ভাইকে নিয়ে সন্দেহ করে নোংরা কথা বলে। যার মায়ের আমি দুধ পান করেছি, যাকে আমি ভাই হিসেবে মানি, তাকে আমাকে বিয়ে করতে বলে, আমার গায়ে হাত তোলে। আগেও একটু তর্ক করলে গায়ে হাত তুলত। কিন্তু মেয়েটা বড় হবার পর কমেছে। ও আমাকে মারধোর করার পর এমন করে যেন কিছুই হয়নি। আমাকে জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চায়। কিন্তু বার বার ওর এই আচরণে ওর ওপর কোনো অনুভূতি নেই, শুধু বাচ্চার জন্য আছি। আর ফিরে যাওয়ারও কোন পথ নেই। আমি চাই না আমার মেয়ে আমার মতো একটি জীবন পাক।
আপু, এ অবস্থায় আমার এক বন্ধুর বন্ধুর সাথে পরিচয় হয়। অনেক দিন পর ফেসবুকে দেখি ওর রিকোয়েস্ট। আমি অপরিচিত কারো রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করি না। কিন্তু ও পরিচিত ছিল এবং আমার স্বামীরও পরিচিত ছিল তাই একসেপ্ট করি। প্রথমে বন্ধুর মতো কথা হতো। ও বিবাহিত ছিল। পরে জানতে পারি সুখী না, ও আমাকে ভালোবাসে। আমি ওকে বোঝাই। ও বলে শুধু বন্ধুত্ব। আমারও ওর সাথে সময় কাটাতে ভালো লাগত। হঠাৎ একদিন ওর সাথে আমার শারীরিক সম্পর্ক হয়, পরে দুজনই নিজেদের ভুল বুঝতে পারি। চার মাস হয়ে যাচ্ছে ওর আমার এই সম্পর্কের। মাঝে মধ্যে ও আমার সাথে যোগযোগ করে। প্রথম প্রথম মেনে নিতে পারতাম। এখন অনেকটা সামলে নিয়েছে। এদিকে ফেসবুকে ওর অনেক মেয়ে বন্ধু। আমি ওর সাথে একবারে সম্পর্ক শেষ করতে চাই কিন্তু পারি না। আবার স্বামীর সাথে অভিনয় আর করতে পারছি না, স্বামীর সাথে শারীরিক সম্পর্কে মানসিকভাবে আনন্দ পাচ্ছি না। বাবা-মায়ের ডিভোর্সের কারণে জীবনে অনেক খুব ছোট বয়স থেকে অনেক কথা, সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে, যা এখন ও ভুলতে পারি না।
আরেকটি কথা, ছোট বেলায় দুবার যৌন হয়রানির শিকার হই। বাসার পাশের একলোক আমার বুকে হাত দেয়া, যা এখনও কাউকে বলতে পারি না। নিজেকে খুব একা লাগে, কারো সাথে শেয়ার করতে পারি না। সব সময় সুখে থাকার অভিনয় করতে করতে আমি ক্লান্ত। আমার কিছু ভালো লাগে না, সবসময় হতাশায় থাকি। এত হতাশা আমি আর নিতে পারছি না, শুধু মেয়ের জন্য সব সহ্য করে যাচ্ছি। কিন্তু আর নিতে পারছি না, আমি এখন কী করব? নতুন প্রেমিকের সাথে সম্পর্ক রাখা ঠিক হবে? কীভাবে ভালো থাকব আমি সব ভুলে?
প্রশ্নটি আমাদের ফেসবুক পেজে করেছেন : নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন।
চাইলে আপনিও যেকোনো প্রশ্ন করতে পারেন আমাদের কাছে। আর নিজের নাম গোপন রাখতে চাইলে প্রশ্ন পাঠাতে পারেন পেজের ইনবক্সে, সঙ্গে লিখে দিতে হবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। আমাদের ফেসবুক পেজ দেখতে এখানে ক্লিক করুন। আর উত্তর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
স্বাস্থ্য হোক বা সৌন্দর্য, খেলা হোক বা সিনেমা, দাম্পত্য বা প্রেম, অফিসের সমস্যা কিংবা আইনি, বিজ্ঞান হোক বা রাজনীতি, স্কুল-কলেজ হোক বা সামাজিক ও পারিবারিক কোনো সমস্যা। যে কোনো সমস্যা লিখে জানান আমাদের। আপনার হয়ে সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করবো আমরা। সেই সঙ্গে সুন্দর প্রশ্ন করে প্রতিদিন জিতে নিতে পারেন ৫০ টাকার মোবাইল ফোন ব্যালান্স!
আপনার প্রশ্ন, বিশেষজ্ঞের উত্তর।
আপনার জন্যই অপেক্ষায় আছি আমরা।
- ট্যাগ:
- প্রশ্ন-উত্তর
- সম্পর্ক