ছবি সংগৃহীত

প্রিয় সারভাইভাল টিপস: জরুরী অবস্থায় পানি বিশুদ্ধকরণ (ফিল্টারিং) (পর্ব ৩)

খন্দকার ইশতিয়াক মাহমুদ
লেখক
প্রকাশিত: ৩০ এপ্রিল ২০১৭, ১১:২৪
আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৭, ১১:২৪

কয়লা ধুলে হয়ত ময়লা যায় না, কিন্তু কয়লা দিয়ে পানি বিশুদ্ধ ঠিকই করা যায়! ছবি: সংগৃহীত।
 
(প্রিয়.কম): প্রাকৃতিক বিভিন্ন উৎসের পানি অনেক সময় যথেষ্ট বিশুদ্ধ থাকে। যেমন ঝর্ণার পানি বা চলমান নদী ইত্যাদি। এসব ক্ষেত্রে অনেক সময় স্রেফ পানি ছেঁকে নিয়ে কাদা-মাটি আর পানি আলাদা করে নেয়াই যথেষ্ট পানি পান করা এবং অন্যান্য কাজের জন্য।
 
ফিল্টার শব্দটি আমরা আজকাল সবাই শুনে থাকি। টিভি খুললেই বিভিন্ন কোম্পানির ওয়াটার ফিল্টার এর বিজ্ঞাপন দেখা যায়, তাতে জানা যায় যে এসব ফিল্টার আসলে কত ভাল আর কত নিরাপদ। তাদের ফিল্টার তাদের দাবির সাথে মানানসই-ভাবে কতটা নিরাপদ সেটা প্রশ্ন-সাপেক্ষ, তবে তারা যে একটা বিষয়ে ভূল উপস্থাপন করে অনেক সময় সেটা মানতেই হবে। সেটা হল ফিল্টার শব্দটার ব্যবহার।
 
ফিল্টার মানে পানিতে মিশে থাকা ময়লা-বালি-কাদা মুক্ত করার একটা ব্যবস্থা, সোজা বাংলায় বললে বলা যায় ছেঁকে নেয়া। ছেঁকে নিলে পানিতে থাকা কেমিক্যাল কিংবা ক্ষতিকারক অণুজীব কোনটাই চলে যায় না। পানি থেকে কেমিক্যাল এবং ক্ষতিকারক অণুজীব মুক্ত করতে হলে যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয় তার নাম হল ওয়াটার পিউরিফিকেশন বা পানি বিশুদ্ধিকরণ।
 
সে যাই হোক, আজ আমরা পানি ফিল্টার করার বেশ কিছু পদ্ধতি সম্পর্কে জানব।
 
কাপড়ের ফিল্টারে পানি থেকে ময়লা দূর করা যায়। ছবি: সংগৃহীত।
 
কাপড়ের ফিল্টার: খুব প্রাথমিক এবং মোটামুটি কাজের একটি উপায় হল কাপড় ব্যবহার করে পানি ফিল্টার করা। কোন রকম বাড়তি ঝামেলা না করে ঝটপট কয়েক মিনিটের প্রস্তুতিতেই কাজটা করা সম্ভব। কাপড় ভারী হলে সেটাতে ফিল্টারে গতি কম হবে, কিন্তু আবার ফিল্টার ভালভাবে হবে। পাতলা হলে পানি তাড়াতাড়ি পার হয়ে যাবে, কিন্তু কিছু ময়লা সাথে চলে যেতে পারে। টি শার্ট, গামছা ইত্যাদি দিয়ে এক বা দুই স্তর বিশিষ্ট ফিল্টার বানানো যেতে পারে যেগুলো বালি, বড় ময়লার টুকরা সহজেই আটকাবে, কিন্তু কাদার সুক্ষ্ন কণা আটকাতে নাও পারতে পারে। আবার জিনস বা এরকম ভারী কাপড় দিয়ে যে ফিল্টার বানাবেন, তাতে কাদার সুক্ষ্ন কণা সহজেই আটকাবে, পানি অনেকখানিই পরিষ্কার পাবেন।
 
বালি এবং পাথর দিয়েও ফিল্টারের কাজ চালানো সম্ভব। ছবি: সংগৃহীত।
 
বালির ফিল্টার: আপনার হাতে যদি সময় থাকে এবং আপনি নিরাপদ পানির বিষয়ে আরও বেশি নিশ্চিত হতে চান, তাহলে এই ফিল্টার টা চেষ্টা করে দেখতে পারেন। ছোট এবং বড় দানার বালি বা ছোট পাথর ব্যবহার করে খুব সহজেই পানি থেকে অন্যান্য জিনিস আলাদা করে ফেলা যায়। তবে বালি জিনিসটাকে ঠিকঠাক ভাবে সামাল দেয়া বেশ কঠিন। তাই দরকার হবে কোন একটা কাঠামো যেটা এই বালিকে জায়গা মত ধরে রাখবে এবং পানি এর মধ্য দিয়ে পার হয়ে যাবে। আপনি এক দেড় লিটার পানির বোতল ব্যবহার করতে পারেন এ কাজে। তবে জরুরী অবস্থায় যদি সেটাও না পান, অবাক হবেন জেনে, প্যান্টের পায়ের অংশ ব্যবহার করতে পারবেন এ কাজে! শুধু বেশ ভালভাবে জিনিসটা ধুয়ে নিতে হবে, যেন এটা থেকে পানিতে কোন কিছু মিশে না যায়। পানির বোতল হোক, আর প্যান্টের পা-ই হোক, এখন বাকি আছে বেশ কিছু কাজ। পানির প্লাস্টিক বোতল হলে তলায় ছিদ্র করুন। ছোট এক টুকরা কাপড় তলায় দিন। এবারে নিচে এক স্তর সুক্ষ্ন দানার বালি দিন, তার উপরে এক স্তর মোটা দানার বালি দিন, এবারে পানি সংগ্রহ করে তাতে দিয়ে দিন। একটু পরে নিচ দিয়ে তুলনামূলক পরিষ্কার পানি পড়তে শুরু করবে।
 
প্যান্টের পা ব্যবহার করলে আগে নিচের অংশটা বেঁধে নিন কোন দড়ি দিয়ে অথবা স্রেফ কাপড়টাতেই শক্ত করে নট বা গিট বেঁধে নিন। এবারে আগের মত কয়েক স্তরে বালি দিয়ে দিন।
 
প্লাস্টিকের বোতল, বালি, কাঠ কয়লা আর এক টুকরো কাপড় দিয়ে বানিয়ে নিতে পারেন ফিল্টার। ছবি: সংগৃহীত।
 
কাঠ-কয়লা: কাঠ কয়লা পানি ফিল্টার এবং বিশুদ্ধ করার কাজে হাজার বছর ধরে ব্যবহার হচ্ছে। কাঠ কয়লায় যে পোড়া কার্বন থাকে, সেগুলো পানি থেকে জৈব এবং অজৈব কণা আটকে ফেলে। আজকালকার অনেক আধুনিক ফিল্টারে এই জিনিসই আর একটু আধুনিক ভাবে ব্যবহার হয় এ্যাকটিভেটেড চারকোল বা এ্যাকটিভেটেড কার্বন নামে।
 
আপনার ক্যাম্প-ফায়ার থেকে কাঠ কয়লা সংগ্রহ করুন। এবারে সেগুলো কোনভাবে গুড়ো করে পাউডার বা ছোট ছোট টুকরা করে নেবার ব্যবস্থা করুন। চাইলে সরাসরি পানির সাথে মিশিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে সেটা উপরের কোন উপায়ে ফিল্টার করে নিতে পারেন। অথবা চাইলে ফিল্টারের মাঝেই বালির স্তরের মাঝে কাঠ কয়লার একটা স্তর তৈরি করতে পারেন। সেক্ষেত্রে বেশি নিরাপত্তা চাইলে বালি > কাঠ কয়লা > বালি > কাঠ কয়লা > বালি এভাবে কয়েক স্তরে করে নিতে পারেন।
 
ফিল্টারের বালি পানি থেকে মাটি-কাদা-অন্যান্য বড় আকারের জিনিস সরিয়ে নেবে, অন্যদিকে কাঠকয়লা পানির সুক্ষ্ন জৈব-অজৈব কণা আটকে দিতে পারবে। পানিতে গন্ধ থাকলেও সেটা দূর করতে সহায়তা করবে কাঠ কয়লা।
 
অবশ্যই এই পদ্ধতি ১০০ ভাগ সুরক্ষার নিশ্চয়তা দেয় না। তবে একদম প্রকৃতিতে পাওয়া জিনিস দিয়ে কোন রকম জ্বালানি খরচ না করে এর চেয়ে বেশি কিছু আশা করা যায় না। তবে ঝিরি বা ঝর্ণার পানি সাধারণত মাটির নিচ থেকে আসে, তাই আপনি উৎসের কাছাকাছি থেকে সংগ্রহ করতে পারলে প্রায় বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করতে পারবেন। ঝর্ণা বা ঝিরির পানি যত গড়িয়ে যাবে, পানির সাথে ময়লা বা অন্য কিছু মিশে যাবার আশঙ্কা তত বেশি থাকবে।
 
আগামী পর্বগুলোতে আমরা পানির সুরক্ষার জন্য আরও কার্যকরী পদ্ধতি গুলো নিয়ে আলোচনা করব।
 
 
সম্পাদনা: ড. জিনিয়া রহমান।
আপনাদের মতামত জানাতে ই-মেইল করতে পারেন [email protected] এই ঠিকানায়।