ছবি সংগৃহীত

বনানী থানার অবহেলা তদন্তে ক‌মি‌টি

প্রিয় ডেস্ক
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশিত: ১২ মে ২০১৭, ১৪:০২
আপডেট: ১২ মে ২০১৭, ১৪:০২

বনানী থানা। ফাইল ছবি

(প্রিয়.কম) রাজধানীর বনানীতে একটি হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা নি‌তে ও তদ‌ন্তে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিএম ফরমান আলীসহ থানার অন্য কর্মকর্তাদের কোনো অবহেলা আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে পুলিশের উচ্চ পর্যায়ে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

১২ মে শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম-কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণপদ রায় এ তথ্য জানিয়েছেন।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) মো. মিজানুর রহমানকে প্রধান করে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণপদ রায়, যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) আব্দুল বাতেন।

কৃষ্ণপদ রায় বলেন, ‘মামলা নিতে বিলম্ব, আর্থিক লেনদেনসহ থানার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ উঠেছে তা খতিয়ে দেখতে ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশক্রমে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। থানার কর্মকর্তাদের আসলেই কোনো দায় আছে কিনা এই বিভ্রান্তি নিরসনে কমিটি কাজ করবে।’

এর আ‌গে বনানীর দ্য রেইন ট্রি হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টে দুই তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনায় বনানী থানায় মামলা না নিতে চাওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের হয়রানির অভিযোগ করেছেন বাদীপক্ষ। এর পর পরই আলোচিত ওসি ফরমান আলী ৯ মে থেকে ‘একান্ত পারিবারিক’ কারণ দেখিয়ে ৫ দিনের ছুটিতে যান।

ধর্ষণের শিকার দুই তরুণীর একজন অভিযোগ করেছেন, ‘৪ মে ধর্ষণের মামলা করতে গিয়ে মনে হচ্ছিল আরও কয়েকবার ধর্ষিত হচ্ছি। পুলিশ বারবার একই ঘটনা (ধর্ষণের) শুনতে চাইছিল। অনেকবার শোনার পরে একপর্যায়ে বললেন, ‘এ সব কথা লিখতে হবে।’ আমরা স্টেটমেন্ট লিখলাম। এরপরে বললেন, আপনারা আজ চলে যান, আমরা তদন্ত করব, যদি দেখি ওরা অপরাধী তাহলে আমরা মামলা নেব।’

ওই তরুণী আরও বলেছেন, ‘পরদিন (৫ মে) ডেকে আবার একই ঘটনা আবারও জিজ্ঞেস করেছে পুলিশ। বলেছে, এটা এটা আপনারা বলেন নাই, আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি। তখন আমরা বলছি, আমরা কোনো জিনিস বাদ দেই নাই। পরদিন (৬ মে) রাতে আমাদের ডাকা হলো, মামলার কপি দেওয়ার জন্য। যাওয়ার পরে পুলিশ আমাদের আটকে দেন। আমাদের বলা হলো- ছবি তুলতে হবে। আমরা তো ব্যাপারটা ভয় পাই- ছবি তুলব, আবার কী হয় না হয়। তখন ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে ফোন করে বিষয়টি জানাই। ছবি তুলতে না চাওয়ায় কয়েকজন মহিলা পুলিশ বাজে ব্যবহার করেন। নিয়ম না থাকলেও সেদিন রাতে আমাদেরকে থানায় থাকার কথা বলে। পরে অবশ্য আমাদের থানায় না রেখে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।’

অভিযুক্তরা প্রভাবশালী শোনার পরই বনানী থানা পুলিশ বিষয়টি নিয়ে গড়িমসি শুরু করে বলে অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি বনানী থানা পুলিশ আসামি পক্ষের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

প্রসঙ্গত, মামলার প্রধান আসামি সাফাত আহমেদ আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে এবং সাদমান সাকিফ রেগনাম গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মদ হোসেন জনির ছেলে। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- নাঈম আশরাফ (৩০), সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল (২৬) ও দেহরক্ষী আবুল কালাম আজাদ।

১১ মে বৃহস্পতিবার রাতে সিলেটের পাঠানটুলা এলাকার শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) পাশের একটি দোতলা বাড়ি থেকে সাফাত ও সাদমানকে গ্রেফতার করা হয়। ঢাকা থেকে পুলিশ সদর দফতরের বিশেষ একটি টিম সিলেটের স্থানীয় পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে গ্রেফতার অভিযান চালায়।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২৮ মার্চ পূর্বপরিচিত সাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফ ওই দুই তরুণীকে জন্মদিনের দাওয়াত দেয়। এরপর তাদের বনানীর কে-ব্লকের ২৭ নম্বর সড়কের ৪৯ নম্বরে রেইনট্রি নামের হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। এজাহারে আরও অভিযোগ করা হয়েছে, সেখানে দুই তরুণীকে হোটেলের একটি কক্ষে আটকে রেখে মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে ধর্ষণ করে সাফাত ও নাঈম। এ ঘটনা সাফাতের গাড়িচালক বিল্লালকে দিয়ে ভিডিও করানো হয় বলেও উল্লেখ করা হয় এজাহারে।

প্রিয় সংবাদ/খোরশেদ/রিমন