ছবি: সংগৃহীত

ছাঁটাই হওয়া কর্মীর অভিযোগ নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন সম্পর্কে ব্র্যাকের বক্তব্য

প্রিয় ডেস্ক
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশিত: ০২ জুলাই ২০১৭, ১৭:১০
আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৭, ১৭:১০

(প্রিয়.কম) ছাঁটাই হওয়া কর্মীর অভিযোগ নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন সম্পর্কে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে উন্নয়ন সংস্থা ‘ব্র্যাক’। ১ জুলাই শনিবার জনপ্রিয় অনলাইন পোর্টাল প্রিয়.কম-এ ‘ব্র্যাকের বিরুদ্ধে ছাঁটাই হওয়া কর্মীর চাঞ্চল্যকর অভিযোগ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এই প্রতিবেদনের প্রেক্ষাপটে ২ জুলাই রোববার এক ই-মেইল বার্তায় ব্র্যাক দাবি করে, নিয়ম মেনেই ওই কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়েছে। তবে ছাঁটাই হওয়া ওই কর্মীর অভিযোগ, বিনা কারণে অন্যায়ভাবে ত্যাগী কর্মীদের ছাঁটাই করছে ব্র্যাক।

ব্র্যাকের সিনিয়র মিডিয়া ম্যানেজার মাহবুবুল আলম কবীর সাক্ষরিত এক ই-মেইল বার্তায় বলা হয়, ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক। গত ১ জুলাই প্রতিষ্ঠানটির একজন সাবেক কর্মী তার ফেসবুক প্রোফাইলে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে এই সংস্থার বিরুদ্ধে কিছু মন্তব্য করেছেন। সেই রাতেই প্রিয়.কম তা সংবাদ আকারে প্রকাশ করেছে। স্ট্যাটাসে সাবেক ওই কর্মী অভিযোগ করেন, তাকে অন্যায়ভাবে ব্র্যাক থেকে অবসর দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও তিনি ব্র্যাকের ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ, সামাজিক উদ্যোগ ও আয়ব্যয়ের হিসেব নিয়ে কিছু মনগড়া মন্তব্য করেছেন।’

‘এ বিষয়ে ব্র্যাকের বক্তব্য হচ্ছে- যেকোনো বড় প্রতিষ্ঠানে কর্মী দক্ষতা, সাংগঠনিক পুনর্বিন্যাস, অর্থনৈতিক পূর্বাভাস ইত্যাদি কারণে কর্মী নিয়োগ/পদোন্নতি/বদলি/ছাঁটাই/অবসরে পাঠানো একটি নিয়মিত ও স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে কর্মী ছাঁটাই কখনোই কাম্য নয়। এ কারণে আমরা সবসময় চেষ্টা করি যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মীর দক্ষতা বৃদ্ধি করে কর্মীকে সংগঠনের সাথে রাখতে। তবে যোগ্যতার ঘাটতিসহ নানা কারণেই সবসময় তা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে প্রচলিত আইন ও প্রতিষ্ঠানের সব নীতিমালা মেনেই কর্মীদের দেনা-পাওনা মিটিয়ে দেওয়া হয়,’ বলা হয় ই-মেইলে।

ব্র্যাক প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিটি ক্ষেত্রেই নীতিমালা মেনে ছাঁটাই করা হয়ে দাবি করে ব্র্যাক আরও বলা হয়, ‘আলোচ্য কর্মীর ক্ষেত্রেও তার অতিরিক্ত তিন মাসের বেতনসহ যাবতীয় গ্রাচুইটি এবং প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা দ্রুত দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপরেও যদি কোনো কর্মী মনে করেন তার প্রতি অন্যায় করা হয়েছে, তবে তিনি ব্র্যাকের সম্পূর্ণ স্বাধীন ন্যায়পাল বরাবর পুনর্বিবেচনার আবেদন করতে পারেন।’

এই প্রতিষ্ঠানটি মনে করে, ‘ব্র্যাক তার আয়-ব্যয় এবং চলমান কর্মসূচির বিষয়ে বরাবরই স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতায় বিশ্বাস করে। সরকারের সমস্ত নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের কাছে নিয়মিত রিপোর্টিং ছাড়াও জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের খ্যাতনামা অডিট ফার্মকে দিয়ে এর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হয়। প্রতিবছর বার্ষিক প্রতিবেদনে এই সংক্রান্ত তথ্যাবলী প্রকাশ করা হয়। পরে তা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে গণমাধ্যম এবং সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং সংসদ সদস্যদের কাছেও বিতরণ করা হয়। আর এই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতাই ব্র্যাকের বিশ্বসেরা উন্নয়ন সংস্থার স্বীকৃতি পাওয়ার অন্যতম কারণ।’

ব্যাখ্যায় বলা হয়, ‘ব্র্যাক তার সামাজিক উদ্যোগের বিভিন্ন পণ্যের গুণগত মান রক্ষায়ও সব সময় সচেষ্ট। বছরের পর বছর আমাদের পণ্যের ওপর ক্রেতাদের আস্থা এর বড় প্রমাণ। এর পরেও কারও কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা তা গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখতে প্রস্তুত। কারণ আমরা দেশ এবং জনগণের প্রতি শতভাগ প্রতিশ্রুুতিবদ্ধ। সেই প্রতিশ্রুতি থেকেই ১৯৭২ থেকে বর্তমান পর্যন্ত সংস্থাটি বিভিন্ন আর্থসামাজিক কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।’

উল্লেখ্য, ২৫ বছর ধরে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন দাবি করে শরীফ তসলিম রেজা নামের একজন কর্মী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অভিযোগ করেন, বিনা কারণে অন্যায়ভাবে ত্যাগী কর্মীদের ছাঁটাই করছে ব্র্যাক। তারই ধারাবাহিকতায় তাকেও ছাঁটাই করা হয়েছে।

ব্র্যাকের মতো এত বড় সংস্থাটি আত্মীয়করণ করার ফলেই ছাঁটাই প্রক্রিয়া চলছে বলেও অভিযোগ করেন। তিনি তার স্ট্যাটাসে জানান, ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ফজলে হাসান আবেদের চতুর্থ স্ত্রীর ভাইয়ের মেয়ে নিযুক্ত হওয়ার পরপরই এই সমস্যা হতে থাকে। প্রায় দুইশ’র মতো কর্মীকে ছাঁটাইয়ের চিঠি ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন শরীফ।

এই বয়সে কেন তিনি চাকরির জন্য ঘুরে বেড়াবেন? লাভবান সংস্থা ব্র্যাকের তো বেতন দেওয়ার জন্য টাকার অভাব নেই জানিয়ে তিনি লিখেন, ‘ব্র্যাকের বছরের বাজেট ৪৫০০ কোটি টাকা, উদ্বৃত্ত থাকে ১৩০০ কোটি টাকা ( ২০১৫ সালের বার্ষিক রিপোর্ট), সুদের ব্যবসায় লাভ গত বছর ২০০০ কোটি টাকা, এর থেকে কর্মীদের বেতন দেওয়া লাগে মাত্র ১০-১২ কোটি টাকা, কীসের অভাব ব্র্যাকের? সকলকে অনুরোধ আমরা এই বয়সে চাকরির জন্য কেন ঘুরব?’

কর ফাঁকি দেওয়াসহ ব্র্যাকের বিভিন্ন পণ্যের ও কার্যক্রমে অনিয়ম ও প্রতারণার অভিযোগও তুলেন তিনি।

প্রতিবেদনটি বিস্তারিত পড়তে এখানে ক্লিক করুন

প্রিয় সংবাদ/খোরশেদ/রিমন